দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৯অক্টোবর: জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গঠিত বদর বাহিনীর প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃতু্যদন্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল৷আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল বুধবার জনাকীর্ণ ট্রাইবু্যনালে এ রায় ঘোষণা করে৷ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক৷এ সময় নিজামী এজলাশে উপস্থিত ছিলেন৷
ট্রাইবুন্যালে ২০৪ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন করা হয়৷রায়ে মামলার অভিযোগের অংশ বিচারপতি আনোয়ারুল হক, পর্যবেক্ষন অংশ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং রায় ও দন্ডের অংশ উপস্থাপন করেন ট্রাইবু্যনালনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম৷রায়ে বলা হয়, নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আনীত ১৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন৷ এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে নিজামীকে ফাঁসির (মৃতু্যদন্ড) আদেশ দিয়েছে ট্রাইবু্যনাল৷ ১, ৩,৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া ৫, ৯, ১০ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি (খালাস) দেয়া হয়৷
যে সব অভিযোগে তাকে মৃতু্যদন্ড দেয়া হয় সে সব অভিযোগ গুলো হলো, অভিযোগ-২. একাত্তর সালের ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক একাডেমী হলে নিজামী বক্তৃতা করেন৷ তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ইসলামের শত্রু হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে প্ররোচনা দেন৷ অভিযোগ-৪. একাত্তরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যাশোর বিডিহলে আয়োজিত এক সভায় স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে নির্মূলে তার সহযোগীদের প্রতি আহবান জানান৷ অভিযোগ-৬. একাত্তরের ৮ মে সাথিয়ায় সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূজা ঘরের সামনে নিজামীর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, লুন্ঠন ও বাড়ীতে অগি্নসংযোগের ঘটনা সংঘটিত হয়৷ অভিাযোগ-১৬. মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে নিজামী জড়িত থাকার ঘটনা৷
যে সব অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়, সে অভিযোগ হলো, অভিযোগ-১. নিজামী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের সভাপতি হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম হল ইন্সটিটিউটে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেন৷ এ বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নিমূর্ল করতে তার সহযোগীদের আহবান জানান৷অভিযোগ ৩.একাত্তরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণে দেয়া এক বক্তৃতায় স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ভারতের দালাল উল্লেখ করে তাদের নির্মূলের আহবান জানান নিজামী৷
অভিযোগ ৭,একাত্তরের ২৭ নভেম্বর পাবনার সাথিয়া থানার ধুলাউড়ি গ্রামে আব্দুল আওয়ালের বাড়ী ঘেরাও করে ৩০ জনকে হত্যা, বাড়ীতে লুট, নারীদের ধর্ষণ ও অগি্নসংযোগের অভিযোগ৷অভিাযোগ ৮, ১৬ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদী থানার আর পাড়া ও ভুতের গাড়ী গ্রামের বিভিন্ন বাড়ীতে লুট, অগি্নসংযোগ ও নিরিহ হাফেজ ওমর আলীসহ ১৯ জনকে হত্যার অভিযোগ৷
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম রায় নিয়ে বিলম্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গের ভূমিকায় বলেন, সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই এ রায় পাঠ করা হচ্ছে৷ রায়ে বলা হয়, যদি ফাঁসি না দেয়া হয়, তাহলে তা হবে বিচারের ব্যর্থতা৷ জামায়াতের আজকের আমীর নিজামী চার দশক আগে ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীরও নেতা৷ তার নেতৃত্বে ও প্ররোচণায় মানবাধীকারের চরম লংঘন, স্বাধীনতাকামীদের দমন-পীড়ন, গনহত্যা, দেশের মেধাবী নাগরিক বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
রায়ের পর্যবেক্ষনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমীর নিজামীকে বাংলাদেশের মন্ত্রী করাটা ছিল মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিতদের গালে চড় দেয়ার শামিল৷ পর্যবেক্ষণে ট্রাইবু্যনাল বলেন, নিজামী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার করেছিলেন৷আলবদর বাহিনী সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, নিজামী শুধু আলবদর বাহিনীর প্রধানই ছিলেন না, এটি গঠনের ক্ষেত্রেও মূল হোতা ছিলেন৷ তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন, যা বর্তমানে ছাত্রশিবির নামে পরিচিত৷ আলবদর বাহিনী ছিল ছাত্রসংঘের ‘অ্যাকশন সেকশন’৷ স্পষ্টতই ছাত্রসংঘ ও আলবদরের ওপরে নিজামীর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ছিল৷ নিজামী মনপ্রাণ দিয়ে শুধু বাংলাদেশের বিরোধিতাই করেননি, তিনি পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী, আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবিরের হত্যাকান্ডের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে৷
রায়ে টওসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সন্তোষ প্রকাশ করে এ রায়কে ঐতিহাসিক ও আইনের শাসনের জন্য মাইলফলক বলে দাবী করেন৷ অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান৷কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে বুধবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ট্রাইবু্যনালে আনা হয়৷ সাদা পাঞ্জাবির ওপর কফি রংয়ের কোটি পরিহিত নিজামীর মাথায় ছিল একটি জিন্নাহ টুপি৷ রায় ঘোষণাকালে কখনো গালে হাত দিয়ে, কখনো আবার চেয়ারে হেলান দিয়ে আনমনা হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়৷
