দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ নভেম্বর: সরকার ভয় পেয়ে পুলিশ দিয়ে বিএনপির অহিংস আন্দোলনকে সহিংস করে তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস৷মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে ৮ নভেম্বরের জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন৷ সভায় মহানগরের বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
সহিংসতার দিকে ঠেলে না দিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দখলদার সরকারকে হটানো হবে৷তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সব রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী৷এ সরকার অবৈধ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, পতনের লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷
অহিংস আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটানো হবে এমন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস সরকারকে স্বাভাবিক আন্দোলনে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানান৷তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, জনগণের টাকা দিয়ে জনগণকে মারতে ব্রাজিল থেকে যত বুলেটই নিয়ে আসেন না কেন জনগণ কোনো দিনই আপনাদের মেনে নেবে না৷ অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে হটানো হবে,অন্য কোনো পন্থায় নয়৷ কাজেই বিএনপির স্বাভাবিক আন্দোলনে বাধা দেবেন না৷
আব্বাস বলেন, বিএপির আন্দোলন অহিংস কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপির অহিংস আন্দোলনকে ভয় পেয়ে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ দেশকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথায় ও বক্তব্যে না পারলেও আন্দোলনে পারবো না তা ঠিক নয়৷ আন্দোলনের মাধ্যমেই দখলদার সরকারকে বাংলার মাটিতে টিকতে দেয়া হবে না ৷
জিয়ার নির্দেশে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে আব্বাস বলেন, সৈয়দ আশরাফকে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে জানতাম৷ কিন্তু দুঃখ লাগে যখন তার মতো নেতা মিথ্যা বলেন৷ জিয়া তখন জেলে ছিলেন, তাহলে কী করে চার নেতাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন তিনি?
মির্জা আব্বাস বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই৷ আমরা বলতে চাই ভোটারবিহীন নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাটা কতটা মজাদার যে, ক্ষমতার সুখের মখমলের গদি ছাড়তে মন চায় না৷ তবে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখে মধ্যবর্তী নির্বাচন না দিলে তাদের যে মধ্যবর্তী সর্বনাশের সম্ভাবনা হতে পারে সেজন্য আওয়ামী নেতাদের সচেতনতা থাকা উচিত৷ নিজেদের অবৈধ সত্তা নিয়ে সবকিছু জেনে বুঝে নিশ্চিন্তে নিন্দ্রামগ্ন থাকতে পারবেন না৷ দেশে ৭৪-এর মতো ৫ জানুয়ারি ষড়যন্ত্র হয়েছিল’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের দ্বিতীয় বাকশাল কায়েম করেছেন শেখ হাসিনা৷ তিনি ষড়যন্ত্রের ঘসেটি বেগম৷নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী নির্জ্জলা মিথ্যাচার করে চলেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-৭৪ এর দুর্ভিক্ষের মতো ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বানচাল করতেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল৷ নিষ্ঠুর গণধিকৃত শাসকরা তাদের অপকর্মের সাফাই গাইতে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়ায়৷ নিজেদের ব্যর্থতা, অনাচার, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বেপরোয়া লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আত্মসাত্, খুন, জখম এবং বিভত্স সন্ত্রাসের ফলে সৃষ্ট দেশব্যাপী নৈরাজ্যকে ঢাকা দিতেই ষড়যন্ত্র, বিদেশী চক্রান্ত ইত্যাদি শব্দগুলির চর্বিতচর্বণ করেন৷ অথচ শুধু দেশেই নয়, ১৯৭৪ সালের মহা দুর্ভিক্ষের ঘটনাবলী বিদেশী সকল সংবাদ মাধ্যমেই ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে৷ শুধু বাংলাদেশের গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি৷ ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?’
তিনি আরো বলেন, সেই সম্পর্কে বিশ্বের গণমাধ্যমে উঠে এসেছে-ডাস্টবিনে মানুষ ও অন্যান্য ইতর প্রাণীর একসাথে আহারের দৃশ্য৷ আর পথে প্রান্তরে অনাহারে ধুকতে ধুকতে মারা যাওয়া মানুষের লাশ৷ মাছধরা জাল পরে নারীর লজ্জা নিবারণের দৃশ্য৷ তিনি আরো বলেন, সেকল গণমাধ্যমেই তত্কালীন সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, মানুষের ওপর প্রয়োজনে অবৈধ অস্ত্র প্রয়োগ, ক্ষমতাসীনদের মজুতদারী, লাইসেন্স পারমিটবাজী, চোরাচালানী, কালোবাজারী ইত্যাদিকে দায়ী করে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে৷