দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৪অক্টোবর : ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামিক স্টেট বা আইএস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন অভিযানে বাংলাদেশ যোগ দিচ্ছে না৷তবে সেখানে ওই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের নেতৃত্বে কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে তাতে অংশ নিতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী৷ মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব তথ্য জানান৷
আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া ইউরোপীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সচিব শহিদুল হক, সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মুস্তাফা কামালসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা ছিলেন৷আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা দুর্বল হওয়ার প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে সমপ্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা ইসলামী খেলাফত (রাষ্ট্র) ঘোষণা করেছে৷
আইএস ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ যোগ দিয়েছে৷এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনের সময় নিরাপত্তা পরিষদ আইএস নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করে, যাতে অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও অংশ নেয়৷ আইএস ‘র বিরুদ্ধে ওই অভিযানে বাংলাদেশও যোগ দিচ্ছে কি না- মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন করা হয় মাহমুদ আলীকে৷উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইরাক, সিরিয়ার স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব এবং টেরিটোরিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটিতে বিশ্বাস করে, আমরা চাই এটা সংরক্ষণ করা হোক৷
সন্ত্রাসবাদ সম্বন্ধে বাংলাদেশের অবস্থান তো পরিষ্কার,এই প্রসঙ্গে বলেন তিনি৷ বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদকে জিরো টলারেন্সের বরাবরই বলে আসছে৷ সেই সঙ্গে এটাও বলছে, বাংলাদেশের মাটি কোনও দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে দেবে না৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে সেখানকার (ইরাক-সিরিয়া) জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলে আমরা (বাংলাদেশ) সেটায় অংশ নেব৷
ফিলিপাইন, গ্রিস ও বেনিনে নিযুক্ত বিতর্কিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷একইসঙ্গে লেবাননে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ পর্যায়ক্রমে অন্যায়কারী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আর্থিক ও নারী কেলেঙ্কারি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে নির্যাতনের অভিযোগে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে৷এর মধ্যে ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বিরুদ্ধে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে নৈশভোজে আমন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে৷
ভারতের বর্ধমানে এক বোমা হামলায় বাংলাদেশিদের জড়িত থাকার বিষয়ে দেশটির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারতের কাছে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে৷ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখনও কোনো রিপোর্ট দেননি৷ তবে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তারা জানাবে৷ তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না৷
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইএস বিরোধী জোটে বাংলাদেশ যোগ দিচ্ছে না বলে যে অভিযোগ রয়েছে এ প্রসঙ্গে মাহমুদ আলী বলেন, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কএনা ধরনের জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না বাংলাদেশ৷ এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স৷ তিনি বলেন, তবে ইরাক ও সিরিয়ার বিষয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আমরা বিশ্বাস করি৷ তাদের সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ করা হোক৷ জাতিসংঘের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের জন্য মানবিক সহায়তায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সেটাতে আমরা অংশ নেবো৷
এদিকে এশিয়া ইউরোপ আন্তঃরাষ্ট্রীয় ফোরাম (আসেম) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ইতালির মিলানের দশম এ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী৷ তার সঙ্গে ৫০ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে অংশ নেবে৷ তিনি বলেন, এশিয়া ইউরোপীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় একটি ফোরাম৷ এতে ৫১টি সদস্য দেশ রয়েছে৷ ২০০৯ সালে নবম শীর্ষ সম্মেলনে আসেমের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ৷ এবারের শীর্ষ সম্মেলনে কাজাখিস্তান ও ক্রোয়েশিয়াকে সদস্য করা হচ্ছে৷এ বিষয়ে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রী ১৬ অক্টোবর সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন কৌশল ও এশিয়া ইউরোপ সহযোগিতা বিষয়ে বক্তব্য দেবেন৷ পরদিন ১৭ অক্টোবর শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি৷
এছাড়া শেখ হাসিনা ইতালি, নেদারল্যান্ডস, গ্রিস ও সুইডেনের সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন৷ আগামী ১৮ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে৷সম্মেলনে আসেমের ৫১টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২০টি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশ নেবে বলেও জানান মন্ত্রী৷