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন৷ সুপ্রিমকোর্ট ও ট্রাইবু্যনালে প্রবেশের সবগুলো ফটকে পুলিশ ও র্যাব অবস্থান নেয়৷ ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তল্লাশিও করা হয়৷এর আগে গত ২৪ জুন অসুস্থার কারণে নিজামীকে ট্রাইবু্যনালে হাজির করতে না পারায় তার বিরদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা আবারো অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়৷ বুধবার রায় ঘোষণার বিষয়টি মঙ্গলবার জানিয়ে দেয় ট্রাইবু্যনাল৷ ট্রাইবু্যনালনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে এটিই হলো প্রথম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ট্রাইবু্যনালে দশম রায়৷
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাইবু্যনালে এটিই প্রথম রায়৷ নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে গত ২৪ মার্চ মামলাটি যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখে ট্রাইবু্যনাল ৷মুক্তিযুদ্ধকালে যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল, সেই মতিউর রহমান নিজামীকে যেতে হবে ফাঁসিকাষ্ঠে৷
জামায়াতের আজকের আমির নিজামী চার দশক আগে ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের টওধান এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীরও নেতা৷এছাড়া স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মামলার রায়ে উঠে এসেছে৷
রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী গণহত্যাসহ চার অভিযোগের প্রত্যেকটিতে তাকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে ট্রাইবু্যনাল৷বিচারক রায়ে বলেন, এই অপরাধের পরও যদি ফাঁসি না দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে বিচারের ব্যর্থতা৷বাকি চারটি অভিযোগে নিজামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আট অভিযোগে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে৷
৭১ বছর বয়সী নিজামী হলেন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করা চতুর্থ রাজনীতিবিদ, আদালত যাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতু্যদণ্ড দিল৷ এর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তার মৃতু্যদণ্ডের আদেশ হয়৷বিগত চার দলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী৷ তার আগে ২০০১-০৩ সময়ে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী৷সাজা ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের বাইরে অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা, রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত জনতা এবং আসামির জেলা পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস প্রকাশ করে৷অন্যদিকে রায়ের প্রতিবাদে নিজামীর দল তিন দিনের হরতাল ঘোষণা করে৷
রায়ের পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিজামীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, এ জাজমেন্ট ন্যায়ভ্রষ্ট জাজমেন্ট৷ আপিলে অবশ্যই এ জাজমেন্ট টিকবে না৷ আমরা অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ৷ এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব৷অন্যদিকে প্রসিকিউটর মো. আলী বলেন,এই রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আল-বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মাহবুব-উল-আলম হানিফ৷এ রায়ে সরকার সন্তুষ্ট জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন,এ রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকার পদক্ষেপ নেবে৷তবে জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপি এবারো রায় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জনায়নি৷ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের উত্তরসূরি হিসাবে ২০০০ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আসা মতিউর রহমান নিজামীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে৷
স্থানীয় বোয়ালমারি মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করা নিজামী কামিল পাস করেন ১৯৬৩ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে৷ এরপর প্রাইভেট শিক্ষার্থী হিসাবে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন৷
মাদ্রাসার ছাত্র থাকা অবস্থায় নিজামী ১৯৬১ সালে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও সেই ছাত্রসংঘই ইসলামী ছাত্রশিবির নামে ফিরে আসে৷১৯৬৬ থেকে তিন বছর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর একাত্তরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন নিজামী৷ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার লড়াই তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে৷ ১৯৭১ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এপ্রিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে মূলত ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় আল বদর বাহিনী৷ আর ছাত্রসংঘের নেতা হিসাবে আল বদরের নেতৃত্বও নিজামীর কাঁধে বর্তায়৷
আল বদর গঠিত হওয়ার পর ২৩ শে এপ্রিল দৈনিক পাকিস্তানে ছাত্রসংঘের সভাপতি নিজামীর একটি বিবৃতি টওকাশিত হয়, যাতে বলা হয়, আল বদর একটি নাম, একটি বিস্ময়৷ আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা৷ যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই আলবদর৷যেখানে দুস্কৃতিকারী সেখানেই আলবদর৷ ভারতীয় চরদের কাছে আলবদর সাক্ষাত্ আজরাইল৷ওই বাহিনী সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, অপহরণ, লুটপাটের মতো ব্যাপক মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায় এবং মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার পক্ষের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে৷
