khaleda zia

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৪অক্টোবর : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশে ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করে৷ তারা সকল ধর্মের উপর আঘাত করে৷লোক দেখানো ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখল করে ভোগ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া৷

মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন এসব কথা বলেন৷সবাইকে বিএনপির পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়ে বেগম জিয়া আরও বলেন, বিএনপি সমপ্রীতিতে বিশ্বাসী৷ এই সমপ্রতি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ বিএনপির সঙ্গে থাকলে বোঝা যাবে অন্যদলের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য৷

স্বাধীনতার পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তি দখল করা হয়েছে-এমন অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, এখনো জবরদখল করা হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ এগুলো করে তার দায় বিএনপির উপর চাপাচ্ছে৷খালেদা বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে তা হবে সকল দলের সরকার, সব ধর্মের মানুষের সরকার, জনগণের সরকার৷ বর্তমান সরকারকে খুনি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, দেশের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ এই খুনি সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে৷খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন করে বিএনপির ওপর দায় দেয়ার চেষ্টা করে৷ কিন্তু পরে তদন্তে সরকারি দলের সম্পৃক্ত পাওয়া গেলেও তাদের বিচার করা হয় না৷

বিশ্বজিত্‍ হত্যার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ জড়িত দাবি করে বেগম জিয়া বলেন, নারায়াণগঞ্জের ৭ খুন চন্দন সরকার দেখে ফেলায় ক্ষমতাসীনরা তাকেও হত্যা করেছে৷তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সেটা কোনো দল বা ব্যক্তির সরকার হবে না৷ সেই সরকার হবে সকল দলের, সকল ধর্মের জনগণের সরকার৷বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে৷ কিন্তু তারা বিশ্বাস করে ধর্মহীনতায়৷ আর বিএনপি জনগণের দল, সব দেশ, ধর্মের সঙ্গে সমপ্রীতি বজায় রাখে৷বর্তমান সরকারকে জবরদখলকারী উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এখন প্রতিনিয়ত হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ ক্ষমতাসীনরা এসবের সঙ্গে জড়িত৷ কিন্তু তাদের কাউকে ধরা হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কেনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়৷তাদের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান৷

খালেদা জিয়ংা বলেন, বিএনপি দেশপ্রেমিক দল৷ আমরা সকল দেশের সঙ্গে, সকল ধর্মের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব-সমপ্রীতি চাই৷ আমরা নিজের ধর্মের পাশাপাশি অন্যের ধর্মকেও শ্রদ্ধা করি৷ সব ধর্মের প্রতি আমাদের সমান শ্রদ্ধাবোধ আছে৷ আমরা সামপ্রদায়িক সমপ্রীতিতে বিশ্বাস করি৷ আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, অনেকে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে, অথচ তারা সব ধর্মের প্রতি আঘাত হানে৷ তাদের এই ধর্মনিরপেক্ষতা লোকদেখানো৷ হরতাল চলাকালে বিশ্বজিত্‍কে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন৷খালেদা জিয়া বলেন, আগামীতে তাঁরা সরকার গঠন করলে সে সরকার হবে জনগণের৷ বিএনপি শুধু মুসলমান নয়, সব ধর্মের মানুষের দল৷

সমপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রেখে একটি গণতান্ত্রিক ও উদার বাংলাদেশ নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কোনো দলীয় সরকার গঠন হবে না৷ সেই সরকার হবে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনগণের সরকার৷ সেই সরকারের কর্মকাণ্ড আশপাশে ছড়িয়ে দিয়ে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই৷বাংলাদেশ একটি সমপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ৷ আমরা এই দেশকে একসঙ্গে গড়ে তুলবো৷ বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের হাতে এই দেশ নিরাপদ নয়৷ এই অবৈধ অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে৷এ সময় খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে লোক দেখানো কথা বলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তা ভোগদখল করছে৷

এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন পুরান ঢাকার বিশ্বজিত্‍ ও নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার খুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বজিত্‍কে ছাত্রলীগ হত্যা করেছে,র্যাকে দিয়ে নিরপরাধ চন্দন সরকারকে হত্যা করানো হয়েছে৷ আমাদের দলে যারা আছে তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে৷ ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মুখোশ৷ দেশে যত গুম হত্যা হচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগ জড়িত৷ এ সরকারের আমলে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়৷ বিএনপি কারো সম্পত্তি দখল করেনি৷ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তি দখল করেছে৷ হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাত করেছে৷খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে হিন্দুদের মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করেছে৷ বিভিন্ন সহযোহিতা করেছে৷

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে৷ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেস ভাঙচুর করেছে৷ বিএনপি কারো সম্পত্তি দখল করেনি৷ বিএনপি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়৷ বেলা ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে খালেদা জিয়ার উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল ৫টায় তিনি পৌছান৷ এর আগে ৪টায় তিনি তার গুলশানের বাসা েেথকে রওনা হন৷মতবিনিময় অনুষ্ঠানে হিন্দু সমপ্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়াও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভারডপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, ড. মইন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) হান্নান শাহ প্রমূখ উপস্থিত রয়েছেন৷

এছাড়া অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, গৌতম চক্রবর্তী, অমলেন্দু দাশ, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, ছাত্রনেতা তরুণ দে, বিজন সরকার, নকুল চন্দ্র সাহা, নেত্রকোনা হিন্দু সমপ্রদায়ের প্রতিনিধি যোগেন্দ্র নাথ তালুকদার, শ্যামল ভৌমিক, বাগেরহাটের বাসুদেব মুন্সী খোকন, হিমাদ্রী শেখর, খুলনার এসকে রায়, সমীর কুমার সাহা, ময়মনসিংহের নিরঞ্জন ভৌমিক, দেবাশীষ রায় মধু, রাজশাহীর অ্যাডভোকেট অংকুর সেন, শ্যামল রায়, রংপুরের পরিতোষ চক্রবর্তী, মানিকগঞ্জের সুধীর বাবু, তপন কান্তি বর্মণ, নারায়ণগঞ্জের বাপ্পী রায় চৌধুরী, গাজীপুর সুশান্ত সরকার, টাঙ্গাইলের শ্যামল হোড়, বরিশালের আশিস সরকার, সিলেটের অনুপ দে, চট্টগ্রামের অ্যাডভোটেক রূপু দাশ, নরসিংদীর দীপক কুমার বর্মনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজন শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন৷অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মঠের স্বামী গুরু সেবানন্দ মহারাজ, স্বামী বিদ্যানন্দ মহারাজ, শ্রী শ্যাম সুন্দর বাবাজী, বাসুদেব মুখার্জী, শ্রী নন্দ দুলাল ব্রম্মাচার্য, নেপাল কুষ্ণ দে, প্রফেসর দেবাশীষ পাল নন্দীও উপস্থিত হয়েছেন৷এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, চট্রগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাংঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, বাগেরহাট ও ময়মনসিংহসহ সারাদেশের হিন্দু সমপ্রদারের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন৷