দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২নভেম্বর : সোমবার ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস৷ ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের সিপাহশালার ও সংগঠক এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় জ্যোতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যনত্মরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷
জাতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়ের দিবসটি পালন করবে৷ শোকাবহ দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল সংগঠনের উদ্যোগে সারাদেশে পালিত হবে৷ দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন বিসত্মারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷ কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়াদর্ী উদ্যানে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে৷ এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা৷ সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী৷
এর আগে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কাযর্ালয়সহ দেশের সর্বত্র শাখা কাযর্ালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পাঘর্্য অর্পণ করা হবে৷ সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত করা হবে৷৷ রাজশাহীতে এএইচএম কামারুজ্জামান-এর কবরেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরূপ শ্রদ্ধা জানানো হবে৷
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন৷ বিবৃতিতে তারা শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান৷১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করার পর এই চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়৷
১৫ আগষ্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সেলের অভ্যনত্মরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়৷ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তত্কালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোসত্মাক আহমদের প্ররোচণায় এক শ্রেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায়৷
দেশের এই চার শ্রেষ্ঠ সনত্মানকে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পর কারাগারে পাঠিয়ে খুনীচক্র কারাগারে ঢুকে প্রথমে গুলি এবং পরে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃতু্য নিশ্চিত করে৷ জাতীয় এ চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিসত্মানি সামরিক জানত্মার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন৷বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিসত্মানের সামরিক জানত্মা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে৷ পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিসত্মানি বাহিনীর বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজ এক বিবৃতিতে জেলহত্যা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালনের জন্য আওয়ামী লীগের সব শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল নেতা-কমর্ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