দৈনিকবার্তা-যশোর, ২৪অক্টোবর: সরকারি নিয়মকে উপেক্ষা করে যশোর কাস্টমস কমিশনারেটে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চালানো হচ্ছে পণ্য নিলাম প্রক্রিয়া৷ তাসনিম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৪ বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে একাজ করে আসছে৷ অভিযোগ রয়েছে, অস্থায়ী ভিত্তিতে মাত্র একজন কর্মচারীর মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটি ৫টি ডিভিশনের নিলাম কাজ করছে৷ যে কারণে সময়মত নিলাম না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য৷ এতে প্রতিবছরই সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷
সূত্রমতে, ২০০০ সালের ১২ মার্চ সরকারি পণ্য নিলামের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে তাসনিম এন্টারপ্রাইজকে নিয়োগ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ৷ ওই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধিকারী তাইবুল হাসান লিটন কাস্টমসের সাবেক কমিশনার হাফিজুল কবিরের স্বজন হওয়ার সুবাদে নিয়োগটি হাতিয়ে নেন৷ সেই থেকে অদ্যাবধি যশোর কমিশনারেটের আওতাধীন যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ভেড়ামারা ও দর্শনা শুল্ক গুদামের পণ্য নিলাম করে আসছে৷
কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, কিছু শর্তের প্রেক্ষিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দু’বছরের জন্য এ নিলামকারী নিয়োগ করে থাকেন৷ শর্তগুলো হচ্ছে, প্রতি মাসে অনত্মত একটি নিলামকার্য সম্পন্ন করতে হবে৷ ৫টি ডিভিশনেই অফিস থাকতে হবে৷ সেইসাথে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় লোকবল৷ দেশের অন্যান্য কাস্টমস কমিশনারেট এবং হাউসগুলোতেও এ নিয়মেই নিয়োগ করে আসছে কর্তৃপক্ষ৷ অথচ যশোরে শুধুমাত্র অস্থায়ী ভিত্তিতেই নিয়োগের মাধ্যমে ১৪ বছর ধরে চলছে এসব৷
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, তাসনিম এন্টারপ্রাইজের যশোরে অস্থায়ী একটি অফিস থাকলেও অন্য চারটি ডিভিশনে কোন অফিসই নেই৷ নেই লোকবলও৷ একটি ফার্মেসিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে যশোর অফিসের কার্যক্রম চালানো হলেও এখানেও স্থায়ী লোকবল নেই৷ মাত্র একজন অস্থায়ী লোককে দিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজেই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন৷ এতে বিভাগীয় ওই শুল্ক গুদামগুলো থেকে উলেস্নখযোগ্য কোন পণ্য নিলাম হচ্ছে না৷ এদিকে, লোকবল না থাকায় ফল, মাছ, চামড়া, জিরা, কিসমিস, চাপাতা, বিভিন্ন ধরণের চকলেট ও বিস্কুট, জুসের মত দ্রম্নত পচনশীল পণ্যগুলো সময়মত নিলাম করা সম্ভব হচ্ছে না৷ এতে মান নষ্ট হয়ে ওই পণ্য থেকে সঠিক রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না সরকার৷ এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে অন্যান্য মূল্যবান পণ্য পড়ে থাকায় সেগুলোর মান নষ্ট হওয়ায় তা বিক্রির অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে৷ নিয়োগের তিনটি শর্ত মানতেই প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷
সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ১৪ বছরে শর্তানুযায়ী ১৬৮ টি নিলাম কার্য সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এসময়ে ৬০টি নিলামও করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ৷ যেকারণে বিভিন্ন সময়ে বিজিবি, টাস্কফোর্স ও কাস্টমসের হাতে আটক বিভিন্ন মূল্যবান ভারতীয় পণ্য নিলাম করা সম্ভব হয়নি৷ যা বছরের পর বছর গুদামে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এতে সরকার কয়েকশ’ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ বর্তমানে ওই গুদামগুলোতে কয়েকশ’ কোটি টাকার খাদ্য দ্রব্য, থান কাপড়, ইমিটেশন, প্রসাধনী সামগ্রী, মোটর পার্টস, ইলেকট্রিক ও ইলেট্রনিঙ্ সমাগ্রী, লোহা, স্টিল সামগ্রী, সার, গ্যাস সিলিন্ডার, ট্রাক, প্রাইভেট, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল, শাড়ি, থ্রিপিচ, গেজ্ঞি, শার্ট, প্যান্ট পিচ রয়েছে৷এ ব্যাপারে যশোর কাস্টমসের বিভাগীয় কর্মকর্তা বজলুর রশিদের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন না ধরায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভাব হয়নি৷