দৈনিকবার্তা-পাইকগাছা,২১অক্টোবর: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উত্সব শ্যামা পূজাকে সামনে রেখে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমানত্ম দিয়ে ভারত থেকে বিষ বাস্পের মতো আসছে সর্বনাশা মাদকদ্রব্য, পটকা বাজী সহ বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় পণ্য সামগ্রী৷ ভারতীয় মাফিয়া চক্র শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ অভ্যনত্মরে পৌছে দিচ্ছে এসব মাদকসহ অন্যান্য সামগ্রী৷ আর দেশীয় চোরাচালানীরা নিত্য নতুন কৌশলে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের অভ্যনত্মরে তৃণমূল পযর্ায়ে৷ উভয় দেশের চোরাচালানীদের কাছে এসব ব্যবসা অত্যনত্ম লাভজনক হওয়ায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অব্যাহত রেখেছে তারা৷ একদিকে তাদের ভয়াল ব্যবসা অন্যদিকে দেশের নেশাগ্রস্থ যুব সমাজ ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের পাশাপাশি অন্যান্য সামগ্রী চোরাপথে দেশে আসায় সরকার প্রতিদিন বিপুল পরিমান রাজস্ব বঞ্চিত ও দেশীয় পণ্য ৰতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যাপক ভাবে৷ ওপারে প্রশাসনিক দুর্বলতা, দীর্ঘ সীমানত্ম’র অসংখ্য পয়েন্ট আর অভ্যনত্মরে আঞ্চলিক পযর্ায়ে প্রশাসনের পরোক্ষ নিস্ক্রীয়তায় মাদকের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে৷
সরেজমিনে খোঁজ খবর ও ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে ফেনসিডিল সহ মাদকদ্রব্যের এখন চাহিদা এতবেশী যে, শুধুমাত্র এদেশে পাচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সীমানত্মের বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে নকল ফেনসিডিলের কারখানা৷ মাদকাসক্তদের কাছে ফেনসিডিলের অপর নাম ডাইল, ফান্টু, মধু বা জুস হিসেবে৷ দেশের অভ্যনত্মরে শহরাঞ্চল ছাড়াও তৃণমূল পযর্ায়ে গড়ে উঠেছে ডাইল বা মধু পট্টি৷ স্থানভেদে নেশাখোরদের কাছে এখন ফেনসিডিল, ডাবুর ও হেরোইন সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ মাদকদ্রব্যের দরদাম উঠা নামা করে আবার দু’পারের প্রশাসনিক তত্পরতার উপর সঙ্গতি রেখে৷ চারিদিকে এখন শুধু ফেনসিডিল, ডাবুর, ম্যাজিক মোমেন্ট, ভোটকা, অফিসার্স চয়েস, রাম, হেরোইন, ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদকের ছড়াছড়ি৷ অবস্থাদৃষ্টে এর বিরম্নদ্ধে শুধু প্রশাসনিক নয়, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরম্নরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সুধিসমাজ৷ জানা গেছে, দক্ষিণ পশ্চিম সীমানত্ম এলাকা প্রায় ৬শ কিলোমিটার৷ সুন্দরবন এলাকার রায়মঙ্গল নদীর কাছে কৈখালী থেকে কুষ্টিয়ার হার্ডিং ব্রীজ পয়েন্ট এই দীর্ঘ সীমানত্মের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে চোরাচালান ঘাট৷ উভয় সীমানত্মে সীমানত্মরক্ষী বাহিনীর টহল শিথিল হলেই বানের পানির মত মাফিয়া চক্র ঢুকিয়ে দেয় মাদকদ্রব্য৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভাবী শিশু, কিশোর ও মহিলাদের কাজে লাগানো হচ্ছে মাদকদ্রব্য পারাপারে৷ সূত্র জানায়, ওপারে সীমানত্মরক্ষীদের সাথে মাফিয়া চক্রের বিশেষ করে মাদকদ্রব্য পাচারে ইতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান৷ নেশাদ্রব্য পাচারেও নাকি তাদের টহল ও মনোভাব শিথিল রয়েছে৷ কিন্তু এপারে সীমানত্মরক্ষীদের ভূমিকা কঠোর হলেও দীর্ঘ সীমানত্ম জটিলতা ও দেশের অভ্যনত্মরে তৃণমূল পযর্ায়ে প্রশাসনের নামে ক্যাশিয়ারদের পরোক্ষ সহযোগিতায় নেশাজাতদ্রব্যর বেচাকেনা বেড়েই চলেছে৷ আর এই নেশার টাকার যোগান দিতে যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে৷ তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৯০ এর দশক থেকে মূলত ভারত থেকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মাদকদ্রব্য আসা শুরম্ন হয়৷ ভারতের বোম্বে থেকে রোনপোলেঙ্ক কোম্পানী কফ সিরাপ হিসাবে ফেনসিডিল বাজারজাত করে বেশ আগে থেকেই৷
কিন্তু কতর্ৃপক্ষ জানতে পারে বা ব্যাপকভাবে প্রচার হয় যে, ফেনসিডিলে নেশা হয়৷ এরপর তারা এ্যালকোহল’র মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়৷ চাহিদা এবার তুঙ্গে চলে যায়৷ এক পযর্ায়ে তা নিষিদ্ধ হয়৷ কিন্তু উত্পাদন বন্ধ হয়নি এক দিনের জন্য হলেও৷ পযর্ায়ক্রমে বাংলাদেশের নেশাখোরদের কাছে ফেনসিডিলের চাহিদা বাড়তে থাকলে পাচার ও বেড়ে যায় বহুগুনে৷ সেই থেকে ফেনসিডিল আসছে তো আসছেই৷ এমন কোনো দিন নেই যে, মাদকদ্রব্য দেশের অভ্যনত্মরে ঢুকছে না৷ সাতক্ষীরার দেব হাটার হাড়দ্দাহ, শাখরা, খানজানিয়া, কালীগঞ্জের উকশা, বাশবাড়িয়া, রসুলপুর, বসন্ত পুর, শ্যামনগরের কৈখালি, সদরের ভোমরা, গাজীপুর, ঘোনা, বৈকারী, কুশখালী, তলু গাছী ও কলারোয়ার কেড়াগাছী, কাক ডাঙ্গা, ভাদিয়ালী, মাদরা, হিজলদি, সুলতান পুর ও চান্দুড়িযা সীমানত্ম সহ ৩০ টি পযেন্ট এব যশোরের সাদীপুর, বাগ আঁচড়া, শিখারপুর, মাসিলা, ঝিনাইদহের যাদপুর, সামানত্মা, চুয়াডাঙ্গার জীবন নগর রাজাপুর, দর্শনা, মেহেরপুরের গাংনী, মজিবনগর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিাঞ্চলের বিভিন্ন ঘাট এলাকা দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে আসে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য৷ ঘাট এলাকা থেকে ফেন্সি নির্দিষ্ট গনত্মব্যে পৌছাতে ব্যবহার করা হয় বাস ট্রাক, ট্রেন, মাইক্রো, প্রাইভেট, মোটর সাইকেল ও সর্বপরি পথচারী বেশে লোকদের বাজার ব্যাগে৷ বর্তমানে ফেন্সি পাচারে দেশের অভ্যনত্মরে ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন সব কৌশল অবলম্বন করছে৷ কাঠ, কুমড়া, কলা, তরমুজ, সাইকেলের টিউব, প্রাইভেট, মাইক্রো, ট্রাক সহ প্রায়ই ধরাও পড়ছে তারা৷ কিন্তু এক দিনের জন্য হলেও বন্ধ হয়নি ব্যবসা৷
বেনাপোল, মহেশপুর, চৌগাছা, সামানত্মা, রাজগঞ্জ, কেশবপুর, তালা, পাটকেলঘাটা, দর্শনা, জীবননগর, মেহেরপুর, কলারোয়া, দৌলতপুর, যুগিবাড়ী, বোয়ালিয়া, পাঁচপোতা, বেলেডোঙ্গা, সোনাবাড়িয়া, বুচতলা, রয়েরডাঙ্গা, রামভদ্রপুর, গয়ড়া, কাজিরহাট, ঠাকুরবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ফেনসিডিলের চোরা গুদাম বা আড়ত্ রয়েছে৷ বিভিন্ন সময় বিজিবি, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতে বিপুল পরিমান ফেন্সিডিল ও চোরাচালানীসহ ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আটক হলেও তা বন্ধ করা যায়নি৷ শুধুমাত্র মাঝে মধ্যে স্পট পরিবর্তন হয়৷ তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী সহ প্রত্যনত্ম এলাকার প্রভাবশালীরা মাদক সহ এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
