02-11-14-PM-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২নভেম্বর : গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা নস্যাত্‍ করতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷রোববার সকালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের পেছনে যেমন ষড়যন্ত্র ছিল, তেমনি পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নস্যাত্‍ করতে একটি মহল প্রচেষ্টা চালিয়েছিল৷

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, তখন সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল৷ সে সময় কিছু ষড়যন্ত্রও ছিল৷ নগদ অর্থ দিয়ে খাদ্য কেনা হয়েছে, কিন্তু সময়মতো জাহাজ পৌঁছাতে দেওয়া হয়নি৷ এটা একটা বিরাট ষড়যন্ত্র৷ বিরাট কারসাজি ছিল৷ যে কারসাজিটা এবারের পাঁচই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে উপলব্ধি করেছি৷ আমাদের ওইভাবে ক্ষমতা থেকে সরানো, গণতন্ত্রের যেন ধারাবাহিকতা না থাকে- সেজন্য একটা শ্রেণির যে একটা প্রচেষ্টা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি দরিদ্র, দুঃস্থ, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নেয়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্প ও অন্যান্য পদৰেপগুলোর নিবিড় মনিটরিংয়ের ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেছেন৷

প্রধানমন্ত্রী রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণকালে আরো বলেন, অবহেলিতদের কল্যাণ নেয়া প্রকল্পগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজধানীর পথশিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে সরকার একটি তালিকা করেছে৷ এটা বাসত্মবায়ন করা কোন কঠিন কাজ নয়৷ আমরা চাইলে এটা করতে পারি৷ শেখ হাসিনা তাঁর মন্ত্রণালয়গুলো পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন৷সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মোহসিন আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন৷ এসময় প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এবং মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷

১৯৯৬ সালে তাঁর সরকারের প্রত্যেক মানুষকে খড়ের ঘরের স্থলে কমপক্ষে একটি করে টিনের ঘর দেয়ার সিদ্ধানত্মের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আশ্রায়ন প্রকল্প এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মাত্র ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জে গৃহায়ন প্রকল্প নেয়া হয়৷তিনি এক্ষেত্রে অধিক সুদে বেসরকারি ঋণদান প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে বলেন, তাদের এসব প্রকল্পে দারিদ্র্য হ্রাস হয় না৷ বরং কোনভাবে মানুষকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে দীর্ঘ মেয়াদে দারিদ্র্য লস্নন করা হচ্ছে৷ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগের সদস্যসহ দেশবাসীর প্রচেষ্টায় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেছে- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই অভিজ্ঞতা ছিল বলেই ওই অবস্থা সামাল দিতে পেরেছি৷

১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে জনগণের উন্নয়নে নেওয়া কর্মসূচিগুলো পরবর্তী সরকারের বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এবার সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত অপরিহার্য ছিল৷বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে তুলে আনতে হবে৷ সেটাই হবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাজ৷অবহেলিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা সবচেয়ে বড়৷ বড় লোক থেকে কে আরো বড়লোক হল- তা নয়, গরীব মানুষের জন্য কিছু করতে হবে৷ খেটে খাওয়া মানুষ আর রাস্তার শিশুদের জন্য কিছু করতে হবে৷প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর আরো গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জীবন অর্থবহ করতে হবে৷ সমাজের জন্য কাজ করতে হবে৷ তারা আর সমাজের বোঝা হিসাবে থাকবে না৷ তারা সমাজের অ্যাসেট হবে৷ জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম দিকে যেখানে মূক ও বধিরদের বিদ্যালয় ছিল, সেখানে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী৷ওই জায়গা রক্ষা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,৯৬-এ সরকার গঠনের পর যমুনা গ্রুপের বাবুল এসে বলল- ওই জায়গা তার৷ একেবারে কাগজপত্র নিয়ে হাজির৷

আমি তখনকার সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে বললাম, যে করেই হোক এই জায়গা রক্ষা করতে হবে৷ কারণ আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি- ওই মূক ও বধিরদের স্কুল৷ পরে কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেল ঠিকই ওইটা সরকারের জায়গা৷ নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে দারিদ্র্য দূর করতে হবে৷আমরা ভাতা দেব৷ কিন্তু মানুষ যেন ভাতার ওপর নির্ভররীল না হয়৷ সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষের অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে উপস্থিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি এ পরিদর্শনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা সমর্্পকে আপনাদের সাথে আমার মতবিনিময়ের সুযোগ হবে৷ এর মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমার প্রত্যাশা৷

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩, ‘নিউরো- ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ এবং ‘নিউরো- ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’ গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে৷ দেশের ৬৪টি জেলায় ৭৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং একটি করে অটিজম কর্নার চালু রয়েছে৷এ কার্যক্রম উপজেলা পর্যন্ত সমপ্রসারণের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী৷ প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপের আওতায় গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬৯১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজঅ্যাবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসব তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷ দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি সাধারণ স্কুলে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম চালু, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ২৮টি নতুন হোস্টেল নির্মাণের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, আমরা দৃষ্টি, বাক-শ্রবণ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি৷ সরকারি ব্রেইল প্রেস থেকে ছাপানো বই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে৷ব্রেইল পদ্ধতির উন্নয়নে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও এটুআই প্রকল্প একসাথে কাজ করে যাচ্ছে৷নির্বাচনী অঙ্গিকার অনুযায়ী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, হিজড়া, দলিত, বেদে ও হরিজন সমপ্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে দুটি নতুন কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা৷ হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি৷

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য দেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু শখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসীন আলী৷তখন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,জাতির জনকের স্বপ্নপূরণ করতে হবে৷