দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ৮নভেম্বর: দেশের আকাশ ও নৌসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমান বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্জিত সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় বিমান বাহিনীকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন৷শনিবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটিকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি৷এ সময় ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে বিমান বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী চৌকশ বাহিনীতে পরিণতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) ঘাঁটি জহুরম্নল হককে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছেন৷ এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিএএফ দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের সম্মান, সুনাম ও গৌরব সমুন্নত রাখবে৷প্রধানমন্ত্রী আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে সুদৃঢ়, শক্তিশালী ও কার্যকর করতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নয়ন ও এর সদস্যদের কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷তিনি বলেন, উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ৷ তিনি আরো বলেন,স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়নত্মী উদযাপনের আগেই আমরা বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী ও কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ৷
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক দেশের দৰিণ-পূর্ব অঞ্চলসহ সমুদ্রসীমার সার্বিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে স্বাধীনতার পর স্থাপিত হয়৷জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর ঘাঁটিটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ৷ বিমান বাহিনীকে শক্তিশালীকরণে ও জাতির স্বার্থে এই ঘাঁটি গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রাখছে৷ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়৷ গ্রুপক্যাপ্টেন সৈয়দ সায়েদুর রহমান কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন৷
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পেঁৗছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারি, এনডিসি,পিএসসি এবং ঘাঁটির কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর তাকে স্বাগত জানান৷প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন৷ এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়৷ কুচকাওয়াজকালে প্রধানমন্ত্রীকে ন্যাশনাল স্যালুট প্রদান করা হয় এবং এ সময় তিনবার চিয়ার আপ প্রতিধ্বনিত ও জাতীয় পতাকাবাহী হেলিকপ্টার পাষ্ট পরিচালনা করা হয়৷
এ সময় কেবিনেট সদস্য, সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীর প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, আধা সামরিক বাহিনী, কুটনীতিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷তিনি বলেন,সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে বিমান বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও চৌকস বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকান্ডে আরও সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে৷দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য সেনা ও নৌ বাহিনীর উন্নয়নকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি৷ গত মেয়াদে সেনা ও নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাসত্মবায়ন করেছি৷
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সুষম উন্নয়ন বাসত্মবায়ন করছে৷তিনি আশা করেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের বুকে সমুন্নত রাখবে৷ বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরবে৷
যে কোন বাহিনীর সদস্যের জন্য পেশাগত দক্ষতা অর্জন আবশ্যকীয় উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দক্ষতা যেমন একদিকে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় তেমনি সংগঠনের জন্য বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা৷তিনি দক্ষ ও আদর্শ বিমানসেনা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান৷তিনি বলেন, এ জন্যে প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও কঠোর পরিশ্রম৷ পাশাপাশি আপনাদের স্মরণে রাখতে হবে, স্বাধীনতার জন্য লৰ প্রাণের ত্যাগ ও তিতিৰার ইতিহাস৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে৷
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ সংযোজন করি৷ এছাড়া বিমান বাহিনীতে সুপরিসর সি-১৩০ পরিবহণ বিমান এবং উচচক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার স্থাপন করা হয়৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে সরকার বিমান বাহিনীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাসত্মবায়ন করেছে৷তিনি বলেন, চীন থেকে ১৬টি যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়া থেকে ৩টি গর-১৭১ হেলিকপ্টার বিমান বাহিনীতে অনর্ত্মভুক্ত করা হয়েছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কঙ্বাজারে একটি বিমান ঘাঁটি স্থাপন করেছে৷ বিমান বাহিনীর জন্য এই ঘাঁটিতেই প্রথমবারের মতো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ উদ্ধার ও নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য দুটি অত্যাধুনিক মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার অড-১৩৯ অতিশীঘ্রই বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হবে যা এই ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হবে৷
তিনি বলেন, সরকার বিমান বাহিনীর শিৰানবিশ বৈমানিক ও অন্যান্য শিৰানবিশ অফিসারদের গবেষণা ও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিমান বাহিনী একাডেমী, যশোরে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেঙ্ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শানত্মিরক্ষা মিশনে বিমান বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে৷ বিমান বাহিনীতে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপনের ফলে জনবল বৃদ্ধি পাচ্ছে৷তিনি বলেন, এতে পদোন্নতির পথ সুগম হচ্ছে বিমান বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, বৈমানিকদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কার্যকরভাবে দেশের কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের চাকুরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে৷ এছাড়া পদবীর সাথে সঙ্গতি রেখে বিমান সেনাদের চাকুরির মেয়াদও পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে৷
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও এর সকল সদস্যের সুন্দর ভবিষ্যত ও অব্যাহত সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সকলে প্রতি আহ্বান জানান৷