দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯নভেম্বর: তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ রোববার দুপুরে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আফজাল হোসেন অভিযোগটি দায়ের করেন৷মামলাটি আমলে নেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৩ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন যশোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু ইব্রাহিম৷
বাদীপক্ষের আইনজীবী গাজী আবদুল কাদের বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ৫ নভেম্বর লন্ডনে এক আলোচনা সভায় তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আইনের লঙ্ঘন৷এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এ কারণে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এর সুবিচার দাবি করেছেন বাদী৷আদালত সূত্র জানায়, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হতে হলে সরকারের অনুমতি লাগে৷ সরকারের অনুমতি না থাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি৷ মামলাটি আমলে নেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৩ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন আদালত৷
রোববার বেলা ১১টায় বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে তিনি ১২৪ (ক) দণ্ডবিধিতে এ মামলাটি করেন৷ মামলাটি শুনানির জন্য ১৩ নভেম্বর দিনধার্য করা হয়েছে৷মামলার বিবরণে বলা হয়েছে,৫ নভেম্বর যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় তারেক জিয়া বলেন, মুজিব একজন পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন৷একজন পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন, সেইজন্য শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত্৷
ওই আলোচনা সভায় তারেক জিয়া আরও বলেন, তার বাবা জিয়াউর রহমান শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কিংবা প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন৷ তার এ বক্তব্য ওইদিন দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টালগুলো প্রকাশ করে৷ পরদিন প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশ করা হয়৷
তারেক জিয়ার এ বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ হয়ে যশোর আদালতে মামলা করেছেন যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার মৃত এসএম গফুরের ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন৷ তিনি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১২৪(ক)দণ্ডধিতে এ মামলা করেছেন৷মামলা শেষে তিনি বলেন, তারেক জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল৷ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি থাকলেও তারেক জিয়া অস্বীকার করেছেন৷ শুধু তাই নয়, তিনি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন৷
বাদীর আইনজীবী গাজী আবদুল কাদির বলেন, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়েছে৷ বিজ্ঞ আদালত ১৩ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন৷ এ মামলায় আবদুল খালেক, অ্যাডভোকেট. মোহাম্মদ আলী রায়হান, মাহাবুর রহমান সরকার, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ও মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন এ ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে৷ তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা৷ তবে এতে তাদের দলীয় পদ উল্লেখ করা হয়নি৷
এদিকে, বাদী এসএম আফজাল হোসেন আদালতে মামলার সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে ভিড় করেন৷ বাইরে কেউ কেউ স্লোগানও দেয়৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী রায়হান, দপ্তর সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালেক,তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আসিফ-উদ- দ্দৌলা সরদার অলোক প্রমুখ৷
এদিকে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলে উকিল নোটিস দিয়েছেন এক আইনজীবী৷সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা মোমতাজ উদ্দিন মেহেদীর এই নোটিস রোববার রেজিস্ট্রি ডাকে তারেক রহমানের গুলশানের ঠিকানায় পাঠানো হয়৷এতে বলা হয়, আপনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি,হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্র্রোহী ও পাকবন্ধু বলে এবং পাকিস্তানের নাগরিক আখ্যা দিয়ে অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন৷ এই অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল৷
ওই বক্তব্যের জন্য সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে তারেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার কথাও বলেছেন মোমতাজ৷বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারমান গত বুধবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি পাসপোর্টে’ দেশে ফিরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং এ কারণে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত্৷মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী তার পাঠানো নোটিসে বলেছেন,বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন না করলে তারেকের বাবা জিয়াউর রহমান মেজর জেনারেল হতে পারতেন না৷
ওই বক্তব্য দিয়ে আপনি নিজেকে একজন অপরিপক্ক ও ইঁচড়েপাকা ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারমান হওয়া সত্ত্বেও আপনার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন৷ তার বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজন দুর্নীতির মামলা হয়৷সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিকিত্সার জন্য যুক্তরাজ্য যান তিনি৷ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তখন থেকে সেখানেই রয়েছেন তারেক৷