দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২অক্টোবর: জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে দেয়া দন্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির জন্য আগামী ২ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার আপিল শুনানির জন্য এ তারিখ ধার্য করে দেয়৷ বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন৷ রাষ্ট্রপৰে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে গত ৫ আগস্ট আসামীপক্ষ ও ১২ আগস্ট রাস্ট্রপক্ষ আপিল দায়ের করে৷ গোলাম আযমকে নির্দোষ দাবী করে তার খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করেছে আসামীপক্ষ৷ অপরদিকে তার সর্বোচ্চ শাসত্মি চেয়ে আপিল করেছে রাস্ট্রপক্ষ৷ রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে বলা হয়, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেয়া শাসত্মি অপর্যাপ্ত৷ এতে সর্বোচ্চ শাসত্মি ফাঁসির আরজি পেশ করা হয়েছে৷ ইতোমধ্যে এ আপিলের সার সংক্ষেপও দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ৷গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদন্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার গত ১৫ জুলাই রায় ঘোষণা করা হয়েছে৷ আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে করীরের নেতৃত্বে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক জনাকীর্ণ ট্রাইবু্যনালে এ রায় ঘোষণা করেন৷
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনা ৫ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টির সবগুলো অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে উলেস্নখ করে এ রায় প্রদান করে ট্রাইবু্যনাল৷ এগুলো হলো ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সংশ্লিষ্টতা এবং হত্যা ও নির্যাতন৷ অভিযোগের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়দায়িত্ব হিসেবে আনা হয়েছে সুপরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊধর্্বতন নেতৃত্বের দায়)৷ রায়ে ট্রাইবু্যনাল, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত পাঁচ ধরনের অভিযোগের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে ১০ বছর করে, তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে ২০ বছর করে ও পঞ্চম অভিযোগে ৩০ বছর কারাদন্ড দিয়েছে৷ এ সাজা একটির পর অন্যটি কার্যকর হবে বলে রায়ে বলা হয়৷ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাকিস্থানি বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র সংক্রানত্ম ছয়টি, সহযোগিতা সংক্রানত্ম তিনটি, উস্কানির ২৮টি, সম্পৃক্ততার ২৩টি এবং ব্যক্তিগতভাবে হত্যা-নির্যাতনের ১টিসহ মোট ৬১টি অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
রায়ে ট্রাইবু্যনাল উল্লেখ করে, গোলাম আযম যে অপরাধ করেছেন তা মৃতু্যদন্ডতুল্য৷ কিন্তু তাঁর বয়স ৯১ বছর৷ এ বিবেচেনা করে তাঁকে ৯০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হলো৷রায়ের বিরম্নদ্ধে আইনে উলেস্নখিত সময়ের মধ্যে আপিল করেছে উভয়পৰ৷
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইবু্যনালে দেয়া মৃতু্যদন্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে৷ ট্রাইবু্যনালে মৃতু্যদন্ড রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারম্নজ্জামানের করা আপিলের শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে৷ একই দিন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃতু্য কারাদন্ডের রায় দেয়৷ ট্রাইবু্যনাল তাকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছিল৷
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃতু্যদাদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ এই দন্ড গত বছর ১২ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়৷ ট্রাইবু্যনাল তাকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছিল৷ পরে উভয়পৰ আপিল দায়ের করে৷আমৃতু্য কারাদন্ডের বিরুদ্ধে আপিল করা সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম মৃতু্যবরণ করায় তার আপিল গত ১৬ সেপ্টেম্বর অকার্যকর ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ৷