দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২নভেম্বর : মীর কাসেম ষড়যন্ত্রকারী এবং খুনী৷নৃশংসভাবে নিরস্ত্র মানুষকে খুন করার রক্ত যার হাতে লেগে আছে সেও বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল৷আমরা সেইসব দিন পার করে এসে আজকে তাদেরকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছি৷ এটা আমাদের জন্য অনেক প্রাপ্তি৷ আমরা এ রায় বাস্তবায়নের জন্য যতটুকু চেষ্টা করা দরকার সবটুকুই করবো৷রোববার মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷
রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারবিভাগ স্বাধীন৷ আমি প্রসিকিউশনের যে বক্তব্য শুনেছি তাতে আমি এটুকু আঁচ করতে পেরেছি যে, এই মামলায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন যথেষ্ট শক্ত ভিত্তিতে এ সাজা আদায় করেছে৷ সেক্ষেত্রে আমি বলবো প্রসিকিউশন যে সাজা আদায়ের চেষ্টা করেছে এর ধারাবাহিকতায় অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন৷ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর শুরা সদস্য মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী বলেন, রায়ে আমি খুবই আনন্দিত৷
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচাওে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আনিসুল হক বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা হিংস্র বিরোধিতা করেছিল এতদিনেও বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দিতে পারিনি৷ এখন আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের (যুদ্ধাপরাধী) আজকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দোষী সাব্যস্ত করে আমরা শাস্তি দিতে পারছি-এটা হচ্ছে আমাদের বিরাট প্রাপ্তি৷ মীর কাসেমের রায় শিগগির কার্যকরের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি মনে করি সত্যি সত্যি এসব পাপীদের রায় কার্যকর খুব শিগগিরই হোক- সেই আশায় থাকব৷ পরে গুলশানের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন, কিন্তু আমি প্রসিকিউশনের যে বক্তব্য শুনেছি তাতে আমি যেটুকু আঁচ করতে পেরেছি তাতে মনে হয়েছে-মীর কাসেমের মামলাটা তারা যথেষ্ট শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে সাজা আদায় করেছে৷ সেক্ষেত্রে আমি বলব এই সাজা আদায়ে প্রসিকিউশন যে চেষ্টা করেছে এটার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং এই রায় বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকু চেষ্টা করার ততটুকু করব৷
একাত্তরে চট্টগ্রামে নৃশংসতা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী আলবদর, রাজাকার ও আল শামস বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মীর কাসেম আলী৷ স্বাধীন বাংলাদেশে তার যোগানো অর্থে জামায়াতে ইসলামী শক্ত আর্থিক ভিত্তি পায়৷ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থত্ মজলিসে শুরার এই সদস্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ১৪টি অভিযোগের আটটি সন্দেহাতীতভাবে ও দুটি আংশিক প্রমাণিত হয়েছে৷ ওই দুটি অভিযোগেই তার ফাঁসির রায় এসেছে৷ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার মত মামলা প্রসিকিউশন উপস্থাপন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী৷তবে মৃতু্যদণ্ডের সাজা কমিয়ে আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃতু্য কারাদণ্ড দিলেও প্রসিকিউশনকে ব্যর্থ বলতে নারাজ তিনি৷
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় নিয়ে নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কথা বলেছেন৷ ইনভেস্টিগেশনে যারা ছিলেন তারাও আজ (রোববার) কথা বলেছেন৷ তারা বলেছেন, সাক্ষ্য প্রমাণের যতটুকু প্রয়োজন ছিল সেখানে হয়ত কিছুটা ঘাটতি ছিল৷ ঘাটতি কোথাকার ছিল সেটা হচ্ছে ফাঁসি পাওয়ার মত মামলা হয়তো উনারা সাজাতে পারেননি- তৈরি করতে পারেননি৷ তৈরি করা মানে হচ্ছে- প্রসিকিউশনকে মামলার সাক্ষী-সাবুত প্রস্তুত করে দিতে হয়৷ সেই ক্ষেত্রে আমি বলব- সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার মত মামলা (সাঈদী) ছিল, কিন্তু সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার মত মামলা করা হয়েছিল কি না সেটা প্রসিকিউশন বলছেন কিছু দুর্বলতা ছিল৷ সেটাকে যখন সর্বোচ্চ আদালত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করে রায় দিয়েছেন সেটা দুঃখিত হলেও আমরা তা মেনে নিতে পারিনি৷
সাঈদীর সর্বোচ্চ সাজা আদায় করতে না পারায় প্রসিকিউশন ব্যর্থ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দ্যাখেন, কতগুলো মামলা উনারা করেছেন? এরমধ্যে একটি মামলায় আশা অনুযায়ী কিছুটা প্রাপ্তি হয়নি৷ এরপরেও যদি তাদের ব্যর্থ বলা হয় তাহলে আমার মনে হয় তাদের প্রতি অবিচার করা হবে৷