দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৪অক্টোবর: শীত আসতে না আসতেই শীতকালীন সবজির আধিপত্য সবজির বাজারে৷ আর এসব শীতকালীন সবজি উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁচাবাজারগুলোতে৷ বিক্রেতারা জানালেন ঈদের পরে দাম কমলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে সবজির দাম৷ তবে শীতকালীন সবজির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা৷শুক্রবার এলেই কাঁচাবাজারে আগুন লেগে যায়৷ সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি নেন বিক্রেতারা৷ বাজারে ক্রেতাদের সমাগম বেশি দেখার পরই বিক্রেতারা চড়া দাম হাকিয়ে বসেন৷স্বয়ং বিক্রেতারাই স্বীকার করলেন শুক্রবার এলে বাজারের পরিস্থিতি একটু বদলে যায়৷
শুক্রবার সকালে ক রাজধানীর মহাখালী, বনানীসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে কাঁচাপণ্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই সব তথ্য মিললো৷ সেই সঙ্গে গত সাতদিনের কাঁচাপণ্যের দাম পর্যালোচনা করে মিল পাওয়া গেলো তাদের কথার৷রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়৷ এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা কাঁচাবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও বেশকিছু খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায় মৌসুমি সবজির চেয়ে শীতকালীন সবজির আধিপত্যই বেশি৷ যা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা৷
বাজারে শীতের শাক-সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনও বেশ চড়া৷ ফুলকপি, বাধাকপি ও শালগমসহ বিভিন্ন রকমের শাক-সবজিতে বাজার এখন ভরপুর৷ তবে এর বাড়তি সরবরাহও সস্তি দিতে পারছে না ক্রোতাদের৷খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, প্রচুর সরবরাহ থাকলেও পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের৷ তবে ২/১ সপ্তাহের মধ্যে দাম কিছুটা কমে আসবে৷
এ সম্পর্কে সবজি বিক্রেতা রুহুল আমীন বলেন, ঈদে লোকজন গ্রামে যাওয়ার কারণে চাহিদা কম ছিল৷ যার কারণে দামও কম ছিল৷ এখন আবার লোকজন ফিরে আসার কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে৷ ফলে দামও একটু বেশি৷অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে নতুন সবজি আসায় বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন৷বাংলামটর থেকে কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, বিক্রেতাদের একটার পর একটা অজুহাত রয়েছেই৷ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তারা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়েই চলেছে৷
এদিকে, অস্থিরতা বাড়েছে চালের বাজারেও, এক সপ্তাহে চালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা৷ তেল, পেয়াজ, আদা-রসুন ও মুরগীসহ বেশি কিছু নিত্য পণ্যের দাম নিম্নমুখী৷সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কাচাঁমরিচের দাম৷ তবে সবজির দাম তেমন একটা না কমলেও রয়েছে স্থিতিশীল৷ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আশে-পাশের বেশ কিছু খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়৷এদিন কারওয়ান বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে৷ যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিকেজি৷ সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা৷
তবে দু’একটি সবজির দাম কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে প্রায় সব সবজির দাম৷ যার মধ্যে লাউ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা প্রতি পিস, কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি পিস, বাঁধা কপি প্রতি পিস ২৪ থেকে ৩০ টাকা, ফুল কপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কলা হালি প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মূলা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, ঝিঙ্গা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, চিচিংগা ৪০ থেকে ৪২, আলু ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজি প্রতি৷
সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকা কমে শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়৷ যা আগে ছিল ১৩০ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি প্রতি৷ যা আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা৷ মসলা পণ্যের মধ্যে কমেছে পেঁয়াজের দাম৷ এদিন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে (ইন্ডিয়ান) ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে৷ আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ েেথকে ৩৮ টাকা৷ সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ২ থেকে ৪ টাকা৷ এছাড়া রসুন বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, আদা (মানভেদে) ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা৷
দামের অনেকটা তারতম্য রয়েছে খুচরা ও পাইকারী বাজারে৷ প্রিিতটি সবজির দামে ১০ থেকে ২০ টাকা ব্যবধান রয়েছে খুচরা ও পাইকারী বাজারে৷ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে বাজার করতে এসেছেন সবুজ রায়হান৷ তিনি জানান, কারওয়ান বাজারের চেয়ে এখানে প্রতিটা সবজির দাম প্রায় দ্বিগুন৷তবে বিক্রেতারা বলেন, পাইকারী বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দাম বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ, আমরা ব্যবসা করি৷ এছাড়া পরিবহন খরচ যোগ করতে হয়৷ মাল নষ্ট হয়, পঁচে যায়৷
অন্যদিকে, ঈদের পর থেকেই বাড়তি চালের দাম৷ চালের মধ্যে মিনিকেট ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, আটাশ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, নাজিরশাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, পারী ৩৮ টাকা, স্বর্ণা ৩৬ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে৷তবে ক্রেতারা সস্তি পাচ্ছেন মাছের বাজারে৷ রুপালী ইলিশ, রুই ও কৈ-পাবদাসহ বিভিন্ন মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দামও অনেকটা কমেছে৷ মাছের সরবরাহ বাড়ায় প্রতি কেজিতে দাম কমেছে গড়ে এক থেকে দু\’শো টাকা৷
এছাড়াও মাছের মধ্যে রুই ২২০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি প্রতি, ইলিশ জোড়া প্রতি ১২০০ েেথকে ২ হাজার টাকা৷ মাংসের মধ্যে গরু ৩০০ টাকা, খাসি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মুরগীর মধ্যে ব্রয়লার ১১০ টাকা, পাকিস্তানী ১৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রতিপিস৷ ডিম হালি প্রতি (মুরগী) ২৮ থেকে ৩০ টাকা, (হাঁসের) ৪০ থেকে ৪২ টাকা৷ কোরবানির ঈদের পরপর চাহিদা কমে যাওয়ায়, কমেছে মুরগীর দামও৷ তবে এতে লোকসান দিতে হচ্ছে বলে দাবি অনেক ব্যবসায়ীর৷ ৷