যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

দৈনিকবার্তা–ঢাকা,৬ নভেম্বর:  ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান তার আইনজীবীদের সঙ্গে বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তিনি রিভিউ পিটিশন করবেন৷ রিভিউ পিটিশনের পর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন নাকি চাইবেন না৷বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত্‍ শেষে তার আইনজীবী এডভোকেট শিশির মনির সাংবাদিকদের এ কথা জানান৷

শিশির মনির বলেন, আইনমন্ত্রী কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতির যে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট থেকে এমন কোনো অর্ডার আসেনি৷ সুপ্রিম কোর্ট থেকে অর্ডার আসার আগ পর্যন্ত মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই৷ আর আইনমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত আইন বহির্ভূত কাজ৷শিশির মনির আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে এমন কোনো অর্ডার আসেনি৷ আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য কেউ আশা করে না৷

এটর্নি জেনারেল বলেছেন-শর্ট আদেশে এই রায় কার্যকর করা যায় এমন বক্তব্যের জবাবে শিশির মনির বলেন, রিভিউ পিটিশন করার সময় এরসঙ্গে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি জমা দিতে হবে৷ তা না হলে কোথা থেকে আমরা এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাব?কামারুজ্জামানের উদ্ধৃতি দিয়ে শিশির মনির বলেন,যে সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হলো৷ সেই সোহাগপুরের নাম তিনি আগে কখনো শোনেননি৷ আর এই রায় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেছেন৷

যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুতি নেওয়ার আদেশ দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য ‘কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেন আসামির এ আইনজীবী৷সাবেক শিবির নেতা শিশির মনিরসহ চার আইনজীবী সকাল সোয়া ১০টায় কারাগারে প্রবেশ করেন৷ প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর বেরিয়ে এসে শিশির মনিরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷

ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট মশিউল আলমও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন৷এছাড়া ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনও সকালে কারা ফটকে যান৷শিশির মনির বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশনের আবেদন করা হবে৷সেই রিভিউ পিটিশনের পরে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি আসবে৷

যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাজা হলেও কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে পর্যালোচনার সুযোগ আছে দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, সংবিধানের ১০৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে৷এ ক্ষেত্রে কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের প্রসঙ্গও টানেন শিশির মনির৷ গত বছর জামায়াতের আরেক সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার রায় বাস্তবায়নের সময়ই রিভিউ নিয়ে প্রথম জটিলতা দেখা দেয়৷ ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের সুযোগ চান কাদের মোল্লা৷ পাশাপাশি রায় রিভিউ করে খালাসও চান তিনি৷

এ নিয়ে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার পক্ষে করা দুটি আবেদনই একসঙ্গে খারিজ করে দেয়৷ ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ দুই রকম দাবি করে আসছে৷পরিবারের সদস্যরা বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করলে এই জামায়াত নেতার দণ্ড কার্যকর নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়৷ তবে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, এটাকে শেষ দেখা ভাবছেন না তারা৷

এর কয়েক ঘন্টা পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ যেহেতু ট্রাইবু্যনালের সাজাই বহাল রেখেছে, সেহেতু দণ্ড কার্যকরে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই৷তারপর নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত একটা রায় (আব্দুল কাদের মোল্লার রায়) আছে, যেখানে রিভিউ পিটিশন ডিসমিসড হয়ে রায় কার্যকর হয়েছে৷ আমাকে সেটা ধরে নিয়ে রায় কার্যকর করার প্রস্তুতির আদেশ দিতে হবে৷ আমি সেই আদেশ দিয়েছি৷

আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে বলব, ফাঁসির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার,সেগুলো (নেওয়ার) জন্য, বলেন আইনমন্ত্রী৷তার ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করে শিশির মনির বলেন, এটা তিনি আইনের কর্তৃত্ব বহির্ভূত কথা বলেছেন৷

এর ব্যাখ্যায় এই আইনজীবী বলেন, এখনো রায়ের শর্ট অর্ডার বের হয়নি৷ বিচারপতিদের সিগনেচার সম্বলিত কোনো অর্ডার কারও কাছে পৌঁছায়নি৷ সুপ্রিম কোর্টের রুলসে আছে রিভিউ আবেদনের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংযুক্ত করতে হয়৷আর দেশের সব নাগরিকেরই রিভিউয়ের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান ভাল, সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন৷ মানসিকভাবেও তিনি দৃঢ় রয়েছেন৷ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর তা পর্যালোচনায় আবেদন জানানোর কথা জামায়াত নেতার আইনজীবীরা বলে এলেও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্যও অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই৷অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের সামনে এসে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হকও বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই৷

