Asura

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ নভেম্বর: মঙ্গলবার ছিল ১০ই মহররম৷পবিত্র আশুরা৷ এদিন ইয়াজিদের চক্রান্তে পাষণ্ড সিমারের হাতে ইমাম হোসেন (রা.) শহীদ হন৷ প্রতিবছরের এই দিনে কারবালার বিষাদময় ঘটনাকে স্মরণ করে তাজিয়া মিছিল বের করে শিয়া সমপ্রদায়৷ হায় হোসেন, হায় হোসেন ধ্বনিতে শোকাবহ হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ৷ তাজিয়া মিছিল যেন স্মরণ করিয়ে দেয় কারবালার সেই শোকাবহ ঘটনার কথা৷ এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে শোকানুষ্ঠান পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা৷

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু করে শিয়া সমপ্রদায়ের ধর্মানুসরীরা৷ মিছিলটি দুপুর আড়াইটার দিকে ধানমন্ডি-২ নম্বরের লেক এলাকায় গিয়ে শেষ হয়৷মিছিলে অংশগ্রহণকারীর তথ্যমতে, সকাল ১০টার দিকে হোসনি দালান থেকে আশুরার মিছিল শুরু হয়ে বকশিবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে শেষ হয়েছে৷ এছাড়াও পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মপুরের ইমামবাড়া থেকে আশুরার মিছিল বের হয়৷

তাজিয়া মিছিলে দেখা যায়, কেউ কেউ নিজেদের বুক চাপড়ে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে মাতম করছে৷ অনেকে ছড়া (আরবি লেখা ছোট পতাকা) হাতে নিয়ে যাচ্ছেন৷ আবার অনেকে আলাম (আরবি লেখা বড় পতাকা) বহন করছেন৷ যারা ছড়া ও আলাম বহন করছেন তাদের ভেস্তা বলা হয়৷এর আগে, সোমবার রাতে হোসনি দালানের ইমাম বাড়া থেকে তাজিয়া মিছিল বের হয়ে নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার, রহমতগঞ্জ, বকশিবাজার হয়ে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে বিবিকা রওজায় শেষ হয়৷ বিবিকা রওজা থেকে মিছিলটি আবার বের হয়ে মঙ্গলবার ভোরের আগেই হোসনি দালানে এসে শেষ হয়৷

মুখে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনি সহযোগে কোমরে বাঁধা ঘুঙুর আর সারাদেহে গাগরির উপরে ক্রস আকৃতির মোড়ানো কাপড় পরিধান করে প্রায় প্রত্যেকের হাতে লাল নিশান (আলাম) নিয়ে শুরু হয় তাজিয়া মিছিল৷৷ এছাড়াও মোহাম্মপুর,পল্টন, মগবাজার থেকে আশুরার মিছিল বের হয়৷ এসব মিছিলে কেউ কেউ নিজেদের বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করতে থাকে৷প্রতিবারের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা পালন করেছে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পের অধিবাসীরা৷

তবে সেটা কেবলই শোকের মাতম নয়৷ মোহাম্মদপুরবাসী সুন্নী সমপ্রদায়ের লোকেরা মনে করেন এটি উত্‍সবের আবহে ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করা৷ ইতিহাসের এই দিনে আছে শোক ও উত্‍সব৷ মোহাম্মদপুরের টাউন হল (বিহারী) ক্যাম্পের খলিফা মো. জমির উদ্দিন জানান, মহামানবের মহাপ্রয়াণের দিনটি একই সঙ্গে শোক ও উত্‍সব৷ বলা হয় শ্রদ্ধা-উত্‍সব৷

তিনি বলেন, এই দিনটি শুধুই হোসেনকে (রা.) স্মরণ নয় বরং যুগে যুগে মহরমের ১০ তারিখ ঘটা নানা ঘটনার শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মৃতিচারণ করা৷ এই দিনে বেদনাময় ঘটনার পাশাপাশি অনেক আনন্দের ঘটনাও আছে তবে যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে আদরের সন্তান হোসেনের (রা.) মহাপ্রয়াণ হয়েছে সে কারণে শোকের আবহটা বেশি থাকে৷এর আগে রাত ২টার দিকে ইয়া হোসেন ইয়া হোসেন এই ধ্বনিতে হোসেনী দালান এলাকা থেকে আরবী লেখায় সজ্জিত বিভিন্ন রংয়ের পতাকা নিয়ে মিছিল বের করে শিয়া সমপ্রদায়৷ ঘোড়ার গাড়ী আর শিশু আসগরের প্রতীকী দোলনার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় ৬১ হিজরির ফোরাত নদীর তীরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা৷ তাজিয়া মিছিলটি বিভিন্ন গজল গেয়ে নিজাম উদ্দিন রোড দিয়ে লালবাগ হয়ে আবার হোসেনি দালানে ফিরে যায়৷

একই রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকেও আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের করেন শিয়া সমপ্রদায়ের লোকজন৷এদিকে আশুরা উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডি, লালবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় বড় তাজিয়া মিছিলটি বের হওয়ার কথা রয়েছে৷উল্লেখ্য১০ মহররম৷ পবিত্র আশুরা৷ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে একটি অতিমর্যাদা সম্পন্ন দিন৷ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন৷ ১৩৭৫ বছর আগে হিজরি ৬১ সালে এই দিনে কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল বিশ্ব ইতিহাসের বিয়োগান্তক ঘটনা৷ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে৷

মুসলিম বিশ্বে কারবালার শোকাবহ ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়৷ আশুরা অন্যায় ও অসত্যের বিরম্নদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণার উত্‍স হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে৷

হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রাঃ) কারবালার ফোরাত নদীর তীরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন৷এই শোক ও স্মৃতিকে স্মরণ করে আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়৷ কর্মসূচির মধ্যে ছিল তাজিয়া মিছিল, বিশেষ মোনাজাত, দোয়া মাহফিল ও কোরআন খানি৷ দিনটি উপলক্ষে আজ ছিল সরকারি ছুটি৷এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন৷

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধন প্রকাশ করে৷ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতার পবিত্র আশুরার তাত্‍পর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সমপ্রচার করে৷পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে৷কারবালার বিষাদময় ঘটনাকে স্মরণ করে প্রতিবারের মতো রাজধানীতে মঙ্গলবারও তাজিয়া মিছিল বের করে শিয়া সমপ্রদায় মানুষ৷ ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে শোকাবহ হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ৷

এদিন সকালে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের হোসনি দালান থেকে সকাল ১০টার দিকে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়৷ মিছিলটি বকশিবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে শেষ হয়েছে৷ এছাড়াও মোহাম্মপুর,পল্টন, মগবাজার থেকে আশুরার মিছিল বের হয়৷ এসব মিছিলে কেউ কেউ নিজেদের বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করতে থাকে৷এর আগে গতকাল সোমবার রাতেও হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের হয়ে নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার, রহমতগঞ্জ, বকশিবাজার হয়ে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে বিবিকা রওজায় গিয়ে শেষ হয়৷ বিবিকা রওজা থেকে মিছিলটি আবার বের হয়ে মঙ্গলবার ভোরের আগেই হোসনি দালানে এসে শেষ হয়৷