দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৩অক্টোবর: যারা এদেশে গণতন্ত্র চায় না তাদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিএনপি্ত এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না৷ তিনি বলেন, বিশ্বে এখন বাংলাদেশ রোল মডেল৷বৃহস্পতিবার বিকেলে গণবভনে সামপ্রতিক ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম)-এর দশম শীর্ষ সম্মেলনের সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন৷ সেখানে তিনি সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷একই সঙ্গে তিনি তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন৷ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷ সম্মেলনের শেষ অংশে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন৷
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিদেশি মহলে কোনো কথা হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে৷আন্দোলনের যতই ঘোষণা দেয়া হোক না কেন, তাতে কোনো লাভ হবে না, দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচার জন্যই হরতালের মতো কর্মসূচির ইন্ধন দিচ্ছে খালেদা জিয়া এ মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা৷জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ যেখানেই ঘটুক না কেন তা শক্ত হাতে দমন করার আহ্বান জানান তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতালিতে অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলনে তিনি বিশ্ব নেতাদের বলেছেন, তাঁর সরকার কখনো সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে প্রশ্রয় দেবে না৷ বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ দেওয়ায় তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ তাঁদের বাংলাদেশ থেকে আরও কৃষিশ্রমিক নেওয়ার কথা বলেছেন৷বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীন এ মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই৷সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা এদেশের গণতন্ত্র চান না তাদের সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ নেই৷ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় তাদের সঙ্গে সমঝোতায় বসার চেষ্টা কেন করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷
এ সময় বিবিসির সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই এটা ঠিক না, এটা মিথ্যা অভিযোগ৷ আপনারা জানেন তিনি কেবিনেট মিনিস্টার ছিলেন৷ সেখান থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে৷ দলের প্রসিডিয়াম সদস্যপদ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ আগামীকাল- শুক্রবার দলের প্রসিডিয়াম সদস্যদের মিটিং রয়েছে এ বিষয় নিয়ে আবারো আলোচনা করা হবে৷ আমি ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি৷
রোববারের হরতালের কোনো যৌক্তিকতা নেইু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷এ সময় সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০০ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দেয়া হচ্ছে, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন করছে এ সরকার দেশের স্বার্থে আওয়ামী লীগের সরকার অনেক কিছুই সহ্য করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷তিনি বলেন, একদিকে আপনারা যুদ্ধপরাধীর বিচার চাচ্ছেন৷ অপরদিকে সেই যুদ্ধপরাধীদের সহযোগিতাকারী দল বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আকুলি বিকুলি করছেন৷
বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনের আগে ট্রানজিট গভার্নমেন্ট হিসেবে ছিলাম৷ তখন অনেক কিছু করতে পারি নাই৷ এখন আমরা দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকার৷ এখন দেশের একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক৷বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু-চারটা মানুষ মারার নাম আন্দোলন নয়৷ আন্দোলনের নামে আবারো হত্যা-অরাজকতা চললে সরকারকে কঠোর ভূমিকায় দেখতে হবে৷এ সময় আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা হলে তা প্রতিহত করতে জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য এত আকুলি-বিকুলি কেন? কী দিয়েছে বিএনপি, বলেন? কেন তাদের জন্য এত দরদ? তাদের জন্য এত দরদ কোথায় পেলেন?প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবিসি এখনো আলোচনাতেই আটকে আছে৷ আপনারা আলোচনা আলোচনা করেন৷ আপনাকে যদি কেউ খুন করার চেষ্টা করে বা কেউ আপনার আত্মীয়কে হত্যা করেন, আমি যদি বলি আপনি তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, আপনি করবেন?
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামীগের সভাপতি বলেন, জাতির জনকের খুনিদের কারা পুনর্বাসিত করেছে? বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করেছে৷ ২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে৷ আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে৷ এতে খালেদা জিয়া ও তার ছেলের মদদ দিয়েছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় হাওয়া ভবন ছিল৷ দু-পয়সা কামানো যেত৷ আমরা তো হাওয়া ভবন খুলিনি৷ দু-পয়সা কামাতেও আসিনি৷ আমরা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি৷এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংলাপ প্রসঙ্গে তার কথাগুলো গণমাধ্যমে ভালোভাবে প্রচারের আহ্বান জানান সাংবাদিকদের৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের হুমকি উনি (খালেদা জিয়া) তো অনেক দিলেন৷ তাদের আন্দোলন হলো মানুষ খুন করার আন্দোলন৷ তারা তখন (৫ জানুয়ারির আগে) যে কাজটি করতে পেরেছে, এখন সেটা পারবে না৷ তখন ছিল অন্তবর্তীকালীন সরকার৷ এখন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়৷ এখন তারা দেশের একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক না এর পরিণতি কী হয়৷ এখন তাদের (জনগণ) কিছু হবে না, এটাই মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই৷খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন হরতাল দেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চোরের মনে পুলিশ পুলিশ৷ হরতাল ডাকা হয়, যেন আদালতে হাজিরা না দিতে হয়৷ ওনার এত ভয় কিসের জন্য৷ নির্দোষ হলে আদালতে আসেন৷ আমি তো আদালতে হাজিরা দিতে ভয় পাইনি৷ মামলার তারিখ আসলেই উনি হুমকি-ধমকি দেন৷ পলায়নপর মনোবৃত্তি বাদ দিতে তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান৷বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, বিদেশে বিভিন্ন নির্বাচন জিতে আসছি৷ উনি কি এটা দেখেন নাপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে সরকার৷
আসেম সম্মেলনে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কানেক্টিভিটির বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এতে করে যেন প্রতিটি দেশ লাভবান হতে পারে৷ মূলত এই এজেন্ডা ছিল জাতিসংঘের৷ এ ছাড়া জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, আমরা উন্নত দেশগুলোতে আমি প্রস্তাব দিয়েছি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবেন না৷ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জড়িতদের কোনো ধর্ম নেই৷ জঙ্গি জঙ্গিই, তাদের কোনো বর্ডার নেই৷ আসেম সম্মেলনে আগত বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাত, সৌজন্য বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় জলবায়ু, অভিবাসন, সহস্রাব্দ লক্ষ উন্নয়ন, এশিয়া অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী৷ প্রশ্নকারী সাংবাদিকরা ইন্টার-পার্লামেন্ট ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে (সিপিইউ) বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে প্রশ্ন না করায় সাংবাদিকদের কৃপণ বলে টিপ্পনি কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, আইপিইউ ও সিপিএতে জয়ী হলাম৷ কোনো সাংবাদিক একটু অভিনন্দনও জানাল না৷ সাংবাদিকরা এতো কৃপণ, আগে জানতাম না৷
আইপিইউ ও সিপিইউতে বাংলাদেশ জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ওখানে কারচুপির কোনো সুযোগ ছিল না৷ মাত্র এক সপ্তাহের গ্যাপে পৃথিবীর কোনো দেশ আইপিইউ ও সিপিইউ এর মতো দুটো প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে বিজয়ী হয়নি৷ যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন্ততাঁদের যে দূরদর্শিতার অভাব, সেটা প্রমাণ হয়েছে৷ বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা কথা বলছে৷ কিন্তু তাদের রাষ্ট্রপ্রধানরা একটা প্রশ্নও তোলেনি৷ প্রত্যেকে আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে৷ তারপরও ওই নির্বাচনে কেন আনকনটেস্ট (১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) অনেক উকিল এটা নিয়ে মামলা করতে যায়৷