সেক্ষেত্রে আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে বলব, ফাঁসির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার, সেগুলো ( নেওয়ার) জন্য, বলেন আইনমন্ত্রী৷আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের আগে সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ এতে এই জামায়াত নেতার দণ্ড কার্যকর নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়৷তবে দেখা করে বেরিয়ে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, এটাকে শেষ দেখা ভাবছেন না তারা৷

মৃতু্যদণ্ডাদেশের রায় কার্যকরের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই যে ৭দিন দেয়া আছে জেলকোড অনুসারে এটাই হচ্ছে সঠিক সময়৷ তাকে এ ৭দিন দেয়া হবে৷এরমধ্যে মাহামাণ্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন৷সেই ক্ষমা চাওয়ার নিয়ম দোষ শিকার করে কামারুজ্জামান ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন৷ এখন সেটার অপেক্ষায়৷

আইনমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে একটা প্রশ্ন উঠে ছিল এরা রিভিউ করতে পারে কি না পারে,এখন পর্যন্ত কাদের মোল্লার যে মামলা হয়েছে সেই মামলায় রিভিউয়ের একটা দরখাস্ত করা হয়েছিল৷ সেই দরখাস্তটা আপিল বিভাগ নাকচ করে দিয়েছিল৷

আপিলের ইংরেজি অর্ডার ছিল, সেটা হচ্ছে ইট ইজ হেয়ার বাই ডিসমিস্ট৷ সেই ক্ষেত্রে আমরা ধরে নেব পূর্ণাঙ্গ রায় বের না হওয়া পর্যন্ত যে রিভিউ করা যাবে না৷ পূর্ণাঙ্গ রায় যদি অন্য কিছু থাকে সেটা আলাদা, কিন্তু এই রিভিউয়ের ব্যাপারে তার একটা নজির আছে, আমরা ধরবো রিভিউ মহামান্য আপিল বিভাগ দেননি৷ সেক্ষেত্রে আমরা জেলকর্তৃপক্ষকে বলবো ফাঁসি দেয়ার রায় কার্যকর করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো যে প্রস্তুতি নিতে হবে সেই প্রস্তুতি নেয়ার শুরু করতে৷আইনমন্ত্রী বলেন, যেদিন তার আপিলের রায় খারিজ হয়েছে সেই দিন থেকে ৭দিনের মধ্যে রিভিউ করার সময় গণনা শুরু হয়েছে৷

তিনি বলেন, জেলকোডের সময় কখন থেকে ধরা হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ধারনা যে সময় থেকে তিনি জেনেছেন সেই ৭দিন থেকে সময় গণনা শুরু হয়েছে৷ এমন কিছু করা হবে না যেটা আইনের বাইরে যায়৷ আমার এখতিয়ারের বাইরে আমি যেতে পারি না৷ আমার এখতিয়ারের বাইরে সেই কথাটি বলতে পারি না৷

রায়ের কপি কবে পাওয়া যাবে সাংবাদিকদের এ টওশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়টি আমি জানি না৷ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কথা কোথাও লেখা নেই৷ আপনি মানেন আর না মানেন কোথাও পূর্ণাঙ্গ রায়ের কথা লেখা নেই৷ যেটা আছে সেটা অর্ডারের কথা৷ সট অর্ডারের কথা, সট অর্ডারটা পেলেই হয়ে যাবে৷যে সময় থেকে তিনি জেনেছেন সেই ৭দিন সময় গণনা শুরু হয়েছে৷ কিন্তু যখন পর্যন্ত আইনানুগভাবে যে মুর্হূত কামারুজ্জামান জানবেন উনাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, আপিল বিভাগ রায় দিয়ে দিয়েছে সেই মুহূর্ত থেকে মার্সি পিটিশন করার সময় গণনা শুরু হবে৷ তার কারণ হচ্ছে সংবিধানে এ রকম কোনো সময় দেয়া নেই৷

এদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন৷বুধবার সচিবালয়ে বেলা ১২টা থেকে ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত এ বৈঠক চলে৷ সচিবালয়ের একটি বিশেষ সূত্র এ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে৷এর আগে কামরুজ্জামানকে মঙ্গলবার কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে৷ আজ কামারুাজ্জামানের স্বজনেরা তার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাত্‍ করেছেন৷

অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা৷ বুধবার নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত৷ জেল কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখবে না, দেখবে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে৷ ট্রাইবু্যনালে একটি পূর্ণাঙ্গ রায় হয়েই আছে৷ আপিল বিভাগ সেটাকেই বহাল রেখেছে৷ সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের কী প্রয়োজন?

