ড.-মিজানুর-রহমান

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮নভেম্বর: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান বলেছেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ৷ এজন্য রাষ্ট্রকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো উচিত্‍৷শনিবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সেমিনার হলে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত ‘বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিতকরণ গৃহীত ব্যবস্থা ও করণীয় শীর্ষক সভায় তিনি এ কথা বলেন৷মিজানুর রহমান বলেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানো বা বিষ মেশানোর অভিযোগে ফুটপাতের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু এর পেছনে যারা ইন্ধনদাতা তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন৷ তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিত্‍৷ আর এটি পারবে রাষ্ট্র৷

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, কারো পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা আপনাদের কাজ নয়৷ আপনাদের উচিত্‍ যেকোনো অপরাধের সঠিক তদন্ত করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া৷দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তা খুবই দুর্বল উল্লেখ্য করে মিজানুর রহমান বলেন, এটাকে আরো শক্তিশালী করা উচিত্‍ এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব৷ এটা অন্য কারো কাজ নয়৷তিনি বলেন, কাউকে এমনিতেই জঙ্গি বলা যাবে না৷ জঙ্গি প্রমাণ করে আদালতের বিচার শেষে তারপর তাকে জঙ্গি বলা যাবে৷ আগে বলা যাবে না৷ আইন আমাকে এমন দায়িত্ব দেয়নি যে আমি একজনকে সন্দেহ করে তার পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করবো৷

মানবাধিকার কমিশনের এই চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র যখন নিরাপদ খাদ্যসহ সকল নাগরিকের সকল অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে তখনই রাষ্ট্র সফল৷ আর তখনই রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন হবে৷ন্যায় বিচার সম্পর্কে কোনো কথা বললেই আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের পুলিশ যখন বন্দুক ঠেকিয়ে কোনো সাধারণ জনগণকে গুলি করে এটা কোন ধরনের আইনের মধ্যে পড়ে? এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না?আর আমি যদি তাদের ন্যায় বিচারের কথা বলি তখন আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ দেশে আইন আছে, কেউ অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে৷ পুলিশের এ ধরনের বর্বরতা কোনো সভ্য দেশে নেই বলে মন্তব্য করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান৷

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন,পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে৷ পুলিশের সামপ্রতিক কার্যক্রম সাংঘাতিক রূপ নিয়েছে৷ তাদের আচরণ সংযত করতে হবে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে৷মিজানুর রহমান বলেন, একজন নাগরিককে খুব কাছে থেকে এভাবে গুলি করা এক ধরনের বর্বরতা ও অসভ্যতা৷ এভাবে গুলি করার নির্দেশ পুলিশকে কে দিয়েছে?তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট জেলার পুলিশের কতিপয় সদস্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেশি করছেন৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে৷ পদক্ষেপ না নেয়া হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে জানানো হবে৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, পবা যে কাজটি করছে তা আমাদের সবারই দায়িত্ব৷ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সচেতন হতে হবে৷ ১৯৭১ সালে বিষযুক্ত খাবারের জন্যই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি? নিরাপদ খাদ্য ১৬ কেটি মানুষের জন্য, পবার একার জন্য নয়৷ আমরা যদি নিরাপদ খাদ্য আমাদের প্রজন্মকে খাওয়াতে না পারি তাহলে পাঁচ থেকে সাত বছর পর আমাদের ছেলেমেয়েরা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে৷ এজন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব৷

মানবাধিকার সংগঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুধু সরকারের সমালোচনা করে কিন্তু গঠনমূলক কাজ করে না৷ যেমন একজন ধর্ষিতার পাশে, হত্যার শিকার পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়ায় না, তাদের হয়ে কথা বলে না৷সভায় পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের সাবেক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, রশিদ ই মাহবুব, লেলিন চৌধুরী৷ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান৷