দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৮অক্টোবর : আন্দোলন ও গণঅভূ্যত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীনদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক নাগরিক স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন৷ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অকুতোভয় কন্ঠস্বর শীর্ষক নাগরিক স্মরণ সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতাসীনরা দেশ নিয়ে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে৷ এই ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে৷ এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বিএনপি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে৷তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীনরা বিভক্তির রাজনীতি শুরু করেছে৷ তারা এখন দেশকে বিভক্তি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে৷ কিন্তু দেশের জনগণ তাদের এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে৷
আইন ও সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতাসীনরা জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল৷মির্জা ফখরুল বলেন, পিয়াস করিমের স্থান ছিল শহীদ মিনার এবং তাকে শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা জানানো আমার উচিত ছিল৷ কিন্তু কিছু অর্বাচিন বালক এবং যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানে না তারা এটা হতে দেয়নি৷ পিয়াস করিমের প্রতি স্মৃতি চারণ করে তিনি বলেন, আমি আমার একজন প্রিয় মানুষকে হারালাম৷ এবং দেশও একজন জ্ঞানি ব্যক্তি হারালো৷ আর এই ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়৷ক্ষমতাসীনদের প্রচ্ছন্ন মদদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে দলীয়করণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ পিয়াস করিমের শোক সভায় ফখরুল বলেন, কী দুর্ভাগ্য আমাদের! আজকে একটি মহল যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সন্তান বলে দাবি করছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না৷ কিছু দুগ্ধপোষ্য শিশু, অর্বাচীন বালক-তারা আজ এমন সব শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছে৷ এরা কারা? তাদের এই অধিকার কে দিয়েছে?পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার বিরোধিতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে ফখরুল বলেন, আমরা জানি আওয়ামী লীগ এদেশে বিভক্তির রাজনীতি শুরু করেছে৷ তাদের প্রচ্ছন্ন মদদেই ওই মহল এসব কথা বলছে৷
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম গত সোমবার মারা যান৷ কয়েকদিন হাসপাতালের হিমঘরে রাখার পর শুক্রবার ধানমণ্ডিতে নিজ বাসভবনে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনরা শ্রদ্ধা জানানোর পর বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়৷বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন পিয়াস করিম৷ গণজাগরণ আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিতর্কে জন্ম দেয়৷এ কারণে পিয়াস করিমের মৃত্যুর পর তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লাশ শহীদ মিনারে রাখার কথা বলা হলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে; বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়৷বিভিন্ন সংগঠনের বিরোধিতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলার পর শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ নেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে তার পরিবার৷
জাতীয় টেওসক্লাব মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই শোক সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হয়েছে৷ ওই হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে৷ আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ কখনোই ক্ষমতাসীনদের হীন চক্রান্ত সফল হতে দেবে না৷পিয়াসের প্রতি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপি শোক দিবস পালন করেছে৷দেশের নাগরিক সমাজ ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা মরদেহ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিতে চেয়েছিল৷ আমি মনে করি, এটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল৷ কিন্তু একটি মহল তা করতে বাঁধা দিয়েছে৷
সরকার নানা আইন করে জনগণের অধিকার হরণ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নানা আইন করে সরকার জনগণকে বন্দী রাখতে চায়৷ এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে৷সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, ভাষার জন্য প্রাণ দিতে গিয়ে যে শহীদ মিনারের গোড়াপত্তন, আজ তাকে (শহীদ মিনার) আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরতন্ত্রের মিনারে পরিণত করা হয়েছে৷ পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসেছে, এখন সেখানে কোনো ভদ্রলোক, দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রী মানুষের যাওয়াটা ঠিক হবে না৷
কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন,পিয়াস করিমকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি৷ এদেশে যে কজন মার্কসের ওপর উচ্চতর গবেষণা করেছেন, পিয়াস তাদের মধ্যে অন্যতম৷ আজ তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে৷ গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, আইনের শাসন, সাম্যের পক্ষে তিনি (পিয়াস) সব সময় কথা বলেছেন৷ তিনি সব সময় প্রগতির পক্ষে কাজ করে গেছেন৷
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ নিতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সব সমপ্রদায়ের মানুষজন যাতে পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে, সেই চিন্তা থেকে আমরা তাকে অসামপ্রদায়িক একটি স্থান হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম৷ এর বেশি কিছু না৷ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ শ্রদ্ধার জন্য নিতে অনুমতি না দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনি রাজনৈতিক দলের কাছে বন্দী একজন উপাচার্য৷সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী বলেন, যাদের কারণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়েছে, তাদের সঙ্গে বর্তমান শহীদ মিনার দখলকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই৷
শহীদ মিনারে ফরহাদ মজহার, জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ তিন সাংবাদিককে অবাঞ্চিত ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে এই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিন৷ নইলে জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে৷ এভাবে কাউকে শহীদ মিনার দখল করে রাখতে দেয়া হবে না৷সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী,সাংবাদিক শফিক রেহমান,ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম এ আজিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তাহমিনা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের হাসান জাফির তুহিন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ বক্তব্য দেন৷