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আপিল বিভাগের রায়েও মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সামনে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ থাকলেও রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) কোনো সুযোগ নেই বলেও মত দেন তিনি৷

কামারুজ্জামানের রায় রিভিউয়ের আবেদন করা হবে জানিয়ে তার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন সংবাদ সম্মেলন করার ঘন্টাখানেক পর সাংবাদিকদের সামনে অ্যাটর্নি জেনারেল৷

বুধবার হাই কোর্টে আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব বলেন, কামারুজ্জামানের আপিলে দ্বিধাবিভক্ত রায়ে মৃতু্যদণ্ড বহাল থেকেছে৷ সংবিধানের ১০৫ ধারা অনুযায়ী এ রায় রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে৷যদি ১০৫ ধারার ক্ষমতা এই বিচারের ক্ষেত্রে কার্যকর না-ও হয়, তবুও ন্যায় বিচারের স্বার্থে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ আবেদন শুনবেন বলে মনে করি৷

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে সংবিধানের ৪৭(ক) ধারাটি পড়ে শোনান৷পুরোটাই আমি পড়ছি৷ যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৪৭ অনুচ্ছেদে তিন দফায় বর্ণিত কোনো আইন পপ্রযাজ্য হয় না, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের ১ ও ৩ দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদে নিশ্চিতকৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য হবে না৷ এখানে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলোর কথা বলা হয়েছে৷২- তে বলা আছে,এছাড়াও এ সংবিধানে যা বলা হয়েছে তা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় বর্ণিত কোনো আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানে বর্ণিত কোনো অধিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার অধিকার তাদের থাকবে না৷ ৪৭ এর ৩ ধারা হলো- মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে যারা অভিযুক্ত তাদের জন্য৷

এদিকে, জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে মঙ্গলবার কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনার পর থেকেই প্রশ্নটি উঠে আসছে,কখন কার্যকর হচ্ছে ফাঁসি?বুধবার এ নিয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেনের সংবাদ সম্মেলন এবং পাল্টা হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য, স্বজনদের কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত্‍ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের বৈঠক- এসব ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে, কামরুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর সময়ের ব্যাপার মাত্র৷

এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে৷ সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি কোন কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন৷ তবে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কামরুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের৷জানা গেছে,সোমবার রাতে কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসির মহড়া দেয়৷ ওই মহড়া দেয়ার পরেই কামারুজ্জামানকে ঢাকায় আনা হয়৷

বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন তার স্ত্রী, ছেলে- মেয়ে, চাচাসহ ১০ স্বজন৷ বুধবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৮ মিনিট পর্যন্ত তার কারাগারের ভেতরে সাক্ষাত্‍ করেন৷ ওই ঘটনার পরেই মূলত ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে নানা ডালপালা ছড়ায়৷ তবে সিনিয়র জেলসুপার বলেন, আমরা তাদের (স্বজন) সাক্ষাত্‍ করার জন্য ডাকিনি৷ নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে তারা সাক্ষাত্‍ করতে এসেছেন৷যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাকে ঢাকা কারাগারে স্থানান্তর নিয়ে তাদের উদ্বেগ থাকলেও এই দেখাকে শেষ ভাবছেন না৷

বুধবার ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১১টা ৮ মিনিট পর্যন্ত আধা ঘন্টার জন্য দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয় তাদের৷এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী নুরুন্নাহার, চার ছেলে হাসান ইকবাল, হাসান আহমেদ, হাসান ইকরাম, হাসান ঈমাম, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাই নাজিরুজ্জামান ও আবদুল্লাহ আল মাহাদী, বোন মোহসীনা বেগম ও ভাগ্নে আবদুল আলিম৷

দেখা করে বেরিয়ে এলে কামারুজ্জামানের চতুর্থ ছেলে হাসান ইমামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা এই দেখাকে শেষ দেখা মনে করছেন কিনা?জবাবে তিনি বলেন, না শেষ সাক্ষাত্‍ হবে কেন? এটা নিয়মিত দেখা৷ কাশিমপুর কারাগারে থাকতে আমরা নিয়মিত দেখা করতাম৷ গত ঈদেও দেখা করেছি৷ তাই আজ দেখা করলাম৷আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখার পর মঙ্গলবার কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয় কামারুজ্জামানকে৷

আপিল বিভাগ রায়:গত সোমবার মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে শেরপুরের জামাত-আলবদর নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃতু্যদণ্ডাদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷গত বছরের ৯মে ময়মনসিংহের আল-বদর প্রধান কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল৷ রায়ে হত্যা ও গণহত্যার দুটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়৷ অন্য দুটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরেকটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷

গত বছরের ৬ জুন ট্রাইবু্যনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কামারুজ্জামান৷ আর ট্রাইবু্যনালে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় আপিল করেনি৷সুপ্রিম কোর্টে আপিল দাখিলের পর চলতি বছর ৫ জুন শুনানি শুরু হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হয়৷ এরপর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে আপিল বিভাগ৷আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে করা তৃতীয় আপিলের রায় এটি৷