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ সরকার জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করে৷বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে ফেরার সুযোগ পান জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযম৷ স্বাধীন বাংলায় প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফেরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি৷ওই সময় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত জামায়াতের ঢাকা মহানগর শাখার আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী৷ এরপর ১৯৮৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হন৷
১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ওই পদে থেকে দলের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পান নিজামী৷ গোলাম আযম আমিরের পদ থেকে অবসরে গেলে ২০০০ সাল থেকে নিজামীর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় জামায়াতে ইসলামী৷পাবনা-১ আসন থেকে তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া নিজামীকে ২০০১ সালে মন্ত্রিত্ব দেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া৷ প্রথমে দুই বছর কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে সরকারের পরের তিন বছর ছিলেন শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বে৷
ওই সময়েই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য পাচারের পথে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে,যে মামলার রায়ে চলতি বছর নিজামীর ফাঁসির আদেশ হয়৷ কন্টেইনার ডিপোর ইজারা নিয়ে গেটকো দুর্নীতি মামলারও আসামি সাবেক শিল্পমন্ত্রী নিজামী৷২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর৷ বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে জোটসঙ্গী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী৷২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর৷ বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে জোটসঙ্গী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী৷
মামলার পূর্বাপর: ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার করার পর একই বছরের ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷এরপর ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর জামায়াতের আমিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশন৷ ২৮ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগ আমলে নেয়৷
এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ২৮ মে জামায়াত আমিরের বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইবু্যনাল৷তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত বছর ২৬ অগাস্ট এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়৷ প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন৷আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন৷ বাকি তিনজন হলেন- অ্যাডভোকেট কে এ হামিদুর রহমান, মো. শামসুল আলম ও আবদুস সালাম মুকুল৷
সাক্ষ্য ও জেরা শেষে গতবছর ৩ থেকে ৬ নভেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রথম দফা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়৷ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত না হওয়ায় তাদের লিখিত যুক্তিতর্ক জমা দিতে বলে ১৩ নভেম্বর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইবু্যনাল৷ গত ১০ মার্চ নিজামীর বিরুদ্ধে এ মামলায় নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থপন শুরু হয়৷ গত বছর ১৩ নভেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে মামলাটি যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রেখেছিল ট্রাইবু্যনাল-১ এর তত্কালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে বিচারিক প্যানেল৷
এরপর ট্রাইবু্যনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের চাকরির বয়সসীমা পূর্ণ হওয়ায় তিনি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান৷ ফলে চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়৷ এই ট্রাইবু্যনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক৷ ট্রাইবু্যনাল-১-এর চেয়ারম্যান পদে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে গত ২৩ ফেব্রম্নয়ারি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়৷নতুন চেয়ারম্যান নিজামীর মামলায় নতুন করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেন৷ সে অনুযায়ী এ মামলায় পুনরায় যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়৷
নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে৷ এসব ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২৮ মে তার বিচার শুরু হয়৷গত ২৪ জুন এই মামলার অপেক্ষমাণ রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য ছিল৷ কিন্তু ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীকে হাজির না করে তিনি অসুস্থ বলে ট্রাইবু্যনালে প্রতিবেদন পাঠায়্#২৫৫১; এ ব্যাপারে তখন ট্রাইবু্যনালের মুখপাত্র ও রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসিরউদ্দীন মাহমুদ বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের ওই নথিতে বলা হয়েছে, নিজামী অস্বাভাবিক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন্#২৫৫১; এ জন্য নড়াচড়া না করিয়ে তাঁর বিশ্রাম দরকার্#২৫৫১;
