দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৩ নভেম্বর: যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জ্মানের প্রাণদণ্ডের রায় আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ সোমবার দুপুরে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী৷ ট্রাইবু্যনালের দেওয়া মৃতু্যদণ্ডের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের আপিলের রায়ে সোমবার আপিল বিভাগ বিচারিক আদালতের সাজাই বহাল রাখে৷ চূড়ান্ত এই রায়ের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হয়ে যায় একাত্তরের বদর নেতা কামারুজ্জামানের ভাগ্য৷ এখন আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে তা ট্রাইবু্যনালে পাঠানো হবে৷ সেটি হাতে পেলে নিয়ম অনুযায়ী মৃতু্য পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইবু্যনাল৷ এরপর তা কার্যকর করবে সরকার৷ এক্ষেত্রে সরকার চাইলে কারাবিধিও (জেল কোড) অনুসরণ করতে পারে৷
কারাবিধি অনুযায়ী প্রত্যেক মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পাবেন৷ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর জেল সুপার তা বন্দিকে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে তার মত চাইবেন৷ সাত দিনের মধ্যে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে৷ এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, মৃতু্যদপ্রাপ্ত কাউকে ক্ষমা করবেন কি-না তা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার৷ এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হবে না৷তিনি বলেন, কারো মৃতু্যদণ্ড হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবার জন্য সাতদিন সময় থাকে৷ এ সময়ে কেউ ক্ষমা না চাইলে বুঝে নিতে হবে সে ক্ষমা চাইবে না৷ ছয় দিনের দিনও তিনি চাইলে ক্ষমা চাইতে পারেন, এমন আইন আছে৷ অবশ্য ট্রাইবু্যনাল আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রে কারাবিধি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক নয় বলে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি বাস্তবায়নের আগে মত দিয়েছিল সরকার৷বনানীতে নিজের বাসায় এই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই রায় কার্যকর করা হবে৷একাত্তরে আলবদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে গত বছর ৯ মে মৃতু্যদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল৷ এর দেড় বছরের মাথায় তার মামলার চূড়ান্ত রায় এলো৷
এদিকে, আপিলের রায়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম; রিভিউ প্রশ্নে তিনি আছেন আগের অবস্থানেই৷ সোমবার আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কখন বা কবে ফাঁসি কার্যকর হবে তা সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়৷ রিভিউ করার আর কোনো সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি না৷ এর আগে কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রিভিউ করেছিল, তা খারিজ করে দেয় আদালত৷ এক্ষেত্রে রিভিউয়ের আর কোনো স্কোপ নেই৷ সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আসামিপক্ষ রিভিউ করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তাও নাকচ করে দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা৷ রাষ্ট্রপক্ষে তিনিই এ আপিল মামলা মোকাবেলা করেন৷তিনি বলেন, বিশেষ আইনে এ বিচার হচ্ছে৷ সাংবিধানিকভাবে এ আইন প্রটেকটেড৷ ১০৫ আর্টিকেল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেছিলাম, এখনও তা বলছি৷ কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, আর রিভিউ চলবে না৷ রায় পাওয়ার পর বাস্তবায়ন পর্যন্ত মাঝের সময়টি জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের বিষয়৷
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, আসামিপক্ষের নানা ধরনের আবেদন থাকতে পারে৷ এসব আবেদনের কিছু আইনি ভিত্তি থাকতেও পারে, নাও পারে৷ এ নিয়ে ‘চিন্তার কিছু’ নেই৷চূড়ান্ত রায়ের সংক্ষিপ্ত কপি পাওয়ার জন্যে তিনিও আবেদন করেছেন জানিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, এ রায়ের ফাঁসি কার্যকর হবে ট্রাইবু্যনাল আইন অনুযায়ী৷ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি৷ আমাদের জন্য পরম স্বস্তিদায়ক৷ মৃতু্যদণ্ড বহাল রয়েছে এতেই আমরা স্বস্তি পেয়েছি৷ সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর জনগণ, মুক্তিকামী মানুষ, যারা আইনের শাসন চান- তারা এবং ক্ষতিগ্রস্তরা এ রায়ে স্বস্তি পেয়েছে৷আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা আদালত অবমাননার শামিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷হরতাল হতে পারে রাজনৈতিক ইস্যুতে৷ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা চরম ধৃষ্টতা৷ আদালতের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ না থাকার প্রমাণ৷ সম্পূর্ণভাবে আদালত অবমাননা৷ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ সোমবার কামারুজ্জামানের আপিলের রায় প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশটি পাঠানো হয়৷ মামলায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদিন এ নোটিশ পাঠান৷
একই সঙ্গে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন রিভিউ আবেদন দায়ের করার জন্য আপিল বিভাগের রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ারও আবেদন করেন৷রিভিউ আবেদনের নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম৷ সময় সুযোগ পেলে রিভিউ আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম৷আপিলের রায় ঘোষণার পর সোমবার হাইকোর্টের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি৷তাজুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামান ন্যায় বিচার পাননি, আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিল৷ কিন্তু আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি৷ যেহেতু সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দিয়েছে তা মানতে হবে এ কথা উল্লেখ করে তাজুল আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রিভিউ করার অধিকার আমাদের আছে৷ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর পূণর্বিবেচনার জন্য রিভিউ করা হবে৷
প্রসঙ্গত,একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের দেয়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷ সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে এ রায় ঘোষণা করেন৷ বেঞ্চের বাকি চার সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷রায়ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলাম৷