Hasina_Un

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৩অক্টোবর:সারাদেশের রেলের দখল হওয়া জমি দখলমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এদিকে,পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ আটকাতে কোন কোন মহলের’ ইন্ধন ছিল বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তিনি বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সহিংস কর্মকাণ্ড এবং ওই মহলের তত্‍পরতার উদ্দেশ্য ছিল একই৷

বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলের জন্য খরচটাও বেড়ে গিয়েছিল, খরচ বাড়ার কারণে বিশ্ব ব্যাংক যখন এগিয়ে আসল, তাদের সহযোগিতা নিতে গেলাম৷পরবর্তীতে একটা সময় দুর্নীতি টুর্নীতি হাবি-জাবি বলে-টলে চেষ্টা করল এটাকে ঠেকাতে৷দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলে বিশ্ব ব্যাংক প্রথম পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে৷ অনেক নাটকীয়তার পর গত বছর জানুয়ারিতে ওই প্রকল্পে তাদের অর্থ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার৷

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা অন্য কারণে, প্রকৃত দুর্নীতি কোনো কিছুই হয়নি৷ কেউ বের করতে পারেনি৷কিন্তু বিষয়টা ছিল একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে৷ ঠিক যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি গাড়ি পোড়াল বা রেল পোড়াল, ঠিক সেই রকমই উদ্দেশ্যে কোন কোন মহল থেকে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ আমরা সেটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, নিজের অর্থেই পদ্মা সেতু করবো৷রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে রেলের উন্নয়নে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷

প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো পদ্ধতি ভেঙে রেলকে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম চারটি অঞ্চলে ভাগ করলে আরো উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি৷আমাদের দেশের রেলের যাত্রা শুরু ব্রিটিশ আমল থেকে৷ সেজন্যই এটাকে পূর্বাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চল এভাবে করা হয়েছে৷ আমি মনে করি এখন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে এটাকে নতুনভাবে ডিমারকেশন করা দরকার এবং আরো কয়েকটা অঞ্চলে ভাগ করা দরকার৷

বাংলাদেশের মানচিত্র অনুযায়ী উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম এই চারটি ভাগে ভাগ করে কার্যক্রম চালালে রেল আরো বেশি সেবা দিতে পারবে বলে আমি মনে করি, উপস্থিত রেলমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি৷দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রেল ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে৷ কাজেই দক্ষিণাঞ্চলে কিন্তু রেল যাচ্ছে৷ পর্যায়ক্রমিকভাবে এটা আমরা আরো দক্ষিণে নিয়ে যাবো৷

দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনায় পায়রা বন্দর,নৌ ঘাঁটি, জাহাজ নির্মাণ কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো ও শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা৷বিনিয়োগ টানতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য রেলপথটাকে আরো উন্নত করা, যা জনগণের যোগাযোগকে আরো সুন্দর করবে, পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উত্‍সাহিত করছি৷বিনিয়োগ করতে গেলে প্রথমে দেখে-পণ্যটা পরিবহন হবে কীভাবে৷ পণ্য পরিবহন ও রপ্তানি করতে গেলে সবার আগে দেখবে বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো আছে কি না৷

দেশের সাত বিভাগে সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের৷ এই বাংলাদেশের উন্নয়ন করা খুব কঠিন কাজ না৷ এটা আমরা করতে পারবো৷ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, এই ধারা আমাদের বজায় রাখতে হবে৷ আর বজায় রাখতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার৷রেল কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলকে আমি সব থেকে গুরুত্ব দিই৷ আমি মনে করি আপনাদের জন্য একটা মেসেজ৷ আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন৷

আগামীতে রেলকে আরো সমপ্রসারিত করার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যত রেললাইনের ডিজাইন হবে সব আমরা ডুয়েল গেজে করব৷ শুরুতেই আমাদের করে ফেলা ভাল যাতে ভবিষ্যতে কাজে লাগে৷আমরা মনে করছি, বাংলাদেশের রেলওয়েটা সবটা মিলে ডুয়েল গেজে চলে যেতে পারি৷ কারণ মাথায় রাখতে হবে- আমরা এখানেই পড়ে থাকবো না৷ আমাদের অর্থনীতি আরো এগোবে৷ আমরা আরো উন্নত হব৷জামালপুর ও গাইবান্ধার মধ্যে একটি বহুমুখী টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই টানেল রেলপথসহ বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী হবে৷ একনেকে পাশ হওয়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কঙ্বাজার হয়ে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী৷এ প্রকল্পকে মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের জন্য সংশোধনী আনতে এবং ঢাকার আশপাশেরজেলাশহরগুলোর সঙ্গে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি৷

এসময় শেখ হাসিনা রেলের উন্নয়নে গত সাড়ে পাঁচ বছরে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন৷ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-২০১৫) ওেরলের জন্য ১২১০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, ৫০৬ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ এবং ১৫৩৫ কিলোমিটার রেলপথ সংস্কারের কথা রয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ এবং রেলের মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে নির্দেশ দেন৷ রেলের নিরাপত্তা বাড়াতে আরো নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ এবং কমিউনিটি পুলিশ গঠনেরও পরামর্শ দেন তিনি৷এছাড়া রেলের জমি উদ্ধার এবং রেলপথকে নিরাপদ করতেও নির্দেশ দেন তিনি৷ আপনারা রেলের জায়গা দখলমুক্ত যেরকম শুরু করেছেন, দখলমুক্ত করতে হবে৷ আর এই রেললাইনের পাশে বস্তি করে অ্যাঙ্েিডন্ট ঘটানো, রেল স্পিডে চলতে পারে না; এটা কিছু উদ্যোগ আপনারা নিয়েছিলেন, এটা কিন্তু আপনাদের করতে হবে, বলেন তিনি৷দখল ও দুর্ঘটনা ঠেকাতে রেললাইনের দুই পাশে তারকাঁটার বেড়া দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি৷