দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া,১১অক্টোবর : প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুয়াকাটা ও তত্সংলগ্ন গভীর সাগরবৰে অনত্মত দুই শ’ ট্রলার নিয়ে ইলিশ শিকারে গিয়ে উত্তাল সাগরে জীবনহানির শঙ্কায় পড়েছে সহস্রাধিক জেলে৷ ট্রলার মালিকদের অতি লোভের যোগান দিতে গিয়ে এসব জেলেরা নিজের জীবনকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দিয়েছে৷
ঘুর্ণঝড় অতি প্রবল হুদহুদ এর প্রভাবে শুক্রবার থেকে সাগর ভয়াল উত্তাল হয়ে গেছে৷ ফলে সাগরে ট্রলার নিয়ে জেলেদের অবস্থান চরম ঝুঁকির কবলে পড়েছে৷ অপরদিকে কিনারে ফিরতে পারছে না মত্স বিভাগের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযোনের ভয়ে৷ ঘুর্ণিঝড় ভয়াল আকার ধারণ করলে এসব ট্রলার ডুবির প্রবল শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ আর একারণে কুয়াকাটাসহ কলাপাড়া উপকূলের জেলে পরিবারে এখন চলছে চরম উদ্বেগ৷ সজনরা বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন৷ কারণ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে সাগরে মাছ ধরা থেকে পরবতর্ী নির্দেশ না দেয়া পর্যনত্ম সকল নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ পায়রা সমুদ্র বন্দর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে তিন থেকে চার ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হয়েছে৷
৪ অক্টোবর বিকাল থেকে এসব ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সাগরে ইলিশ শিকারে যায় ৷ ১৫ অক্টোবর শেষ বিকাল থেকে রাতের বেলা ট্রলারগুলো মাছ বোঝাই করে কিনারে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে৷ যেখানে নিষেধাজ্ঞার সময় ফিশিংবোটগুলো মহিপুর-আলীপুর ঘাটে বেধে রাখার কথা৷ সেখানে ৯০ভাগ ট্রলার হাওয়া হয়ে গেছে৷ ট্রলার মালিকদের তালিকা সংগ্রহ করে আগেভাগে সাগরে যাওয়ায় বিরত রাখতে ট্রলার নির্দিষ্ট ঘাটে বেধে রাখার প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রলার মালিকরা জেলেদেরকে সাগরে পাঠায়৷ একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রমতে চরম ঝুঁকি নিয়ে সাগরে অবস্থান করা ট্রলারগুলোতে আহরণ করা লাখ লাখ মা ইলিশ রয়েছে৷ লোভের কারণে এসব মাছ নিয়ে কিনারে আসতে পারছে না৷ পারছেনা সাগরে ফেলে দিতে৷
ইতোমধ্যে সাগরে মাছ ধরার সময় তুলাতলী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মালিকানাধীন এফবি মা-আমেনা ট্রলারের জেলে আলম হাওলাদার (৩০) মারা যায়৷ মঙ্গলবার রাতে আলম মারা গেলে বুধবার দুপুরে গভীর সমুদ্রে ট্রলারটি রেখে কিনার থেকে খুটা জেলেদের ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লাশ নিয়ে আসে৷ পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদনত্ম করেছে৷ এভাবে আলীপুরের আবুল কোম্পানির এফবি রম্নমান, এফবি সিয়াম, এফবি মদিনা, এফবি এলমা আক্তার৷ ইউসুফ কোম্পানির এফবি তামান্না, এফবি নুরভানু-১, এফবি নুরভানু-২, আব্দুল বারেক মোল্লার এফবি মায়ের দোয়া, এফবি আব্দুলস্নাহ, এভাবে আব্দুর রাজ্জাকের, মহিপুরের হাওলাদার ফিস, গাজী ফিসসহ শতাধিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে রয়েছে৷ অসংখ্য লোকজন খোলামেলা বলেছেন, আলীপুর ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনছার মোলস্নার ট্রলার ছাড়া সকল মালিকের ট্রলার এখন সাগরে ইলিশ শিকারে গিয়ে আটকা পড়েছে৷ প্রশাসনের বিভিন্ন সত্মর থেকে শুরু করে জলদসু্যদের পর্যনত্ম ম্যানেজ করেই নির্বিঘ্নে মা ইলিশ শিকারের বিষয়টি ট্রলার মালিকরা নিশ্চিত করে৷ জনশ্রম্নতি রয়েছে আলীপুরের কোম্পানিখ্যাত দুই ব্যক্তি এসবের মিডিয়া করছে৷ কিন্তু হঠাত্ করে গভীর সাগরে ঘুর্ণিঝড় হুদহুদ প্রবল আকারে ধারণ করায় তার প্রভাবে সাগর প্রচন্ড উত্তাল হয়ে ওঠে৷
চরম ঝুঁকির কবলে পড়ে সাগরে অবস্থান করা ট্রলারসহ হাজারো জেলেরা৷ না পারছে ধরা মাছ নিয়ে কিনারে ফিরতে, পারছেনা উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে সেখানে টিকে থাকতে৷ হাজারো জেলেরা এখন এ কারণে জীবনহানির শঙ্কায় চরম দূর্যোগ ঝুঁকিতে পড়েছে৷ তবে মত্সসহ বিভিন্ন প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে অনত্মত অর্ধশত ট্রলার মা ইলিশ নিয়ে শনিবার রাতের যে কোন সময় কিনারে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে৷ একাধিক ট্রলার মালিক তাদের ট্রলার কোথায় এনিয়ে সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেন নি৷
কুয়াকাটা আশার আলো মত্সজীবি জেলে সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জানান, মাছ শিকারে সরকারের যে কোন নিষেধাজ্ঞা কুয়াকাটার সকল খুটা জেলেরা মানেন৷ কিন্তু বড় ট্রলারের মালিকরা ঠিকই গভীর সাগরে জেলেদের পাঠিয়ে লাখ লাখ মা ইলিশ ধরাচ্ছেন৷ আর এ কারণে ট্রলার ডুবিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে৷