cpd1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২১অক্টোবর: বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চললেও সম্ভাবনার সবটুকু ব্যবহার করতে এখনও পারছে না বলে বিশ্ব ব্যাংকের মূল্যায়ন৷ এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল দেখা গেলেও তা টিকে থাকবে কতদিন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের৷২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক৷ এর পিছনে প্রধান ভূমিকা রাখবে সরকারি খাতে বিনিয়োগ র্বদ্ধি৷ এর ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ব্যক্তি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রেমিটেন্স ফ্যবাহ বাড়বে যে কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও র্বদ্ধি পাবে৷ তৈরি পোষাক খাতের মজুরি র্বদ্ধিও জিডিপি র্বদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা ফ্যকাশ করে বিশ্বব্যাংক৷

বাংলাদেশের গতিচিত্র নিয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ মূল্যায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার শঙ্কার কথাও জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি৷মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, তার সঙ্গে সংস্থার বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জোহানসেন জাটও ছিলেন৷দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ ভালো করছে বলে বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ৷ শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধিও ধরা পড়েছে তাদের চোখে৷

বিদু্যত্‍ ও গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি হলেও েেযাগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ ঝরেছে বিশ্ব ব্যাংকের কন্ঠে৷ বহু বিতর্কের পর নিজেরা সরে এলেও পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷চলতি অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হওয়ার আভাস দিয়েছে ঋণদাতা বহুজাতিক সংস্থাটি৷ তবে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা৷

সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এগুচ্ছে৷ তবে সক্ষমতার চেয়ে কম গতিতে৷ বিদু্যত্‍ ও গ্যাসের উন্নতি হয়েছে৷ কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি৷ এক বছর আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে সময় লাগত; এখন তার চেয়ে বেশি সময় লাগে৷দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি: দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০১৪ সালে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে আসবে৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে ছিল৷ ২০১০ সালে ছিল ৩১ শতাংশ৷জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী, ২০১৫ সালে তা ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়৷

তবে গত এক দশকের (২০০০ থেকে ২০১০ সাল) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিচ্ছে, ২০১৪ সালে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে আসবে৷

বর্তমানে বাংলাদেশের ২৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দুদিন আগেই বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে এই হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে৷ ২০৩০ সালেই দারিদ্র্যমুক্ত হবে দেশ৷দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নেও বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা ঝরেছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে৷

২০১৩ সাল শেষে কর্মসংস্থান বেড়ে ৫ কোটি ৬৫ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে৷ ২০১০ সালে তা ছিল ৫ কোটি ১৯ লাখ৷বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি বাড়ায় দেশে বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান রেখেছে,বলেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন৷প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ: চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সরকার ধরেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ৷ বিশ্ব ব্যাংক এর চেয়ে কম ধরলেও তা-ও সন্তোষজনক মনে করছে তারা৷ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়৷ এবার তা ৬ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হবে বলে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস৷

কৃষি খাতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, শিল্প খাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়বে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ৷৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে সন্তোষজনক উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়৷ ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির জন্য বর্তমানের ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ (জিডিপির) ৩৪ থেকে ৩৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে৷

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আভাস আরেকটু বেশি৷ এডিবি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা দেখছে৷৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার আশার কথাও শুনিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত৷

অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে আভাস দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়বে৷ তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে৷জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে ২২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে৷ এটি খুবই সন্তোষজনক৷ এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব৷

ঝুঁকি রাজনীতিতেই: এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল দেখা গেলেও তা টিকে থাকবে কতদিন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের৷ জাহিদ হোসেন বলেন, এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে৷ তবে অনিশ্চয়তা কাটেনি৷

রাজনৈতিক পরিস্থিতির এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে প্রভাব ফেললে অর্থনীতি ফের নেতিবাচক ধারায় যাবে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির৷ সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, চাপে পড়তে পারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ৷ তৈরি পোশাক কারখানার সমস্যা ইউরোপের বাজারে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে এই শিল্পের পরিবেশ উন্নত করতে নেওয়া পদক্ষপগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক৷

সরকারি ব্যাংকগুলোর দুরবস্থাও আর্থিক খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করেছে সংস্থাটি৷পদ্মা সেতু দ্রুত চাই: নানা তিক্ততার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করলেও এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক৷

প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো খাতের চারটি প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে নিয়ে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে৷অন্য তিনটি প্রকল্প হচ্ছে- ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল ট্র্যাকে উন্নীত করা এবং বিবিয়ানার গ্যাসভিত্তিক দুটি বড় বিদু্যত্‍ প্রকল্প বাস্তবায়ন৷

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৬৬০ কোটি ডলারের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে৷ সংস্থাটির হিসেবে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে ২ শতাংশে দাঁড়াবে, শিল্প খাতে বিনিয়োগ দুই অঙ্কের কৌঠায় ঠেকবে৷ সঙ্গে সেবা খাত চাঙ্গা হওয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ৷ অন্যদিকে ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করলে ভোগে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৯ ভাগ৷

বিনিয়োগে ৬ দশমিক ৫ ভাগ, রফতানিতে ৬ শতাংশ, আমদানিতে ২ শতাংশ৷ সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ৷৮ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক৷ এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে যে সংস্কার চলছে সেটিবিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশন প্রধান ইউহানেস জাট জানান, ইবোলো ভাইরাসে বৈশ্বিকভাবে ৪০০ মিলিয়ন ডলার জরুরি সাপোর্ট দিয়েছে৷ তবে বাংলাদেশের জন্যতেমন কোনো সাপোর্ট এই মুহুর্তে দরকার নেই৷