দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯নভেম্বর: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রিভিউয়ের আগে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা৷ রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশির মুনির এসব কথা বলেন৷ সংবাদ সম্মেলনে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷
সংবাদ সম্মেলনে কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা বলেন, আমরা মনে করি রিভিউ আবেদনে কামারুজ্জামান ন্যায়বিচার পাবেন৷ তাই আমরা অবশ্যই রিভিউ করবো এবং তারপর পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাববো৷তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী ৭ দিনের ব্যাখ্যা থেকে সরে আসবেন৷প্রসঙ্গত, গত সোমবার মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের দেয়া মৃতু্যদন্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ফাঁসি কার্যকর এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে মন্তব্য করেন মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো. মুনির৷ জেলকোডের ৯৯১ বিধি নিয়ে আইনমন্ত্রী অপব্যাখ্যা দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি৷
কামারুজ্জামানের আইনজীবী বলেন, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি যে, আইনমন্ত্রী জেলকোডের ৯৯১ উল্লেখ করে কামারুজ্জামানের রায় শোনার দিন থেকে সাত দিন সময়সীমার মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে মর্মে বলেছেন৷ মন্ত্রীর এ বক্তব্য অনুযায়ী আজ রোববারই সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে৷
আসামিপক্ষের মতে, আইনমন্ত্রী একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হয়েও জেলকোডের ৯৯১ বিধির অপব্যাখ্যা করেছেন৷ বস্তুত রায় শোনার দিন থেকে সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা চাওয়ার বিধান এ ধারায় উল্লেখ নেই৷ মৃতু্য পরোয়ানা গ্রহণ করার পর থেকে নতুন জেলকোড অনুযায়ী ১৫ দিন এবং পুরোনো জেলকোড অনুসারে সাত দিনের বিধান রয়েছে৷
শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগ থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ হয়নি৷ তাই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী যে সময়সীমার কথা উল্লেখ করেছেন তা বিভ্রান্তিকর ও বেআইনি৷তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী একজন রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন৷ এটা রাষ্ট্রের সমন্বয়হীনতার বহিঃপ্রকাশ৷শিশির মনির বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা হবে৷
গত বছরের ৯ মে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২৷ ট্রাইবু্যনালের দেওয়া ওই মৃতু্যদণ্ডের সাজা বহাল রেখে ৩ নভেম্বর রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷শিশির মনির আরও বলেন, ৬ নভেম্বর কামারুজ্জামান জানিয়েছেন, রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তিনি পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন৷ রিভিউ নিষ্পত্তির পর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না৷ রিভিউ নিষ্পত্তির আগে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো পদক্ষেপ তিনি নেবেন না৷
এদিকে, আপিল বিভাগের রায় পেলেই ট্রাইবু্যনাল ফাঁসির আসামি মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃতু্য পরোয়ানা জারি করবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম৷তবে সর্বোচ্চ আদালত রায়ের সংক্ষিপ্ত না পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ট্রাইবু্যনালে পাঠাবে- তা আপিল বিভাগের ওপরই নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি রোববার নিজের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ট্রাইবু্যনালের রায় বহাল রয়েছে, নাকি রদবদল হয়েছে- সেটা আপিল আদালতের রায় পৌঁছালে ট্রাইব্যুনাল জানতে পারবে৷ আমি আগে বলেছি, একটা সংক্ষিপ্ত অর্ডারেই চলবে৷
এখন আপিল বিভাগ যদি মনে করেন, তারা শর্ট অর্ডার পাঠাবেন না, পূর্ণ আদেশই পাঠাবেন৷ তাহলে সেটা তাদের বিষয়৷একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় ট্রাইবু্যনালের দেওয়া মৃতু্যদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের আপিলে গত ৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷এর এক দিন বাদে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যেহেতু আপিল বিভাগ ট্রাইবু্যনালের সাজাই বহাল রেখেছে, সেহেতু দণ্ড কার্যকরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই৷এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে একই মত প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন৷
আসামিপক্ষ মন্ত্রীর বক্তব্যকে এখতিয়ারবহির্ভূত আখ্যায়িত করে বলেছে, তারা রায় পর্যালোচনার আবেদন করবেন এবং এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা ভাবছেন না৷দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে অস্পষ্টতা তৈরি হওয়ায় যে কোনো সময় কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর হয়ে যেতে পারে বলে গুঞ্জন তৈরি হয়৷ ফলে সাংবাদিকরাও বার বা একই প্রশ্ন নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সামনে যেতে থাকেন৷