দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২নভেম্বর : চলতি অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৫৬ টাকা৷ এর মধ্যে দেশীয় ঋণ ১৫ হাজার ৯৬৯ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ১২ হাজার ৮৭ টাকা৷ গত দশ বছরের ঋণ তথ্য বিশ্লেষণ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণ এ তথ্য প্রকাশ করেছে৷
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটি শুধু সরকারি ঋণ৷ তাদের মতে, সামপ্রতিক সময়ে দেশে মাথাপিছু ঋণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি, সামাজিক খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, উত্পাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে৷ এর ফলে আগামী প্রজন্মের উপরও ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে৷ আর অর্থনীতিতে বাজেট ঘাটতি ও ঋণের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলায় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি৷ শনিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷
আগের বছরের তুলনায় চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে মোট ঋণের প্রবাহ ৭৭ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে৷ এ সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবাহ ৭৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছে৷ তবে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কিছুটা কমেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকের তুলনায় ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে৷ কিন্তু আগের বছরগুলোতে বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল৷
দেশীয় ঋণ : ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ২ হাজার টাকা৷ যা দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ৷ এর আগে ২০১২-১৩ সালে ওই ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি, ২০১১-১২ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি এবং ২০১০-১১ সালে ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা৷ সংস্থাটি বলছে, বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ সালে ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে৷
সংস্থাটি আরও বলছে, ২০০১-০২ অর্থবছরে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ৩ হাজার ৪৩৩ টাকা৷ ২০০৬-০৭ সালে যা ৫ হাজার ৫৩৩ টাকা, ২০১০-১১ সালে তা ছিল ৯ হাজার ২৯২ টাকা এবং ২০১৩-১৪ সালে তা ১২ হাজার ৯৬৮ টাকা হয়েছে৷ এ হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু দেশীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৯৬৯ টাকা এবং ২০১৫-১৬ সালে হবে ১৮ হাজার ৯৭০ টাকা৷ এছাড়াও ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত গড়ে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ ঋণ বার্ষিক ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে৷ এ সময়ে মোট বেড়েছে ৪২ দশমিক ৩৮ শতাংশ৷ একই সময়ে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ গড়ে দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে৷ এ সময়ে মোট ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ৷
বিদেশী ঋণ : অন্যদিকে আগের বছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ সালে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৯ কোটি ডলার বেড়েছে৷ এ সময়ে বৈদেশিক ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার৷ ২০১২-১৩ সালে যা ছিল ২ হাজার ২৯৮ কোটি ডলার৷ ২০১১-১২ সালে ২ হাজার ২০৯ কোটি ডলার এবং ২০১০-১১ সালে ছিল ২ হাজার ২০৮ কোটি ডলার৷
গত দশ বছরের বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হবে ১৫৩ ডলার৷ স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২ হাজার ৮৭ টাকা (প্রতি ডলার ৭৯ টাকা হিসাবে)৷ আর ২০১৫-১৬ সাল শেষে তা দাঁড়াবে ১৫৮ ডলার৷
উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ৷ অন্যদিকে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ৷ ২০১২-১৩ সালে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ১৮ শতাংশ৷আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশীয় ঋণ ৭৮ দশমিক বেড়েছে৷ প্রতিষ্ঠানটি বলছে দেশীয় উত্স থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে৷