anisul

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮নভেম্বর: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে দেয়া প্রাণভিক্ষার আবেদনের সাত দিনের সময় শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক৷ শনিবার বেলা ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক সেমিনারে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন৷কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার জন্য সাত দিন সময় পাবেন এবং সে বিষয়টি রোববারের মধ্যেই শেষ হচ্ছে, তাহলে এখন কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, আপিল বিভাগ থেকে প্রকাশিত রায়ের ওপরই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে৷

কারাবিধির ৯৯১ ধারাটি দেখেন, যখন আসামির মৃতু্যদণ্ড হয় তখন লেখা ছিল হাইকোর্ট এখন আপিল বিভাগ৷ তাঁকে এটা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সাত দিন সময় দিতে হয়৷ এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা৷ তাঁকে মার্সি চাওয়ার জন্য সেই সময় দেওয়া হয়েছে৷ এখন এই সাত দিন তো শেষ হয়নি৷তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কামারুজ্জামানকে তার ভুল স্বীকার করে প্রাণভিক্ষার জন্য সাত দিন সময় দেয়া উচিত্‍৷ এবং এটা সাংবিধানিক নিয়ম৷ তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সেই সময় দেয়া হয়েছে৷ এখন এই সাত দিন তো শেষ হয়নি৷

কারাবিধি ৯৯১ ধারায় আসামিকে অবহিতকরণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনিসুল হক বলেন, ওই ধারাটি যদি পড়েন তাহলে দেখবেন অবহিতকরণের কথা বলা আছে৷ তার মানে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজপত্রে জানাতে হবে তা নেই৷ কথা হচ্ছে সে বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে৷

এ সময় কীভাবে কামারুজ্জামানকে বিষয়টি জানানো হলো সাংবাদিকেরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান৷ তিনি বলেন, আদেশ যায়নি মানে কী? তাকে জানানো হয়েছে৷ ব্যাপারটি হলো আমি যত দূর জেনেছি প্রিজন অফিসিয়াল হ্যাভ টোল্ড হিম দ্যাট”আপনার আপিল ডিসমিস হয়েছে৷ আপনার মৃতু্যদণ্ড বহাল আছে৷কিসের ভিত্তিতে জানানো হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী পাল্টা টওশ্ন করে বলেন, তাহলে খবরের কাগজ কি মিথ্যা?এ সময় সাংবাদিকেরা কালকের পর কামারুজ্জামানের মৃতু্যদণ্ড কার্যকর হতে পারে কি না জানতে চান৷ উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমি জানি না৷

এদিকে, জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে মঙ্গলবার কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনার পর থেকেই প্রশ্নটি উঠে আসছে,কখন কার্যকর হচ্ছে ফাঁসি?বুধবার এ নিয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেনের সংবাদ সম্মেলন এবং পাল্টা হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য, স্বজনদের কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত্‍ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের বৈঠক- এসব ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে, কামরুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর সময়ের ব্যাপার মাত্র৷

এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে৷ সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি কোন কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন৷ তবে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কামরুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের৷জানা গেছে, সোমবার রাতে কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসির মহড়া দেয়৷ ওই মহড়া দেয়ার পরেই কামারুজ্জামানকে ঢাকায় আনা হয়৷

বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন তার স্ত্রী,ছেলে- মেয়ে, চাচাসহ ১০ স্বজন৷ বুধবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৮ মিনিট পর্যন্ত তার কারাগারের ভেতরে সাক্ষাত্‍ করেন৷ ওই ঘটনার পরেই মূলত ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে নানা ডালপালা ছড়ায়৷ তবে সিনিয়র জেলসুপার বলেন, আমরা তাদের (স্বজন) সাক্ষাত্‍ করার জন্য ডাকিনি৷ নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে তারা সাক্ষাত্‍ করতে এসেছেন৷যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাকে ঢাকা কারাগারে স্থানান্তর নিয়ে তাদের উদ্বেগ থাকলেও এই দেখাকে শেষ ভাবছেন না৷

বুধবার ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১১টা ৮ মিনিট পর্যন্ত আধা ঘন্টার জন্য দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয় তাদের৷এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী নুরুন্নাহার, চার ছেলে হাসান ইকবাল, হাসান আহমেদ,হাসান ইকরাম, হাসান ঈমাম, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাই নাজিরুজ্জামান ও আবদুল্লাহ আল মাহাদী, বোন মোহসীনা বেগম ও ভাগ্নে আবদুল আলিম৷

দেখা করে বেরিয়ে এলে কামারুজ্জামানের চতুর্থ ছেলে হাসান ইমামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা এই দেখাকে শেষ দেখা মনে করছেন কিনা?জবাবে তিনি বলেন, না শেষ সাক্ষাত্‍ হবে কেন? এটা নিয়মিত দেখা৷ কাশিমপুর কারাগারে থাকতে আমরা নিয়মিত দেখা করতাম৷ গত ঈদেও দেখা করেছি৷ তাই আজ দেখা করলাম৷আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখার পর মঙ্গলবার কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয় কামারুজ্জামানকে৷

আপিল বিভাগ রায়:গত সোমবার মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে শেরপুরের জামাত-আলবদর নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃতু্যদণ্ডাদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷গত বছরের ৯মে ময়মনসিংহের আল-বদর প্রধান কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল৷ রায়ে হত্যা ও গণহত্যার দুটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়৷ অন্য দুটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরেকটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷

গত বছরের ৬ জুন ট্রাইবু্যনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কামারুজ্জামান৷ আর ট্রাইবু্যনালে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় আপিল করেনি৷সুপ্রিম কোর্টে আপিল দাখিলের পর চলতি বছর ৫ জুন শুনানি শুরু হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হয়৷ এরপর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে আপিল বিভাগ৷আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে করা তৃতীয় আপিলের রায় এটি৷