দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৩১অক্টোবর: হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারীসমূহ থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে পড়ছে৷ এসব বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানি, বায়ু, মাটি দূষণসহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে চলেছে৷ বুড়িগঙ্গা নদীসহ মহানগরীর সার্বিক পরিবেশ রৰায় হাজারীবাগের ট্যানারী সাভারের শিল্পনগরীতে স্থানানত্মরের সিদ্ধানত্ম হলেও তার বাসত্মবায়ন অগ্রগতি পরিলৰিত হচ্ছে না৷
শুক্রবার সকাল ১১ টায় হাজারীবাগের ঢাকা ট্যানারী মোড়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-সহ ১৮ টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে দাবী জানানো হয় যে, সরকারের সাথে বিএফএলএলএফইএ এবং বিটিএ এর মধ্যে চুক্তি মোতাবেক চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারীসমূহ সাভারে স্থানানত্মর করতে হবে৷
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন- হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারীসমূহের বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ৷ মত্স্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী৷ হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারীসমূহ দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বিপদ ডেকে আনছে ৷ এছাড়াও প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরী হচ্ছে৷ সর্বোচ্চ উত্পাদনকালে এর পরিমাণ প্রায় ২০০ মেট্রিক টন৷ এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোজেন সালফাইড, ফরমিক এসিড, ব্লিচ, ডাই, তেল, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত অনেক ভারী ধাতু, চুন, পশুর মাংস, দ্রবীভূত চুল, চর্বি ইত্যাদি৷ এসব বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানি, বায়ু, মাটি দূষণসহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে চলেছে৷
মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও জনগণের অব্যাহত আন্দোলন এবং গণমাধ্যমের সক্রিয় ও কার্যকর ভ্থমিকার ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালের ২৭ জানুয়ারী সরকার হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পসমূহকে ঢাকা জেলার সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলায় স্থানানতরের কার্যক্রম গ্রহণ করে৷ ইতিমধ্যে ভূমি উন্নয়ন, সড়ক নিমর্াণ, বিদু্যত্ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপনসহ ১৫৫টি শিল্প ইউনিট/ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পস্ন্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে সরকার এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এঙ্পোর্টাস এসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) ও বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ বিএফএলএলএফইএ ও বিটিএ পরিবেশ আইন ও মহামান্য আদালতের নির্দেশনার আলোকে ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে প্রদত্ত অঙ্গীকারনামা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানানত্মর প্রক্রিয়া সম্পাদনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে৷ চামড়া শিল্পনগরীতে পস্নট বরাদ্দপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাগণ সকল ট্যানারী শিল্প ইউনিট, চামড়া উপজাত প্রক্রিয়াকরণ ও অন্যান্য শিল্প ইউনিটগুলো চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানানত্মরের প্রক্রিয়া ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন নিশ্চিত করবে৷ পরিবেশ আইন ও মহামান্য আদালতের নির্দেশনার আলোকে শিল্পনগরীতে কারখানা স্থানানত্মরে ব্যর্থ হলে বিএফএলএলএফইএ ও বিটিএ সিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড ইত্যাদি নির্মাণে বিনিয়োগকৃত অর্থ সরকারকে প্রদান করতে বাধ্য থাকবে৷ প্রকল্প বাসত্মবায়ন শেষে সিইটিপি, সিসিআরইউ, ডাম্পিং ইয়ার্ড, এসটিপি, এসপিজিএস, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্নান্ট ইত্যাদি পরিচালনা, সংরৰণ ও মেরামত ব্যয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ বহন করবে৷
হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহের স্থানানতর বিলম্বিত হওয়ায় দূষণ অব্যাহত রয়েছে এবং মহানগরীর জনগণও গুরুতর শারিরীক ঝুকিতে রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার সহাপনসহ হাজারীবাগসহ ট্যানারীসমূহ স্থানানতরের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ হ্রাস পাবে৷ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি রপ্তানীর স্বার্থে (বিশেষ করে ইউ-তে) হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ জরুরীভিত্তিতে সাভারে স্থানানতরের লক্ষ্যে সরকার এবং ট্যানারীর মালিকদের সম্মিলিত প্রয়াশ অত্যাবশ্যক৷ কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার সহাপন এবং ট্যানারীসমূহ স্থানানত্মর কার্যক্রম যুগপত্ভাবে চালাতে হবে৷ ট্যানারীসমূহ উত্পাদনে না যাওয়া পর্যনত বর্জ্য শোধনাগারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না এবং তা চালু করাও সম্ভব হবে না৷ ফলে ১০৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কোন সুফল পাওয়া যাবে না৷
মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ঠ কলামিস্ট এ কে এম নুরম্নল হক, পবার নির্বাহী সদস্য মো: সেলিম, মডার্ণ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নূরম্নল হক আরজু, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা, রাইটার্স ফোরামের সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ মন্টু, গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারিক, ইউপিএফের সভাপতি জহিরম্নল ইসলাম জনি, ডাবিস্নউবিবির প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাসত্মবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ৷