PM

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯নভেম্বর: দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে দেশের মধ্যেই বাজার সমপ্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ রোববার বেলা ১১টার দিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে ও আত্মনির্ভরশীল করতে চায়৷ এক বছর ফসলের উত্‍পাদন ভালো হলে পরের বছর ভালো উত্‍পাদন নাও হতে পারে৷ তাই বলে আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে, এটা হয় না৷ তিনি বলেন, খাদ্যের জন্য আমরা পরনির্ভরশীল হবো না৷ আমাদের যেন আমদানি করতে না হয় সে জন্য আগে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷শেখ হাসিনা বলেন, উত্‍পাদনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়নও হবে৷ কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা না বাড়লে শিল্পায়ন হবে না৷ শিল্পায়ন হলে যা উত্‍পাদন হবে কতো আমরা বিদেশে রফতানি করবো, আমাদেরকে দেশের ভেতরে বাজার সৃষ্টি করতে হবে৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিশাল জনসংখ্যা এটাই আমাদের শক্তি৷ এখানেই বিশাল বাজার সৃষ্টি হতে পারে যদি আমরা তাদের আর্থিক উন্নতি করতে পারি৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি তাদের ক্রয় ক্ষমতা আমরা বাড়াতে পারি৷ তাহলেই আমরা আমাদের দেশকে সব দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে ফেলতে পারব৷ সেখানে কোনো বেকারত্ব থাকবে না, মানুষের হাহাকার থাকবে না, মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারবে৷ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও শস্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, খাদ্যটা যদি সঠিক সময়ে দিতে না পারি, তাহলে কাদের জন্য কাজ করছি?তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতেই হবে৷ একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না৷ যেভাবেই হোক মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে৷সরকার পরিচালনায় নিজের দর্শন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে সবারই চিন্তার পার্থক্য থাকে৷ আওয়ামী লীগ কারো কাছে হাত পেতে চলতে চায় না৷ তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ গবেষণায় থোক বরাদ্দ দিয়েছিল৷ এর ফল বাংলাদেশ এখন পাচ্ছে৷ ২০১২ সালে বাংলাদেশের চাল আমদানি করতে হয়নি, বরং ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল শ্রীশঙ্কায় রপ্তানি করেছে৷২০১৪ সালে দেশে তিন কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উত্‍পাদন হবে বলেও বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী৷

বৈঠকের শুরুতেই খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অগ্রগতি সরকার প্রধানের সামনে তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, চলতি বছর ১.৫ পাঁচ লাখ মেট্রিক টন গম এবং ১৫ দশমিক ৬৮ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে৷ রোববার পর্যন্ত দেশে ১১ লাখ ৩২ হাজার ২০২ মেট্রিক টন চাল এবং দুই লাখ ২৬ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন গমের মজুদ রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় তিন লাখ মেট্রিক টন বেশি৷

মন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩২২ ডলার হলেও বাংলাদেশ ইউক্রেইন থেকে ২৯৭ দশমিক ৫০ডলার দরে গম কেনার চুক্তি করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলায় গুরুত্ব দিয়ে বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব৷ সেজন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷এলাকাভিত্তিক ফসল উত্‍পাদন এবং তা সংরক্ষণের পাশাপাশি শস্যের বহুমুখীকরণের কথাও তিনি৷ শেখ হাসিনা বলেন, দেশে খাদ্য মজুদ ক্ষমতা ১৪ দশমিক ছয় লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ২০ লাখ মেট্রিক টন হয়েছে৷

তিনি কৃষকদের উত্‍পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি উত্‍পাদিত শস্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ নিশ্চিত এবং কোন খাদ্যে কী পুষ্টি আছে- তা প্রচার করতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী৷কৃষিতে ভর্তুকির বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের বিরোধিতার পরও বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে সার, বীজ, যন্ত্রপাতি এবং বছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন৷

অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা কৃষিতে ভর্তুকির বিরোধিতা করে৷ ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এখানে যে আছে, সে আমার কাছে বিশাল এক তালিকা নিয়ে আসে৷ এর মধ্যে, কৃষিতে ভর্তুকি বন্ধের কথা ছিল৷ আমি তখন তাকে বলি, ঠিক আছে৷ আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় কৃষকদের ভর্তুকি দেব৷উন্নত দেশে কৃষকদের অনেক রকম সহায়তা দেওয়া হয়৷ কিন্তু আমাদের সময়ই অসুবিধা, বলেন তিনি৷

দশ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সহজ শর্তে ঋণের সুযোগের কথা তুলে ধওে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড়লোকরা ব্যাংকের টাকা নিলে শোধ দেয় না৷ মিলিটারি ডিকটেটরদের সময় থেকে এই কালচার শুরু৷গরিব কৃষক ঠিকই টাকা ফেরত দেয়৷ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেশকে ক্ষধামুক্ত করতে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি সংরৰণ, প্রক্রিয়াকারণ, বাজারজাত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যপ্রাপ্তি সহজলভ্য করতে খাদ্য উত্‍পাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়সমূহ পরিদর্শনে কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন৷ এ সময় তিনি মন্ত্রণালয়টির নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ও এর বাসত্মবায়নের খোঁজ-খবর নেন এবং সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গতিশীলতায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন৷শেখ হাসিনা বলেন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সত্যিই এক দুরূহ কাজ৷ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত নির্দেশনা ও রূপরেখা অনুসরণ করে এ যাবত নেয়া আমাদের পদক্ষেপগুলোর ভাল ফল পাওয়া গেছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটি লক্ষ্য আছে৷ আমাদের লৰ্য হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা৷ আমরা অন্যের কাছে হাত পাততে চাই না৷ এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা খাদ্য উত্‍পাদন বাড়াতে, কৃষকদের কাছে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে, কৃষির আধুনিকায়নে এবং গবেষণার উপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে পদক্ষেপ নিয়েছি৷এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর দল ও পূর্ববতর্ী বিএনপি’র মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নীতি হচ্ছে খাদ্য উত্‍পাদন বৃদ্ধি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো৷ কিন্তু বিএনপি ও তার সাবেজক অর্থমন্ত্রীর নীতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত- দাতাদের কাছে সাহায্য চাওয়া৷

অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরম্নল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন৷ এছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকা ইকফাত বক্তৃতা করেন৷এতে খাদ্যমন্ত্রী দারিদ্র্য হ্রাসে সহম্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সময়সীমার আগে সাফল্য অর্জনের জন্য এফএও কতর্ৃক ৩৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে দেয়া ‘ডিপ্লোমা এ্যাওয়ার্ড’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন৷