দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৮অক্টোবর : একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি যত বাড়বে ওই দেশের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তত হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম৷শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সেশনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন৷তিনি বলেন, কী জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে আগে সেটা চিহ্নিত করতে হবে৷ এবং তারপর সে অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে৷ আর এক্ষেত্রে প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়ন৷
রুরাল ডেভলপমেন্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের মধ্যেই দেশের উন্নয়ন জড়িত৷ এক্ষেত্রে তিনি তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন৷ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুণগত শিক্ষার মান উন্নয়ন৷এছাড়া এক্ষেত্রে নেতৃত্বের গুণাবলীকেই প্রাধান্য দেন তিনি৷বাংলাদেশে পাটের অপার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে এ নিয়ে কোনো ভিশন, মিশন ও ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম৷
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য এটি খুবই সম্ভাবনাময় শিল্প৷ আগের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব৷ এতে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে৷তিনি বলেন, পাটের কর্মীদের সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে৷ কারণ খুলনা অঞ্চলে এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে৷
সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কামাল আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে সন্ত্রাস দমনে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, হতাশা ও আর্থিক অনটন থেকেই সন্ত্রাসের পথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে মানুষের৷ তাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারলে মানুষের মধ্যে যে হতাশা রয়েছে তা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং ধীরে ধীরে সন্ত্রাস কমে আসবে৷তিনি সবার জন্য স্বাস্থ্য, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতামুক্ত বিশ্ব, সবুজপৃথিবী গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু আয় কম তাই দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব সম্পদ ব্যবস্থাপনা দরকার৷ নগর জীবনের উপকরণসমূহকে গ্রামেও নিয়ে যেতে হবে৷
তিনি আরো বলেন, অবকাঠামোগত সংযোগের জন্য ভালো সড়ক, রেল, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল চাই৷ ইলেকট্রনিক সংযোগের জন্য চাই টেলি এডুকেশন, টেলিমেডিসিন৷প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পকে শক্তিশালী করতে হবে, প্রযুক্তিকে গ্রামে নিয়ে যেতে হবে৷ গ্রামের উন্নতি করতে হবে৷ কারণ গ্রামের উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়ন৷ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবুল পাকির জয়নুল-আবেদীন (এপিজে) আবদুল কালাম বলেছেন, নেতাকে অবশ্যই দূর দৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে৷ আর এই দূরদৃষ্টিকে কার্যে পরিণত করার জন্য গভীর ভালোবাসা থাকতে হবে৷ থাকতে হবে অনাবিষ্কৃত পথে ভ্রমণের যোগ্যতাও৷ পাশাপাশি সফলতা ও ব্যর্থতার ব্যবস্থাপনাও জানতে হবে তাকে৷
নেতার গুণ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম বলেন, নেতাকে স্বচ্ছভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখাতে হবে৷ শুধু ব্যবসায়িক নেতা নয়, রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রেও এসব বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন৷তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে চাই টেকসই উন্নয়ন পদ্ধতি৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসে জ্ঞান থেকে, জ্ঞান আসে তথ্য থেকে৷ তাই তথ্যে অবাধ বিচরণ থাকতে হবে৷
ভারতের এই মিসাইলম্যান বলেন, কর্মীর সন্তুষ্টি কাজ করে প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশের ওপর৷ আর পণ্যের গুণগত মান নির্ভর করে কর্মীর উত্পাদনশীলতা ও উদ্ভাবনের ওপর৷ কর্মীর আনুগত্য নির্ভর করে কর্মীর সন্তুষ্টির ওপর৷ কাজের পরিবেশ নিভর্র করে ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবনের ওপর৷দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) ডসঙ্গে তিনি বলেন, সার্কের আলাদা স্বাতন্ত্য রয়েছে৷ সার্ক বিশ্বের ২৫ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধি৷ এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য রয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তরুণ এখানে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে এ অঞ্চলের মানুষের সক্ষমতাও সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমরা বন্ধু৷ বাংলাদেশ ও ভারত প্রাকৃতিক অনেক কিছু ভাগাভাগি করছে৷ এর মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র৷এসময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷
দারিদ্র্য, অশিক্ষা, নিরাপদ পানি, গ্রিন এনার্জি, সম্পদের সমবন্টন, সবার জন্য গুণগত শিক্ষা বিশ্বের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব আজ পরিবেশ, মানুষ, অর্থনীতি ও চিন্তার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে সংযুক্ত৷বৈশ্বিক পরিবেশের পরিবর্তন আজ কারো একক সমস্যা নয়৷ কারণ পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে এর প্রভাব পড়ে সারাবিশ্বে৷পরিবহনের অগ্রগতি মানুষের চলমানতা অনেক সহজ করেছে উল্লেখ করে লেখক ও অধ্যাপক এপিজে আবদুল কালাম বলেন, এজন্য মানুষের চিন্তা কিংবা উদ্ভাবন ভৌগলিক অথবা রাজনৈতিকভাবে আটকাবদ্ধও নয়৷ বিশেষ করে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিজ্ঞানী ড. এপিজে আবদুল কালাম এতো ব্যস্ততার মাঝেও ভারত থেকে ঢাকায় এসছেন এমসিসিআই’র আমন্ত্রণে৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান৷ তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের এ আনন্দের দিনে আপনাদের কাছে পেয়ে আরো আনন্দিত হয়েছি৷এমসিসিআই সহ-সভাপতি আনিস এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ডিসিসিআই সভাপতি শাহাজাহান খান প্রমুখ৷