দৈনিকবার্তা-ঝিনাইদহ,১৪অক্টোবর : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে উপজেলার বারোবাজার ফুলবাড়ি গ্রামে দুই কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা৷ সোমবার রাতে তাদেরকে বাড়ি থেকে ধরে এনে সন্ত্রাসীরা যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ফুলবাড়ি নামক স্থানে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়৷ নিহতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার কেসমত রাজাপুর গ্রামের ভোদো দাই ওরফে বুলু সরদারের ছেলে হাদিউজ্জামান হাদি (৩৫) ও বড় রাজাপুর গ্রামের ঠুটো রফিক ওরফে রফিউদ্দীনের সরদারের ছেলে সোহাগ আলী সরদার (২৮)৷ তারা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ জানায়৷ তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে যশোর ডিবি পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদেরকে হত্যা করেছে৷
কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার সংলগ্ন ফুলবাড়ি নামক স্থানে ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের পঞ্চাশ গজ পাশে দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছে একটি বেগুন ক্ষেত থেকে পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে৷ তাদের একজনের বুকে ও মাথায় ২টি এবং অপর জনের বুকে ১টি গুলির চিহ্ন রয়েছে৷ সোমবার রাতের কোন এক সময়ে ব্রাশফায়ারে তাদেরকে হত্যা করা হয়৷ নিহতদের স্বজনরা সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে লাশ সনাক্ত করেন৷ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদনত্মের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে৷ তবে কে বা কারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ৷
এদিকে নিহত সোহাগের পিতা রফিউদ্দীন জানান, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তাদের নিজ বাড়ি থেকে হাদিউজ্জামান, সোহাগ ও তার দুই ভাতিজা যশোর ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আটক করে গাড়িতে করে নিয়ে আসে৷ খাজুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই মাসুদ ডিবি পুলিশের সাথে গিয়ে তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে৷ রাসত্মার মধ্যে ডিবি পুলিশ তার দুই ভাতিজাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে হাদিউজ্জামান ও সোহাগকে নিয়ে যায়৷ ভোরবেলা আমরা খবর পায় তাদের ক্রসফায়ার দিয়েছে পুলিশ৷ নিহতদের একজন আমার ছেলে অন্যজন ফুফাতো ভাই৷ তার ছেলে সোহাগ মাঠে কৃষিকাজ করতো, সে কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সাথে জড়িত ছিল না বলে রফিউদ্দীন দাবি করেন৷ গত সেপ্টেম্বর মাঠের ১৮ ও ২০ তারিখে সোহাগের নামে ডাকাতি প্রস্তুতির দুইটি মামলা দেয় পুলিশ৷ সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে রাতে পুলিশ তাদের জানায়৷ সোহাগের পিতা দাবি করেন, ২০১১ সালের ১২ এপ্রিল তার ভাতিজা বাসের আলী দুবর্ৃত্তদের হাতে খুন হয়৷ সেসময় তার ছেলে সোহাগ মারাত্মক আহত হয়৷ ওই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে এলাকার ত্রাস হাসান আলীকে প্রধান আসামী করে ১৭ জনের নামে একটি মামলা করেন৷ মামলার তদনত্মের দায়িত্ব পান খাজুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ৷ চার্জশীট দেওয়ার জন্য মামলার বাদী রফিউদ্দীনের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে এসআই মাসুদ৷ এরই মাঝে আসামীদের সাথে অর্থবাণিজ্য করে তাদের পৰ নেয় মাসুদ৷ একপর্যায়ে টাকা দিতে না পারায় মামলা তুলে নিতে বাদীকে চাপ দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা৷ মাসুদ আসামীদের পক্ষে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়৷ পরে মামলার বাদী আদালতে নারাজি পিটিশন দিলে আদালত সিআইডির ওপর মামলাটি তদনত্মের দায়িত্বভার দেন৷ এসআই মাসুদ এতে রফিউদ্দীনের ওপর ৰিপ্ত হয়৷
নিহত হাদিউজ্জামান হাদির ভাই তরিকুল ইসলাম জানান, ডিবি পুলিশ রাতে হঠাত্ রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে৷ পরে আমরা কোতয়ালী থানা ও পুলিশ কন্ট্রোল রম্নমে যোগাযোগ করি৷ রাতে পুলিশ আমাদের কোন সন্ধ্যান দিতে পারেনি৷ সকালে আমরা জানতে পারি পুলিশ দুইজনকে হত্যা করে ফুলবাড়ি লাশ ফেলে রেখে গেছে৷ তার ভাই কৃষিকাজ ও ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো৷ ৫ লাখ টাকা নিয়ে এসআই মাসুদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তার ভাইকে হত্যা করেছে৷
এ ব্যাপারে যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান জানান, আমি সাক্ষী দিতে ঢাকায় এসেছি৷ আপনি হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ করেন৷ দায়িত্বে থাকা অন্যন্যা কর্তকর্তারা বলেন, তাদের কোন টিম কাউকে আটক করেনি৷ এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না৷ যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি এনামুল হক পিপিএম জানান, তারা পূর্বে নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি করতো৷ বর্তমানে নিহত হাদি ও সোহাগ যশোর সদরের উত্তরাঞ্চলের ত্রাস আশকার বাহিনীর ক্যাডার হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ তাদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ ছিল অতিষ্ঠ৷ নিহত হাদি যশোরের ইছালী ইউনিয়ন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা খলিল হত্যা মামলার আসামী৷ এছাড়া তাদের বিরম্নদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ ঝিনাইদহ-যশোর, যশোর-মাগুরা সড়কে ডাকাতি মামলা রয়েছে৷ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দের জের ধরে তারা হত্যার শিকার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, নিহতদের উভয়ের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার রাজাপুর এলাকায়৷ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতদের ময়নাতদনত্ম সম্পন্ন হয়েছে৷ যশোর কোতয়ালী থানার উদ্বৃতি দিয়ে এসপি জানান, নিহত হাদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে৷ সে যশোর পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী৷ আর সোহাগের নামে ৪টি মামলা রয়েছে৷ তারা ভাল মানুষ না৷ দুই জনই খুব খারাপ লোক৷