দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০১৪ : ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ৷ হত্যাকান্ডে জড়িত আবু ওবায়েদ কাদের (৪৬) ও ইসমাইল (১৭)কে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ এবং উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ গ্রেফতার করে৷
গত ০৫/১০/২০১৪ খ্রি. ১২.৩০ টায় উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ জুবায়ের আহমেদ (১৭) এর মৃতদেহ উত্তরা ৪ নং সেক্টর খেলার মাঠ সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার করে৷ এ হত্যাকান্ডে জুবায়ের এর মা দিলারা বেগম বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ ঘটনার পর পরই গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগ রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদনত্ম শুরম্ন করে৷
গত ০৪/১০/২০১৪ খ্রি. বিকাল ০৫.৩০ টায় ৪নং সেক্টর মাঠে ফুটবল খেলতে যায়৷ রাত ১১.৩০ টা পর্যনত্ম বাসায় ফেরত না আসায় তার পরিবারের সদস্যগণ খোজাখুজি শুরম্ন করে৷ বাসায় রেখে যাওয়া জুবায়ের এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে জুবায়ের এর পরিচিত জনদেরকে ফোন করতে থাকে৷ তখন ইসমাইল এর ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং কাদের ফোন রিসিভ করেনি৷পরের দিন সকাল ০৬.০০ টায় আলজেরীয় নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদের জুবায়ের এর ফোনে কল করে জানায় যে, জুবায়ের কোথায় আছে সে তা জানে৷ কাদের জুবায়ের এর সন্ধান সম্পর্কে এলোমেলো কথাবার্তা বলতে থাকে৷ এতে তাদের সন্দেহ হয়৷ ইতোমধ্যে তারা ঘটনাটি থানা পুলিশকে অবহিত করে৷ থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাদের জানায় যে, জুবায়ের এর লাশ খেলার মাঠ সংলগ্ন পুকুরে আছে৷
এ ঘটনায় কাদেরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক এজাহার নামীয় অপর আসামি ইসমাইলকে গত ১০/১০/২০১৪ খ্রি. বিকাল ০৪.০০ টায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে৷ জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি ইসমাইল হোসেন জানায় যে, গত ০৪/১০/২০১৪খ্রি. বিকাল ০৫.০০ টার পরে সে, কাদের, জুবায়ের সহ আরও কয়েক জন মিলে উত্তরা ৪ নং সেক্টরে মাঠে ফুটবল খেলে৷ খেলা শেষে কাদের, জুবায়ের ও সে ব্যতিত অন্য খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করে৷ তখন তারা ৩ জন মাঠের পাশে পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসে৷ জুবায়ের তার গায়ের জার্সি খুলে খোলা শরীরে পানিতে নামে৷ সঙ্গে সঙ্গে কাদেরও পানিতে নামে৷ পুকুরে নামার পর কাদের জুবায়েরকে জড়িয়ে ধরে তার সঙ্গে যৌনকর্ম করার চেষ্টা করে৷ জুবায়ের ও কাদেরের মধ্যে ধসত্মাধসত্মি হয়৷ এক পর্যায়ে জুবায়ের মারা যায়৷ জুবায়ের এর মৃতু্য নিশ্চিত হওয়ার পর কাদের পুকুরের পানিতে লাশ ডুবিয়ে ফেলে৷ এরপর কাদের বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ইসমাইলকে প্রলোভন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৷ পরবর্তীতে তারা যে যার মত চলে যায় এবং আত্মগোপন করে৷ ইসমাইল পুরো বিষয়টি পুকুর পাড়ে বসে প্রত্যৰ করেছে মর্মে ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে৷ গ্রেফতারকৃত দুজনই পুলিশ রিমান্ডে আছে৷
মামলাটি ইতোমধ্যে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগে ন্যাসত্ম করা হয়েছে৷ মূলত আসামি কাদের একজন সমকামী৷ সে পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে৷ সে কিশোরদের ফুটবল প্রশিৰণের নামে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে৷ সখ্যতার এক পর্যায়ে বিভিন্ন কিশোরের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয়৷ সে একজন অবিবাহিত পুরম্নষ৷ তার ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে সমকামিতার ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণাদি রয়েছে৷ কাদের কতর্ৃক ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সীম রেজিষ্ট্রেশন এর ৰেত্রেও সে একজন বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছে৷ সমকামিতার প্রচেষ্টা জুবায়ের এর উপর সফল করতে না পেরে কাদের জুবায়েরকে হত্যা করেছে৷
গোয়েন্দা ও অপরাথ তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল আহাদের নেতৃত্বে সিনিয়র এসি এস এম নাজমুল হক ও সিনিয়র এসি মিনহাজুল ইসলাম এর সমন্বয়ে একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে৷
মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স , ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা৷