BNP

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮নভেম্বর: আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে একটি দেউলিয়া দল মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন৷৭ নভেম্বর অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরার দিন৷ এই দিনটি যারা পালন করেন না, বা পালন করতে দেন না, অস্বীকার করেন, তারা কখনোই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না৷

শনিবার নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন৷তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ৭নভেম্বরকে গণহত্যার দিন বলে পালন করে৷ অথচ এদিন দেশে গণতন্ত্র টওতিষ্ঠিত হয়েছিল৷১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সেনপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান৷ এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে একটি অভু্যত্থান হয়; জিয়া হন গুহবন্দি৷

৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভূ্যত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া৷ আর এর মধ্য দিয়ে জিয়া ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, হন দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক৷বিএনপি এই দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস,আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস এবং জাসদ সিপাহী-জনতার অভূ্যত্থান দিবস হিসাবে পালন করে৷ দিবসটি উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচির সঙ্গে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি৷ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল ওই সমাবেশে৷

সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠায় বিএনপি৷ তবে শুক্রবার রাতেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না মেলায় শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে পরদিন সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দেন ফখরুল৷মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে এখন দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে৷ তারা পুলিশ, র্যাব এর উপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে৷দেশের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসছে৷ মির্জা ফখরুল বলেন,আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগসহ সব টওতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে৷ বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে৷তিনি বলেন, সরকারের এই পুলিশ বাহিনী এতোটাই ক্ষমতাশালী হয়েছে যে, তারা এখন জনসভা করতে দেয় না৷

সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার পর পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির ভারটওাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷পুলিশ কর্তারা এখন রাজনৈতিক নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি৷রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবারের সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়ার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল৷তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ পুলিশের বুটের নিচে৷ তারা রাজনৈতিক নেতাদের ভাষায় কথা বলে৷ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সাহেব বলেছেন, পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে৷ এ থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতা কাদের হাতে৷

সরকার পুলিশ ও র্যাবের ওপর ভর করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ চালাচ্ছে৷ দেশটাকে তারা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে৷এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাসদ সভাপতি ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন,জাসদ নেতা ইনু সমপ্রতি জিয়াউর রহমানকে চতুর্থ মীরজাফর বলেছেন৷ আমরা তার এহেন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই, নিন্দা জানাই৷আওয়ামী লীগ আমলে ৩০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যা হয়েছিল, ইনু তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করেছে৷

সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন,অবৈধ সরকার গণতন্ত্রে কোনোস্পেস রাখছে না৷বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না৷দেশটাকে তারা স্বৈরাচার একনায়কতন্ত্রের পথে নিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা বলতে চাই, এর পরিণতি অতীতেও ভালো হয়নি, এখনো হবে না৷

সভা-সমাবেশের অনুমতির ক্ষেত্রে সরকারের দ্বৈতনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত ৩ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করছে৷আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে, মিছিল করে৷ ক্ষমতাসীনদের জন্য কোনো অনুমতি লাগে না৷অন্যদিকে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না৷আইনি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে অনুমতি চাইলেও পাওয়া যায় না৷ সমপ্রতি যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজের বাসায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করতে গেলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে৷ এক দেশে দুই আইন৷ গোটা দেশটাকে সরকার পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে৷

মির্জা ফখরুল বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আমরা সব আইন মেনে চলতে চেষ্টা করেছি৷ সভা-সমাবেশ করার ন্যূনতম সুযোগ আমাদের দেওয়া হচ্ছে না৷অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রতিদিনই মিছিল মিটিং করছে৷ অথচ আমরা মিটিং-মিছিল করতে চাইলে বাধা দেয়া হচ্ছে৷বিএনপি রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ করবে৷রাজধানীরসোহরাওয়ার্দীতে শনিবার সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে৷নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷তিনি বলেন,রোববার সারা দেশে মহানগরের থানায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষাভ কর্মসূচি পালন করা হবে৷

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার এভাবে বাধা দিতে থাকলে একদিন বাধার বাঁধ ভেঙে যাবে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেবে না৷সরকার গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেবে৷ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রমুখ৷