khaleda-zia

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৬অক্টোবর: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার লিভ টু আপিল শুনানির দিন এগিয়ে আনার জন্য দুদকের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ৷

রোববার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়৷খুরশীদ আলম খান বলেন, এ মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহনের জন্য রয়েছে৷ কিন্তু একই মামলা নিয়ে আসামিপক্ষ বারবার উচ্চ আদালতে আসছে৷ ফলে সাক্ষ্যগ্রহণ করা যাচ্ছেনা৷ আদালত আগামী ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল শুনানির জন্য রেখেছিল৷ শুনানির দিন এগিয়ে আনার জন্য দুদকের পক্ষে আবেদন করা হয়েছিল৷ শুনানি শেষে আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির তারিখ এগিয়ে এনে নতুন তারিখ ধার্য করে দিয়েছে৷ এসময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট জয়নাল আবেদীন৷অন্যদিকে রাষ্ট্র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷

এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-সংক্রানত্ম দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৯ নভেম্বর পরবতর্ী তারিখ করা হয়েছে৷ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় রোবাবর খালেদা জিয়ার পক্ষে আনা সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেয়৷ জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট-সংক্রানত্ম দুর্নীতি মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ আদালতে গত ২২সেপ্টেম্বর আংশিক সাক্ষ্য দেন৷ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই ওই দিন মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়৷দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল এ কথা বলেন৷ তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ধার্য তারিখে হাজির থাকতে বলেছে আদালত৷ আজ হাজির হননি তিনি৷ রোববার তার পক্ষে হরতাল ও নিরাপত্তা জনিত কারণে আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন পেশ করে৷

গত ১৯ মার্চ দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক বাসুদেব রায়৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়৷ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় দুদক মামলা দায়ের করে৷ এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক অভিযোগপত্র দাখিল করে৷শুনানির আগের তারিখেও খালেদার আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করেছিলেন৷ সেদিন সাক্ষ্য পিছিয়ে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাকে ২৬ অক্টোবর অবশ্যই আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক৷

তবে রোববারও খালেদা নিজে না এসে আইনজীবীর মাধ্যমে হরতালে নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে সময়ের আবেদন করেন৷ কয়েকটি ইসলামী দলের ডাকে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা এই হরতাল চলছে৷

তার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদার লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য ৬ নভেম্বর তারিখ রাখা হয়েছে৷ তার আগ পর্যন্ত সাক্ষ্য মুলতবি রাখারও আবেদন করেন তারা৷শুনানি শেষে বিচারক খালেদার আবেদন মঞ্জুর করে ৯ নভেম্বর মামলা দুটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন৷মামলার বাদী হারুন অর রশীদ এ দিন সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদন নাকচ করে তার অনুপস্থিতিতেই একটি মামলায় বাদীর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ হয়৷

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এ দুটি মামলায় গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আদালত৷এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসাবে রয়েছেন৷

এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়৷২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷ এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক

জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক৷ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে৷ খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন৷

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে৷এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়৷

দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন৷মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷ তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন৷ সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে৷ বাকি দুজন পলাতক৷