ঘূর্ণিঝড় হুদ হুদের

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০১৪ : প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগের বাতাস আর তুমুল বৃষ্টি নিয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তমে আঘাত হেনেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদ হুদ৷ভারতীয় নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের বাইরের অংশ বিশাখাপত্তমের কৈলাসগিরি এলাকায় আঘাত হানে৷ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর বলছে, হুদ হুদের বিস্তার প্রায় ৩০ কিলোমিটার৷

ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারের আশঙ্কায় উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে চার লাখ মানুষকে ইতোমধ্যে সরিয়ে নিয়েছে ভারত সরকার৷ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিশাখাপত্তম ও উড়িষ্যার গানজাম এলাকায় প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে৷

পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তত্‍সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ সামান্য উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে আজ রোববার দুপুর ১২টায় ভিসাকাপত্তমের নিকট দিয়ে ভারতের উত্তর অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করা শুরু করছে৷এটি পরবর্তী কয়েক ঘন্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করা সম্পন্ন করতে পারে৷

উপকূল অতিক্রমরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে৷ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে৷উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দর সমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া অব্যহত রয়েছে৷

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শক্তিশালী ঝড়টির লেজ বিশাখাপত্তম অতিক্রম করছিল৷ তবে হুদহুদের সম্মুখের রাজ্যগুলোতে প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঘন্টায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার কিছু আগে প্রদেশের কৈলাশগিরি পার্ক ও তত্‍সংলগ্ন এলাকায় আঘাত হানার পর রাজ্যের সর্ববৃহত্‍ শহর বিশাখাপত্তম অতিক্রম করে হুদহুদ৷

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, হুদহুদের প্রভাবে সৃষ্ট ভারি বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে৷তীব্র বাতাস রাজ্যের আবহাওয়া দফতরের রাডারও উপড়ে ফেলে দিয়েছে বলে জানা গেছে৷তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছপালা ও বৈদু্যতিক খুঁটি রাস্তার ওপর আছড়ে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, এ কারণে তাত্‍ক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি৷অবশ্য ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তমে দুইজন ও শ্রীকাকুলাম জেলায় একজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে৷ এছাড়া, দুইজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে উড়িষ্যা রাজ্যে৷

স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, হুদহুদ আঘাত হানার পরপরই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে শ্রীকাকুলাম, বিজয়নগরম ও বিশাখাপত্তমে নেমে পড়ে উদ্ধারকারী দল৷এএনআই জানায়, ঝড়ের প্রভাবে বিশাখাপত্তম, বিজয়নগরম ও শ্রীকাকুলাম জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে৷ এমনকি ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস এবং তত্‍পরবর্তী ভারি বর্ষণের কারণে রাজ্যটিতে ব্যাপক ভূমিধসের খবরও পাওয়া গেছে৷ এছাড়া, ভারি বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আশপাশের জেলাগুলোতেও৷ অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে মূল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেলেও উড়িষ্যায়ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷

এদিকে, বিশাখাপত্তম হয়ে উত্তর দিকে সরতে থাকায় এর প্রভাবে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরটওদেশ, বিহারসহ উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদফতর৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভির খবরে আরও বলা হয়, বিশাখাপত্তমই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷নৌবাহিনীর মুখপাত্র জানান, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাতাসের গতিবেগ অন্তত ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে৷ তবে, বেড়ে যেতে পারে বৃষ্টিপাতের হার৷ এ কারণে পরবর্তী কিছু সময় আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷

অপরদিকে, হুদহুদের সরাসরি আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও প্রবল বর্ষণে ভাসছে উড়িষ্যা রাজ্য৷ বিশেষত রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাত চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ৷ঝড়ো হওয়ায় বিশাখাপত্তমে গাছ ও বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদু্যত্‍ সরবরাহ৷প্রবল বৃষ্টিতে দৃষ্টিসীমা ৫শ’ মিটারের নিচে নেমে আসায় বেশ কয়েকটি বিমান ও ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে৷ ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলছে, স্থলভাগে আঘাত হানার পর আরো ছয় ঘন্টা তাণ্ডব চলতে পারে হুদ হুদ৷ পরবর্তী ছয় ঘন্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসতে পারে৷ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয় নিয়ে রোববার জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বৈঠকে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

এদিকে, কঙ্বাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর পুনঃ ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কঙ্বাজার,নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে৷উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ওেনৗকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে ৷