দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৬নভেম্বর: সরকারের একগুয়েমি ও নিষ্ঠুরতার কারণে দেশের রাজনৈতিক ময়দান শান্ত ও নিরাপদ হয়ে উঠবে না৷ জনগণের প্রবল আন্দোলনের জোয়ারেই অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷
তিনি বলেন,ভোটারবিহীন সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি ও নিষ্ঠুরতার কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় হয়ে উঠবেনা৷ জনগণের প্রবল আন্দোলনের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারেই এই অবৈধ সরকারের পতন নিশ্চিত হবে৷ ৭ নভেম্বর উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান৷ এসময় ৭ নভেম্বর উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি৷
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নির্ভর করে শেখ হাসিনার করুণার ওপর৷ ভোটারবিহীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় ভয় দেশের জনসাধারণকে৷ তাই জনগণের মনে ভীতি সৃষ্টির জন্য সরকারের এমন কোনো দমনমূলক পন্থা নেই যা তারা অবলম্বন করছে না৷ প্রধানমন্ত্রী তার নিজের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য নিদ্রাহীন প্রহরে প্রহরে পীড়ণ পেষণের এমন কোনো অস্ত্র নেই যা তিনি জনগণের ওপর প্রয়োগ করছেন না৷
তিনি আরো বলেন, ্ এ অবৈধ সরকার যেমন একদিকে নিজের পছন্দসই লোকদের নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গকে সাজিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে নিজের দলীয় অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গ সংগঠনের দুর্বৃত্তদের দিয়ে জনগণের ওপর চালাচ্ছেন অবর্ণনীয় অত্যাচার৷ রাষ্ট্রের আর একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, যেটির প্রশ্নাতীত নিরপেক্ষতা থাকার কথা, অথচ শেখ হাসিনা শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচন কমিশনে দলের অনুগত ব্যক্তিদের বসিয়ে গোটা নির্বাচনী প্রক্রিটাকেই ডাকাতি করে গদি দখল করে বসে আছেন৷
রিজভী বলেন,আওয়ামী যুবলীগ ছাত্রলীগের হৃদয়হীন অমানবিক কর্মকান্ডে সারাদেশে এক ভয়ংকর ভীতিকর আতংক চলছে৷ ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজিব খুন হয়৷ এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ ছাত্রলীগের হাতে চার বছরেই খুন হয়েছেন ২৬ জন৷ যুবলীগের দখল আর টেন্ডারবাজিতে চট্টগ্রামে শিশুসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদে প্রতিদিনই মানুষ খুন হচ্ছে৷
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগি্নগরল মেশানো বক্তৃতায় তার সাঙ্গ পাঙ্গরা কটুক্তি, পেশী প্রদর্শণ, অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারে শুধুই ক্ষান্ত হচ্ছেনা বরং এদের নির্যাতনে বাংলাদেশের সবস্তরের মানুষই দিবারাত্রি আতংকের মধ্যে রয়েছে৷ নেতা নেত্রীদের রুচিহীন ও দায়িত্ব জ্ঞানবর্জিত উস্কানি, প্ররোচণা ও অসভ্যতার ওপর তারা রাজনীতির সংস্কৃতিকে দাঁড় করিয়েছে৷ কারণ ক্ষমতাবিলাস, দুর্নীতির ওপর অবাধ লাইসেন্স, আইনের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জবাবদিহিতাহীন তাদের একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে৷ তাই সেই কাজটি তারা অত্যন্ত জোরেসোরে করে যাচ্ছে দেশব্যাপী জনগণের রক্ত নিঙড়িয়ে৷
রুহুল কবির রিজভী বলেন,এদেশে কারো সত্যি কথা বলার অধিকার নেই৷ রুদ্্র শাসনের তপ্তপ্রবাহ নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে এসেছে এদেশের জনগণের পিঠে৷ অব্যাহতভাবে গুম, খুন, অপহরণ, দুর্নীতি, জালিয়াতী, চোরাকারবারী, মজুতদারীদের বিরুদ্ধে কথা বললে ভয়ংকর রাজরোষ পতিত হয় সমালোচকদের ওপর৷ সেটি গণমাধ্যমই হোক, কিম্বা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীই হোক৷ তবে সত্য কোনদিনই অতীত হতে পারে না৷ একটি সত্য হাজার মিথ্যার চেয়ে অনেক বড়৷ চারিদিকে ক্ষমতাসীন শকুন হায়েনার জয়জয়কারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত কন্ঠস্বর প্রবল বেগে তাদের বিরুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে৷ এই রক্তপিপাসুদের পতন অনিবার্য৷
সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে জনগণের ওপর নিপীড়ন করছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পীড়নের সব অস্ত্র জনগণের ওপর প্রয়োগ করছে৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নির্ভর করে শেখ হাসিনার করুণার ওপর৷ ভোটারবিহীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় ভয় জনগণকে৷ জনগণের মনে ভীতি সৃষ্টির জন্য সব রকমের দমননীতি অবলম্বন করছে এ সরকার৷বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার নিজের অনুগত ব্যক্তিদের বসিয়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করেছে৷ এর মাধ্যমে গোটা নির্বাচনী টওক্রিয়াকেই ডাকাতি করে গদি দখল করে আছে৷
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- শুক্রবার সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং সারাদেশে সকল দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন৷ একই দিন সকাল ১০টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পুস্পস্তবক অর্পন ও ফাতেহা পাঠ৷ জাতীয় পত্রিকাগুলোয় ক্রোড়পত্র প্রকাশ৷ ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর বিএনপির সমাবেশ৷ এছাড়া দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে৷
এদিকে আগামী ১৭ নভেম্বর মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৮তম মৃতু্যবার্ষিকী পালন করবে বিএনপি৷ এ উপলক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে আহবায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুকে সদস্য সচিব করে একটি আহবায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে৷সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাযহারুল আনোয়ার, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