দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২নভেম্বর: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও সময় নিয়েছে র্যাব৷রোববার আলোচিত এই মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ২৯তম বার পিছিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে আগামী ৯ ডিসেম্বর নতুন দিন ঠিক করেছেন৷এই আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক হুমায়ুন কবির এই তথ্য নিশ্চিত করেন৷
এদিকে বাসার দুই প্রহরী পলাশ রুদ্র পাল ও এনাম আহম্মেদ ওরফে হুমায়ুন কবীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আবার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের যে আবেদন করেছিলেন, গত বৃহস্পতিবার তার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি৷হরতালের কারণে কারাগার থেকে পলাশ ও এনামকে আদালতে হাজির করতে পুলিশ না পারায় আগামী বৃহস্পতিবার এই আবেদনের শুনানির জন্য দিন রাখা হয়েছে৷
এই মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের ইনভেস্টিগেশন এবং ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি ওয়ারেছ আলী মিয়া গত ২১ অক্টোবর রিমান্ডের এই আবেদন করেছিলেন৷উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাব তদন্তের দায়িত্ব নিলেও দেড় বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের কোনও কূল-কিনারা করতে পারেনি৷২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের একটি বাড়িতে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি৷পলাশ ও এনাম ওই এপার্টমেন্টের পাহারাদার ছিলেন৷ পলাশকে ঘটনার পরপরই এবং এনামকে পরে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷
নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন উদ্ধৃত করে ওই আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, পলাশ ঘটনার সময় অর্থাত্ রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওই বাসায় প্রহরী হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন৷ আনুমানিক সকাল ৫ টা-সোয়া ৫টার দিকে অ্যাপার্টমেন্ট মালিক নূরুন্নবী কান্নার আওয়াজ পেয়ে এই প্রহরীকে ফোন করেছিলেন৷ পলাশ তখন নূরুন্নবীকে বলেছিলেন, কান্নার আওয়াজ অন্য এপার্টমেন্ট থেকে শোনা গেছে৷
প্রকৃতপক্ষে পলাশ সত্য গোপন করে এ তথ্য পরিবেশন করেন বলে তদন্তে জানা যায়৷ তাছাড়া অন্য সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসা করেও বেশ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে৷ আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগকারী, তাদের নিজেদের আত্মীয় -স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহযোগী আসামিদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি৷গত ১৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত তাকে কিছু পরামর্শ দেয়৷ এর মধ্যে দুই দারোয়ানকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টিও ছিল৷সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের পর তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷
কিন্তু তারপর পুলিশের হাত ঘুরে তদন্তভার র্যাবের ওপর এলেও দুই বছরেও কয়েকজন গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া বড় কোনও অগ্রগতি হয়নি৷ শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলম এবং র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জাফর উল্লাহর হাত ঘুরে ওয়ারেছ আলী মামলাটি তদন্ত করছেন৷মামলাটি দীর্ঘ সময় তদন্ত করেছেন র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জাফর উল্লাহ৷ সমপ্রতি তিনি জাতিসংঘ মিশনের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের বাইরে গেছেন৷
সাহারা খাতুনের পর মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর শিগগিরই হত্যারহস্য উদ্ঘাটনের ঘোষণা দেন৷
এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এক চিকিত্সককে হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার দেখানো হয় রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান এবং বাড়ির দারোয়ান পলাশ ও এনামকে এই হত্যামামলায়৷