কাদের সিদ্দিকী

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০১৪ : বড়ভাই মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হজ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন-এমন দাবি করে তার জন্য আল্লাহ ও দেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী৷শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী এই ক্ষমা চান৷ সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতারা ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন৷

সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার বড়ভাই পবিত্র হজ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তাতে আল্লাহ ক্ষমা করবেন কি-না জানি না৷ তবে পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাকে ক্ষমা করেন৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কারণে দেশের মানুষের কাছেও ক্ষমা চান তিনি৷কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার বড়ভাই নিউ ইয়র্কে বসে হজ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে মুসলমান সমপ্রদায় যেভাবে মর্মাহত হয়েছে তাদের সঙ্গে আমিও মর্মাহত৷ আমি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছি, মুসলমান হিসেবেই মরতে চাই৷আজকে আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে এসেছি৷

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আমার কেউ না, কিন্তু আল্লাহর প্রদত্ত হিসেবে তিনি আমার বড়ভাই৷ এ সম্পর্ক কেনা যায় না৷ আমাদের ধমনিতে একই রক্ত প্রবাহিত৷ জীবনে বহু কষ্ট করেছি, বহুবার বিপদে পড়েছি কিন্তু আল্লাহর ওপর থেকে আস্থা হারাইনি৷ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি আমার বড়ভাইকে হেদায়েত করুন৷

শনিবার সকালে রাজধানীতে দলীয় ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে বড় ভাইয়ের বক্তব্য নিয়ে দল ও নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি৷ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছেন তিনি৷ সেজন্য ছোট ভাই হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে বলছি, দয়া করে আমার বড় ভাইকে আপনি ক্ষমা করুন৷গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী৷ আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী৷

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির অপচয় হয়৷ উত্‍পাদনে প্রভাব পড়ে৷ওই বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও কয়েকটি ইসলামী দল লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণসহ গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দেয়৷

এই বক্তব্যের জন্য বড় ভাইকে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে৷ দলের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে৷আমি শুধু বড় ভাইয়ের এহেন বক্তব্যের ক্ষমা চাইতে এসেছি৷ যদি তিনি (বড় ভাই) তার বক্তব্যের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করেন৷ তাহলে আইনের বিধানে বিচার যা হবে, তা-ই হবে৷কাদের সিদ্দিকী বলেন, এদেশের জনগণ ওই আপত্তিকর বক্তব্যের যেভাবে প্রতিবাদ করেছেন, আমি তাদের মোবারকবাদও জানাচ্ছি৷’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কেউ আমাকে বাঘা সিদ্দিকী বলেছে৷ রাষ্ট্র আমাকে বীরোত্তম উপাধি দিয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু আমাকে বঙ্গবীর বলে ডাকতেন৷ তার কন্যা, আমার ভগি্ন আমাকে পাগলের উপাধি দিয়েছেন৷ আমি শুধু বলব, আল্লাহ তাকে হেদায়েত করুন৷এর আগে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য সম্পর্কে দলের অবস্থান তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার৷

তিনি বলেন, মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সমপ্রতি নিউইয়র্কে হজ সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য তার এবং তার দল আওয়ামী লীগের প্রতি গভীর নিন্দা জ্ঞাপন করছি৷ওই ন্যাক্কারজনক ঘোরতর আপত্তিকর বক্তব্য শুধু তার ( আবদুল লতিফ সিদ্দিকী) একার হতে পারে না৷ কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মনে করে এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ ও ভোটারবিহীন জবরদখলকারী অনির্বাচিত সরকারের বক্তব্য৷

তবে লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন না৷তাকে দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়েও দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে৷এরপর শনিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে৷

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের ওপর থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার এটি এক অপকৌশল মাত্র৷ ইতিপূর্বেও এই সরকারের প্ররোচনায় এবং সহমমির্ততায় শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত ব্লগাররা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে৷বক্তব্যে অবিলম্বে আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের অনুষ্ঠানের দাবি জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক৷সংবাদ সম্মেলনের কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী,দুই মেয়ে কুরি সিদ্দিকী ও কুশি সিদ্দিকী এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন৷