দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৬নভেম্বর: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে আসা তারেক রহমান এবার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করার দাবি তুললেন৷বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রকৃত ইতিহাস বলার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু এ মামলা হওয়া উচিত শেখ মুজিবুর রহমানের নামে৷ কারণ, তিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে এসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন৷
বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন৷ বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের আট্রিয়াম হলে এ সভা হয়৷ লন্ডনের একটি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস,কয়সর এম আহমেদ, মহিদুর রহমান, এম এ সালাম ও এম এ মালেক উপস্থিত ছিলেন৷
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন৷ তার বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজন দুর্নীতির মামলা হয়৷ সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিকিত্সার জন্য যুক্তরাজ্য যান তিনি৷স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তখন থেকে সেখানেই রয়েছেন তারেক৷ তার মা খালেদা জিয়া সমপ্রতি জানিয়েছেন, চিকিত্সা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারেক দেশে ফিরছেন না৷
তারেক রহমানের দাবি, তাঁর বাবা জিয়াউর রহমান শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কিংবা প্রথম রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্টও ছিলেন৷প্রায় দেড় ঘন্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি দাবি করেন, জিয়াউর রহমান জোর করে ক্ষমতা দখল করেননি এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার সঙ্গে তাঁর বাবার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না৷ নিজের বক্তব্যের পক্ষে নানা তথ্য এবং যুক্তি তুলে ধরেন তিনি৷
যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে ৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতাকামী মানুষের হত্যাকারী’ বলেও আখ্যায়িত করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক, যার বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ৷বক্তব্যের শুরুতেই তারেক বলেন, নতুন প্রজন্ম যাদেরকে মিথ্যা, বিকৃত ও খণ্ডিত ইতিহাস শেখানো হচ্ছে, তাদের জানতে হবে শুদ্ধ, প্রকৃত ও সত্য ইতিহাস৷
বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক এরপর দুই ঘন্টার বক্তৃতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ৭ নভেম্বরের অভূ্যত্থান এবং সেই সময়ের নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার বিষয়গুলো নিজের মতো করে উপস্থাপন করতে থাকেন৷
জিয়াউর রহমান কতোটা জনপ্রিয় ও নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তা প্রমাণের চেষ্টা দেখা যায় তারেকের বক্তব্যের একটি বড় অংশ জুড়ে৷ আর তা করতে গিয়ে তিনি বার বার ইতিহাসের ব্যাখ্যা হাজির করেছেন নিজের মতো করেন, বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন পাকবন্ধু৷ আর বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় জিয়াউর রহমানকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় বার বার তিনি দায়ী করেছেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে৷ এ দলের বর্তমান প্রধান ও মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর তখনকার ভূমিকা নিয়েও বিভিন্নভাবে প্রশ্ন তুলেছেন তারেক৷
তারেক বলেন, ইতহাসের ভিত্তিতে কিছু সত্য তথ্য উচ্চারণে আমার বিরুদ্ধে নাকি দেশদ্রোহী মামলা করা হয়েছে৷ কথায় কথায় দেশদ্রোহী মামলা হবে কেন? ইতিহাসের প্রকৃত সত্য সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য যদি কারো বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হতে হয়, তাহলে সেটি হওয়া উচিত্ শেখ মুজিবের নামে৷তারেকের ভাষায়, শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলার জনগণ নায়ক হিসাবে দেখতে চাইলেও তিনি বরাবরই পাকিস্তানকেই নিরাপদ মনে করেছেন৷শেখ মুজিব একজন পাকিস্তানি নাগরিক হিসাবে এসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছেন৷…একজন পাকিস্তানি নাগরিক কেমন করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিরেন সেই প্রশ্নের আইনগত নিষ্পত্তির জন্য শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে েদশদ্রোহী মামলা হওয়া জরুরি৷
তারেকের দাবি, তার বাবা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না, তিনিই ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট৷জিয়া সামরিক শাসন বা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ কোনোটাই জারি করেননি বলেও দাবি তার ছেলের৷জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বক্তৃতায় বার বার জঙ্গি ইনু হিসাবে আখ্যায়িত করেন তারেক৷বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে জঙ্গি ইনু আখ্যায়িত করে তারেক রহমান বলেন, এই ইনু বাহিনী ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পটভূমি তৈরি করেছিল এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লা িয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল৷ সে কাজে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে৷
তিনি বলেন, শেখ মুজিব হত্যার দায় তত্কালীন জঙ্গি নেতা ইনু কিংবা মেননরা এড়াতে পারেন না৷ বর্তমানে শেখ হাসিনার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার লিপ্সার সুযোগ নিয়ে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগী কিংবা সমর্থক এই চক্রটি এখন অবৈধভাবে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে৷ ৭৫ এর পরাজিত এই অপশক্তি এখন নিজেদের দোষ ঢাকতে তাদের অপপ্রচারের টার্গেট বানিয়েছে বিএনপিকে৷
স্থানীয় সরকারবিষয়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলহত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার জবাবে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই জেলহত্যা দিবস পালন করে ৩ নভেম্বর৷ ওই হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ২ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ তত্কালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসের বাসায় গৃহবন্দী করেছিলেন৷ তাঁর দাবি, জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেননি৷ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক এটি জারি করেছিলেন৷
তারেক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে আগস্ট থেকে নভেম্বও এই কয়েকটি মাস ছিল ঘটনাবহুল এবং বিপত্সংকুল৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা, সেনাবাহিনীতে চলে অভু্যত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান, খালেদ মোশাররফসহ সেনা অফিসার হত্যা, তাহের-ইনু চক্রের ষড়যন্ত্র এবং সিপাহী-জনতার সফল গণ-অভু্যত্থানের পথ ধরে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে৷
বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক বলেন, এই সরকার দাবি করছে তারা বিদু্যত্ উত্পাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে৷ অথচ গত ১ নভেম্বর সারা দেশে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দিন বিদু্যত্ উত্পাদন হচ্ছিল পাঁচ হাজার মেগাওয়াট এবং আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৫০০ মেগাওয়াট৷ বিদু্যত্ উত্পাদন নিয়ে সরকার প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে বলেও দাবি করেন তিনি৷