দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৩ নভেম্বর: মধ্যবর্তী নির্বাচন না দিলে আওয়ামী লীগের মধ্যবর্তী সর্বনাশ হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনেবিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন৷
রিজভী বলেন,সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই৷ আমরা বলতে চাই ভোটারবিহীন নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাটা কতটা মজাদার যে, ক্ষমতার সুখের মখমলের গদি ছাড়তে মন চায় না৷ তবে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখে মধ্যবর্তী নির্বাচন না দিলে তাদের যে মধ্যবর্তী সর্বনাশের সম্ভাবনা হতে পারে সেজন্য আওয়ামী নেতাদের সচেতনতা থাকা উচিত৷ নিজেদের অবৈধ সত্তা নিয়ে সবকিছু জেনে বুঝে নিশ্চিন্তে নিন্দ্রামগ্ন থাকতে পারবেন না৷ দেশে ৭৪-এর মতো ৫ জানুয়ারি ষড়যন্ত্র হয়েছিল’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের দ্বিতীয় বাকশাল কায়েম করেছেন শেখ হাসিনা৷ তিনি ষড়যন্ত্রের ঘসেটি বেগম৷নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী নির্জ্জলা মিথ্যাচার করে চলেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
তিনি অভিযোগ করেছেন, নাটোরে খালেদা জিয়ার সমাবেশে স্থানীয় একজন শিল্পী গান গাওয়ার অপরাধে আওয়ামী লীগের লোকজন তার ওপর হামলা করেছে৷রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি৷ এজন্য দলটি বারবার েেহাঁচট খেয়েছে ও মুখ থুবড়ে পড়েছে৷তিনি আওয়ামী লীগকে পথে, ঘাটে, নগরে, বন্দরে ও গ্রাম-গঞ্জে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান৷
রিজভী বলেন,প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-৭৪ এর দুর্ভিক্ষের মতো ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বানচাল করতেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল৷ নিষ্ঠুর গণধিকৃত শাসকরা তাদের অপকর্মের সাফাই গাইতে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়ায়৷ নিজেদের ব্যর্থতা, অনাচার, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বেপরোয়া লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আত্মসাত্, খুন, জখম এবং বিভত্স সন্ত্রাসের ফলে সৃষ্ট দেশব্যাপী নৈরাজ্যকে ঢাকা দিতেই ষড়যন্ত্র, বিদেশী চক্রান্ত ইত্যাদি শব্দগুলির চর্বিতচর্বণ করেন৷ অথচ শুধু দেশেই নয়, ১৯৭৪ সালের মহা দুর্ভিক্ষের ঘটনাবলী বিদেশী সকল সংবাদ মাধ্যমেই ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে৷ শুধু বাংলাদেশের গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি৷ ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?’
তিনি বলেন, সেই সম্পর্কে বিশ্বের গণমাধ্যমে উঠে এসেছে-ডাস্টবিনে মানুষ ও অন্যান্য ইতর প্রাণীর একসাথে আহারের দৃশ্য৷ আর পথে প্রান্তরে অনাহারে ধুকতে ধুকতে মারা যাওয়া মানুষের লাশ৷ মাছধরা জাল পরে নারীর লজ্জা নিবারণের দৃশ্য৷ তিনি আরো বলেন, সেকল গণমাধ্যমেই তত্কালীন সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, মানুষের ওপর প্রয়োজনে অবৈধ অস্ত্র প্রয়োগ, ক্ষমতাসীনদের মজুতদারী, লাইসেন্স পারমিটবাজী, চোরাচালানী, কালোবাজারী ইত্যাদিকে দায়ী করে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে৷
রিজভী বলেন, তিনিই চক্রান্ত করে ব্যাপকহারে গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে, নিষ্ঠুর পুলিশী দমনের এক বিভত্সতায় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে দ্বিতীয় বাকশাল গঠন করেছেন, তিনিই এখন ৭৪ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং ৫ জানুয়ারীর অবৈধ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই৷ আমরা বলতে চাই ভোটারবিহীন নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাটা এতোটাই মজাদার যে, ক্ষমতার সুখের মখমলের গদি ছাড়তে তাদের মন চায় না৷ তবে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখে মধ্যবর্তী নির্বাচন না দিলে তাদের যে মধ্যবর্তী সর্বনাশের সম্ভাবনা হতে পারে সে সম্পর্কেও আওয়ামী নেতাদের সচেতনতা থাকা উচিত্৷ নিজেদের অবৈধ সত্তা নিয়ে সবকিছু জেনে বুঝে নিশ্চিন্তে নিদ্রামগ্ন থাকতে পারবেন না৷ সরকার একজন ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর গঠন হয়না, জনগণের ‘জেনেরেল উইল’ হচ্ছে চুড়ান্ত, কারণ এই সরকার জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধের সরকার৷ ক্ষমতালিপসা তলে তলে যতই প্রসারিত করবে ততই তাদের বিপদের সম্ভাবনা থাকবে৷ জনগণকে বন্দী করে কেউ কোনদিন শান্তিতে থাকতে পারেনা৷
তিনি বলেন, হরতালবিরোধী অবস্থান নিয়ে এক বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন সম্পর্কে বিরুপ মন্ত্রব্য করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা৷ নাটোরের জনসভায় শেখ হাসিনাকে হিটলার বলায় তিনি খুব উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷ ৫ জানুয়ারীর আগে পরে নির্বিচারে গুলি করে হত্যাকারীদের কী বলে অভিহিত করা হবে? সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের যারা গুম করে, সাংবাদিক সাগর-রুনীর হত্যার পর এই হত্যাকান্ডকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করা, মানুষ হত্যা করে পেটের মধ্যে যারা ইট ঢুকিয়ে দিয়ে ডুবিয়ে দেয় সেই তাদের জন্য যখন জেলখানায় জামাই আদরে রাখা হয়, টেলিভিশন, ফ্রিজ পাঠানো হয় তখন এই সমস্ত নরপিশাচদের পৃষ্ঠপোষকদের কী বলে অভিহিত করা হবে ? বিএনপি নেতাদের হত্যাকারী দন্ডপ্রাপ্ত যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের যারা অনায়াসে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাইয়ে দেয় তাদের কী বলে অভিহিত করা হবে ?
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি বলেই বারবার আছাড় খেয়েছে৷ মিথ্যা প্রবঞ্চনা দিয়ে ক্ষমতায় এসে অবিরাম গণবিরোধী কাজ করে এরা দ্রুত গণশত্রুতে পরিণত হয়৷ এখনও তারা তাদের অতীতের হিংসাশ্রয়ী অপকর্মের অন্ধকার পথে হাঁটছে৷ আর এদের কারণেই এখন সবচেয়ে অন্ধকারতম সময় গ্রাস করেছে সমগ্র জনজীবনকে৷