বাংলাদেশে ফেনসিডিলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রোনপুলেঙ্ক ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সীমানত্মের বনগাঁ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, বানপুর, বহরমপুর ও বারাসাতসহ বিভিন্নস্থানে নকল ফেনসিডিলের কারখানা রয়েছে৷ যেখানে থেকে প্রতিদিন নাকি চাহিদানুযায়ী ২/৩ লাখ লিটার ফেন্সি উত্পাদন হয়৷ যা কিনা বোতলজাতের পাশাপাশি ড্রামে ভর্তি হয়ে এপারে আসে৷ এবং নিরাপদ স্পটে রেখে তা বোতলজাত হয়৷ সূত্র জানায়, ভারতীয় দামের তুলনায় বাংলাদেশে ১ বোতল ফেন্সির দাম ৪ গুণ৷ বর্তমানে বাংলাদেশে এক বোতল ফেন্সির দাম রাখা হচ্ছে সীমান্ত এলাকায ২০০-২৫০ এছাড়া খুলনা সহ তার পাশর্্ববতর্ী এলাকায় ৫০০/৭০০ টাকা,ঢাকা সহ তার পাশের এলাকায় ৮০০-১১০০ টাকা পর্যনত্ম৷ স্থানভেদে এর দাম আরও বেশী৷ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত ফেনসিডিল সেবনে কর্মশক্তি ও উদ্যম হারিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে তিলে জীবনের আলো নিভে যায়৷ তাদের মতে আসল ফেন্সির চেয়ে নকল ফেন্সি আরো বেশি ক্ষতিকারক৷ জানা গেছে, ফেন্সিডিলে রয়েছে কোডিন, ফসফেট, গোম্যাথাজিন, হাইড্রোক্লোরাইড ও অঙ্েিজন হাইড্রোক্লোরাইড৷
শরীরের ভেতর এই কোডিন ফসফেট বেশি বেশি পরিমান প্রবেশ করলেই নেশা হয়৷ নিয়মিত ফেন্সি সেবনে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, হরমনের বিকৃতিতে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়৷ যৌন ক্ষমতা লোপ, চর্মরোগ সহ মানসিক বিকারগ্রস্থ পয়ে পড়ে৷ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরম্ন করে ভ্যান চালক ব্যবসায়ীসহ কর্মজীবি বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষরা ক্রমাগত ফেন্সিডিল ও হেরোইনে আসক্ত হয়ে ধাবিত হচ্ছে ধ্বংসের দিকে৷ এ ব্যাপারে এই মুহুর্তে প্রশাসনের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন জোরদার, নয়তোবা ধ্বংসের দিকে দ্রম্নত ধাবিত হবে যুব সমাজ৷
এদিকে দৰিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি শ্যামা পূজাকে সামনে রেখে সেজেছে ভিন্ন রম্নপে৷ অনেকেই কপিলমুনিকে এই মুহুর্তে দ্বিতীয় কলকাতা হিসেবে অভিহিত করছেন৷ বিভিন্ন মুদি, কসমেটিঙ্ সহ কাপড়ের দোকানে উঠানো হয়েছে ব্যাপক পরিমাণ ভারতীয় পণ্য৷ এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি কাপড়, তৈরী পোষাক, পটকা বাজী, সুগন্ধী সহ বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় পণ্য৷ এদের মধ্যে দীপু স্টোর, রিংকু স্টোর, শিবানী স্টোর সহ অশোক সাধুর মালিকানাধীন দোকানগুলোতে একপ্রকার প্রকাশ্যে পণ্য সামগ্রী সাজিয়ে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে৷ সূত্র জানায়, এদের দোকান ছাড়াও স্ব-স্ব গোপণ গুদাম রয়েছে৷ বিভিন্ন পর্বনকে সামনে রেখে তারা বেশ আগে ভাগেই এসব অবৈধ পণ্য গুদামজাত করে রাখে৷ অথচ এতকিছুর পরেও স্থানীয় প্রশাসন এক অজ্ঞাত কারণে কোনো পদৰেপ নিচ্ছেননা৷ সূত্র জানায়, ভারতীয় পণ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্থানীয় প্রশাসন কথিত ক্যাশিয়ার কাম দালালের মাধ্যমে মাসোহারা নিয়ে থাকে৷