দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৮নভেম্বর: হাসপাতালের বিছানায় মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে পিতা৷ আর যারা এর জন্য দায়ী তাদের দেওয়া মামলায় ছেলে ঘুরে ফিরছেন নানা দিকে৷ শুধু তাই-ই নয়, ছেলে সঙ্গে পুরো পরিবারই মিথ্যা মামলায় আতঙ্কে ভর করেছে৷ এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও এই বর্বর হামলাকারীদের দৃষ্টাসত্মমূলক শাসত্মি দাবি করেছে পরিবারটি ভূক্তভোগিরা৷
ঢাকা রিপোর্টা্র্স ইউনিটিতে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের পরিবারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইলেন সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত আসাদুজ্জামন শেখ এর স্ত্রী৷ একই সঙ্গে পরিবারের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন পুত্র আল ইমরান জনি৷ এ নৃশসংসতার বিচার চায়ে কাঁদিয়েছেন উপস্থিত সকলকে৷ হামলার বিবরন দিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আল ইমরান জনি বলেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, গত ১ নভেম্বর সারাদেশে ভয়াবহ বিদু্যত্ বিপর্যায়ের দিবাগত রাতে আমার দেড় বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের সনি্নকটে ৬৯ এমটি রোডে বাসার সামনে পায়চারী করছিলেন৷ এমন সময়ে পূর্ব থেকে ওত্ পেতে থাকা বাগেরহাটের স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম সরদার ওরফে চেয়ারম্যান, কসাই রেজাউল, ঈমাম সরদার ওরফে জমদুত সহ তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে আমার পিতার ওপর আক্রমন করে৷ এসময়ে তারা কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণও করে৷ কিন্তু তা লৰ্যভ্রষ্ট হলে আমার পিতাকে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে তার দুটি হাতের কব্জি কেটে আলাদা করে ফেলেছে, তার মুখ ও চোয়ালে একাধিক কোঁপ দিয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে৷ তাদের হাত থেকে আমার দুধের শিশুও রক্ষা পায়নি৷ আমার শিশুটি এখনও ঘুমের মধ্যে আর্ত-চিত্কার দিয়ে জেগে ওঠে৷
আল ইমরান জনি বলেন, যেখানে আমার পিতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, পরিবারের সকলেই তাকে যখন বাঁচানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালচ্ছে, তখন ওই সন্ত্রাসী বাহিনী বাগেরহাটে আমাদের নামে মিথ্যা মমালা করেছে৷ ওই মামলায় আমাকে প্রধান আসামী করা হয়েছে৷ অথচ, মামলায় উল্লেখিত সময়ে আমি, আমার পরিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছি৷ আমি সংবাদ পেয়ে তাত্ৰনিকভাবে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আমার উপস্থিতিকে জানানোর জন্য একটি সাধারন ডায়েরী (২৫৯ তারিখ ৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টা) করেছি৷ কিন্তু তারপরও বাগেরহাট জেলার স্থানীয় থানা পুলিশ আমাদের বিরম্নদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে৷
তিনি বলেন, আামর বাবার কি অপরাধ তা আমরা জানি না৷ শুধুমাত্র বিএনপি রাজনীতির সাথে তাদের পরিবার সম্পৃক্ত থাকার কারনে ২০০১ সালে তার ছোট চাচা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক আসলাদ উজ্জামনসহ ৩ জনকে একই সন্ত্রাসীরা দিনে দুপুরে হত্যা করে৷ ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তার পিতা আসাদুজ্জমান শেখ প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন৷ এ হত্যা মামলায় বাগের হাট জেলার রামপাল উপজেলার ১ নং গৌরাম্ভ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সেলিম সরদারের যাবজ্জীবন সাজা হয়৷ কিন্তু সম্প্রতি তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে আমার পিতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে৷ তিনি এখন মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছে৷ অথচ যে রাজনৈতিক দলের কারনে তার ও তার পরিবারের ওপর এই ভয়াবহ নির্যাতন করা হচ্ছে সেই দলের কোন দায়িত্ত্বশীল নেতা কোন খোঁজ পর্যনত্ম নেননি৷
তিনি আরও জানান, চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীরা নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (জনযুদ্ধ) সক্রিয় সদস্য৷ এই সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ত্বে বিগত সময়ে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরম্নল ঈমাম,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার সরদার আব্দুর রাজ্জাক হত্যাকান্ডের আসামী হিসেবে আউনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে সেলিম সরদার ওরফে চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই ঈমাম সরদার ও সাঈদ সরদার নিহত হয়৷ এছাড়া মঞ্জুরম্নল হত্যাকান্ডে ব্যাবহূত বোম ও অস্ত্রসহ এই সন্ত্রাসীর স্ত্রী, বড় ছেলে ও শুকুর গাজী নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার হন৷ দির্ঘদিন জেল ভোগের পর তারাও জামিনে মুক্ত হয়েছেন৷ আল ইমরান জনি তার লিখিত বক্তব্যে আরও জানান, এই সন্ত্রাসী বাহিনী ২০০৯ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুলস্না হেল কাফি (সভা) কে কুপিয়ে এবং অতি সম্প্রতি গৌরাম্ভ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মুক্তকে গুলি করে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে৷
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্থানী বিএনপি নেতা ড.শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন,একদিকে বাবার চিকিত্সা, অন্যদিকে মামলার আতঙ্ক৷ বিপর্যায়ের মুখে পুরো একটি পরিবার৷ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ওই সন্ত্রাসী বাহিনীকে মদদ দিচ্ছে বলে একের পর এক অপকর্ম করার সাহস পাচ্ছে৷ কিন্তু দেশের বিবেকবান মানুষ ও সংবাদ মাধ্যম এই বিপর্যন্থ পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ এজন্য এখন নিত্য নতুনভাবে তাদেরকে হয়রানীর চেষ্টা করছে৷ এদিকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদটি প্রচার হওয়ার সাত দিন পর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আসাদুজ্জমান শেখকে দেখতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর৷ এসময় বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, স্থানীয় বিএনপি নেতা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, গাজী রুনা প্রমুখ৷