আসামির অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা যুক্তিসংগত মনে না করায় ওই দিন (২৪ জুন) ট্রাইবু্যনাল তৃতীয় দফায় নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় অপেক্ষমাণ রাখেন্#২৫৫১; শুনানি শেষে ওই দিন আদেশে ট্রাইবু্যনাল বলেন, আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি্#২৫৫১; ওই প্রতিবেদন অনুসারে আসামি মতিউর রহমান নিজামী অসুস্থ্#২৫৫১; আমরা দুই পক্ষের শুনানি শুনলাম্#২৫৫১; এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট যেসব আইন ও বিধি আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে আমরা আসামির অনুপস্থিতিতে রায় দেওয়া যুক্তিসংগত মনে করছি না্#২৫৫১; এ জন্য আজ রায় দেওয়া হচ্ছে না্#২৫৫১; তবে যত দ্রুত সম্ভব রায় দেওয়ার জন্য আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আসামির পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন চাচ্ছি্#২৫৫১; সে পর্যন্ত মামলাটি আবার রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি- কেস অ্যায়োটিং ভারডিক্ট) রাখা হলো্#২৫৫১;
নিজামীর অসুস্থতার ব্যাপারে পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী বলেন, ২৩ জুন দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁর (নিজামী) উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়্#২৫৫১; পরদিন (২৪ জুন) সকাল আটটা পর্যন্ত তিনি অসুস্থ ছিলেন্#২৫৫১; কারা চিকিত্সকেরা তাঁকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেন্#২৫৫১; চিকিত্সকদের পরামর্শে তাঁকে ট্রাইবু্যনালে পাঠানো হয়নি্#২৫৫১; দুপুরে কারা হাসপাতালের চিকিত্সকেরা তাঁকে দেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন্#২৫৫১; তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছ্#২ে;৫৫১;ট্রাইবু্যনালে সবচেয়ে বেশি সময় প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা মামলা এটি৷ ট্রাইবু্যনালের দশম রায়: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইবু্যনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়৷ ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে৷ পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি৷
৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ৷যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে জনতার দাবির মুখে সরকার ট্রাইবু্যনাল আইনে সংশোধন আনে৷ এর মধ্যে দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিলের সমান সুযোগ তৈরি হয়৷ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেয়, যা কার্যকর করা হয় ১২ ডিসেম্বর৷
ট্রাইবু্যনালের তৃতীয় রায়ে গতবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হলে দলটির ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে৷ সরকারি হিসেবেই পুলিশসহ নিহত হয় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ৷ওই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করলে চলতি বছর ১৭ েেসপ্টেম্বর দেইল্যা রাজাকার নামে খ্যাত এই জামায়াত নেতার সাজা কমিয়ে আমৃতু্য কারাদণ্ডের আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷গতবছর ৯ মে ট্রাইবু্যনালের চতুর্থ রায়েজামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকেও মৃতু্যদণ্ড দেয় ট্রাইবু্যনাল৷ ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষের আপিল শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছে আপিল বিভাগ৷
মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উসকানির দায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর গোলাম আযমকে গতবছর ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল৷ এটি ছিল ট্রাইবু্যনালের পঞ্চম রায়৷রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলার মধ্যেই গত ২৩ অক্টোবর রাতে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান ৯২ বছর বয়সী জামায়াতগুরু৷
গতবছর ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতু্যদণ্ড দেওয়া হয়৷ এরপর ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আসে৷ তারাও রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছেন৷গতবছর ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃতু্য কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ যুদ্ধাপরাধের দণ্ড ভোগের মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে গত ৩০ অগাস্ট মারা যান আলীম৷ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যনালের রায়ের পর ১১ মাস কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলেন তিনি৷আর বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে একাত্তরের দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে গতবছর ৩ নভেম্বর মৃতু্যদণ্ড দেয় ট্রাইবু্যনাল৷ তারা দুজনেই পলাতক৷
জামায়াত নেতাদের আগের রায়গুলোর সময় ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার থেকেই ট্রাইবু্যনাল ঘিরে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷সকালে ট্রাইবু্যনালে আসা সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদেরও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তল্লাশি করে ট্রাইবু্যনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়৷রায়ের জন্য আসামি নিজামীকে আগের রাতেই কশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়৷বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে ট্রাইবু্যনালে নিয়ে আসা হয় একটি প্রিজন ভ্যানে করে৷আগের রায়ের দিনগুলোর মতো এদিনও সকাল থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের ট্রাইবু্যনালের বাইরে জড়ো হতে দেখা যায়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি তোলেন তারা৷