দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৯অক্টোবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে মান বজায় রাখতে শিক্ষার সকল পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি আলাদা কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, শিক্ষাই হলো দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার চাবি কাঠি৷তিনি বলেন, আলাদা কমিশন ছাড়া যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে না৷ শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রতিদিনের কাজ বিধায় এটা একটা জটিল ব্যাপার বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷
রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷ এ ব্যাপারে যে কোন ধরণের জটিলতা এড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে৷বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, সরকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন পে কমিশন বিভিন্ন বেতন স্কেলের মধ্যকার পার্থক্য নিরসন করবে৷এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারের পরিবর্তে ছয় হিসাব করে শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারে একটি প্রাক-প্রাথমিক স্কুল চালু করার প্রসত্মাব দিয়েছেন৷ ডে কেয়ার সেন্টার থেকে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে তিনি এ প্রসত্মাব দেন৷তিনি ঢাকার বাইরে আনত্মঃস্কুল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে ক্রীড়া ৰেত্রে ও পাঠ্য বহির্ভূত কার্যক্রমে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা গঠন এবং মেধা বিকাশে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন৷মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকান্ডে আরো গতিশীলতা আনতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে এবং শিক্ষা নিতে আগ্রহী চাকরিজীবীদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে আনানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করেছে৷সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের জন্য পৃথক কমিশন গঠন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, একটি মূল কমিশন থাকতে পারে৷ সাথে আরেকটা কমিশন থাকবে, যারা শিক্ষক নিয়োগ দেবে৷
তবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন করে কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী৷একটি পরিবর্তন আনতে গেলে অনেক জটিলতা দেখা দেয়,বলেন তিনি৷অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন৷নতুন পে-কমিশন হলে বেতন বৈষম্যের সমাধান হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সমাজকে গড়ে তোলার ভিত্তিটা এই জায়গা থেকেই গড়ে ওঠে৷ যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে সেভাবেই ভবিষ্যতের কর্ণধাররা গড়ে উঠবে৷ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী৷প্রশিক্ষণ খুব দরকার৷পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে মানিয়ে চলতে প্রশিক্ষণখুবই গুরুত্বপূর্ণ,বলেন তিনি৷শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা একান্ত প্রয়োজন৷এজন্য রাজধানীর বাইরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করার নির্দেশ দেন তিনি৷পার্বত্য অঞ্চল, দ্বীপ, চর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে স্কুল ভবন নির্মাণের তাগাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সব জায়গায় সমতলের নিয়ম চলবে না৷ সেখানে বিশেষ নিয়ম করতে হবে৷
ছাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নকশা করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোতলা করলে, একবারের করা উচিত৷ না হলে আমাদের দেশের চালা ঘরের মতো ছাদ করা উচিত, যেন পানিটা সরতে পারে৷ক্রস ভেন্টিলেশন থাকতেই হবে৷ কারণ এক সাথে অনেক শিক্ষার্থী বসবে৷শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেব৷ তখন আর বই নিয়ে ছোটাছুটি করতে হবে না৷ তবে বইয়ের প্রয়োজন আছে৷
বিনামূলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বছরের শুরুতেই যে পুস্তক দেওয়া হচ্ছে- সেগুলোর মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ে তো আমি খারাপ কিছু দেখছি না৷ আমরা তো শুরু করেছি৷ আগে তো দেওয়াই হতো না৷শখ হাসিনা বলেন, তার সরকার টপ্রাথমিক শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়৷শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয় না৷ আর ধর্মীয় শিক্ষা থাকলে কাউকে বিভ্রান্তও করা যায় না৷নিরক্ষরতা দূর করতে ছাত্রলীগের সদস্যদের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷
নিজ উদ্যোগে স্কুল ফিডিং চালাতে এলাকার বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধি, স্কুল কমিটি ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি৷ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোসত্মাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন৷ মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন এবং মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উধর্্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