দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৮অক্টোবর : বিজয়া দশমী ও পবিত্র ঈদ-উল-আজহার ছুটি শেষে বুধবার অফিস-আদালত খুলেছে৷ তবে পূজা ও ঈদের ছুটির আমেজ এখনো কাটেনি৷বাংলাদেশ সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতে আজ উপস্থিতির হার অনেক কম ছিল৷ তবে মন্ত্রী , প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কেউ- কেউ বুধবার সচিবালয়ে অফিস করেছেন ৷ যারা অফিস করেছেন তারা ঈদ ও পূজার শুভেচছা এবং কুশলাদি বিনিময়ে ব্যসত্ম সময় কাটান৷
সনাতন ধর্মবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গোত্সব এবং মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-আজহার ছুটিসহ এবার চারদিনের সরকারি ছুটির পাশাপাশি বিজয়া দশমীর আগের দিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি পড়ায় এবছর ৫ দিনের টানা ছুটি ছিল৷অপরদিকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার অফিস খোলা থাকলেও পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি থাকায় রোববারের আগে অফিসগুলোতে উপস্থিতির হার বাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷এদিকে ঈদের আগে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষগুলোর অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে আবারও তাদের কর্মস্থল রাজধানী ফেরা শুরম্ন করেছেন৷
কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন আনত্ম:নগর ট্রেন আজ নিধর্ারিত সময়েই কমলাপুর স্টেশনে পেঁৗছেছে৷ তবে ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের জনস্রোত আগামী শনিবার থেকে শুরম্ন হবে বলে রেল কর্মকর্তারা আশা করছেন৷গাবতলী, সায়েদবাদ ও মহাখালি বাস টার্মিনালেও আনত্ম: জেলা বাস সার্ভিসের বাসগুলো যাত্রী নিয়ে যথাসময়ে গনত্মব্যস্থলে পৌঁছেছে৷ আসার পথে মহাসড়কে বড় কোনো যানজটে পড়তে হয়নি বলে যাত্রীরা এই প্রতিনিধিকে জানান৷উল্লেখ্য, ঈদে ছুটির কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচল এখনো কম৷ নগরীর বিভিন্ন সড়কে যান্ত্রিক যানবাহনের চেয়ে রিকশার সংখ্যাই চোখে পড়ছে বেশী৷
বুধবার সকাল ৯টা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ের দপ্তরগুলোতে আসতে শুরু করলেও ছুটির পর প্রথম দিন উপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে কম৷এবার ৫ থেকে ৭ অক্টোবর কোরবানির ঈদের ছুটি থাকলেও তার আগের দিন ছিল দুর্গাপূজার ছুটি৷ তার আগে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদযাত্রা৷
তিনদিন ঈদের ছুটির পর অনেকে আবার বুধবার ও বৃহস্পতিবারও ছুটি নিয়েছেন; তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন আগামী রোববার৷ফলে সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ে ঘুরে অধিকাংশ অফিস কক্ষই ফাঁকা দেখা যায়৷জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ছুটির পর প্রথম দিন সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশেরও কম৷
প্রতিবারই ঈদের ছুটির সঙ্গে আরো দুই-এক দিন বাড়তি ছুটি নিয়ে থাকেন অনেকে৷ এবার ছুটির আবেদনকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল বলে কর্মকর্তারা জানান৷বুধবার যারা অফিসে ফিরেছেন, তাদেরও দিনের প্রথম ভাগ কেটেছে ঈদের কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করে৷ কাজের তেমন ব্যস্ততা কোথাও দেখা যায়নি৷অধিকাংশ দপ্তরের সচিব এদিন কার্যালয়ে ফিরে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন৷ঈদের পর প্রথম অফিসে এসেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ৷কর্মকর্তারা জানান, এবার অধিকাংশ মন্ত্রীই ঈদ করেছেন নিজের এলাকায়৷ দুপুরের দিকে তারা অফিসে আসতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান৷ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা কক্ষও খালি দেখা যায়৷
এদিকে, ঈদ ও পূজার ছুটি শেষে বুধবার ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল অনেকটা কম৷ পাশাপাশি ব্যাংকে গ্রাহক উপস্থিতিও তুলনামুলক কম ছিল৷
বুধবার ঈদের ছুটি শেষে যারা অফিস করছেন তাদের সবাইকে ঈদের কুশল বিনিময় করেই সময় পার করতে দেখা গেছে৷মতিঝিল ব্যাংক পাড়া ঘুওে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোতে ছিলো অনেকটা ছুটির আমেজ৷ ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যস্ততা কম থাকায় গল্প গুজবে সময় পার করতে দেখা গেছে৷পর প্রথম কার্যদিবসে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে কাজকর্ম চলছে৷ উপস্থিতি অনেকটাই কম৷ যারা এসেছেন তারা পরস্পর ঈদের কুশল বিনিময় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে৷
সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ঈদ ও পূজার ছুটির আমেজ এখনও পুরোপুরি কাটেনি৷ ব্যাংকে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছুটির পর খুবই স্বাভাবিক রয়েছে৷ সেই সঙ্গে লেনদেন কম হচ্ছে৷পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী জানান, ব্যাংকে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে৷ লেনদেন খুব বেশি হচ্ছে না৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের লেনদেন হয়েছে৷ তবে আগামী সপ্তাহ থেকে বড় ধরনের লেনদেন শুরু হবে৷
উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ছুটির পর সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি৷ ফলে বড় ধরণের কোন লেনদেন হচ্ছে না, ছোট ছোট লেনদেন কিছু হচ্ছে৷অন্যদিকে,ঈদের ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ৷ তবে ঢাকা এখনো ফাঁকা৷ বুধবার অধিকাংশ অফিস-আদালত খুললেও ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন ও মানুষ ছিল একেবারেই কম৷
রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঢাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছে মানুষ৷ তবে ঈদের আগে যে হারে বাস ছেড়ে গিয়েছিলো, সেই হারে এখনো ঢাকায় ফিরছে না বাসগুলো৷ আবার অনেক বাস অল্প যাত্রী নিয়েই ফিরছে৷বাড়িতে যাওয়ার সময় টার্মিনালগুলোতে যে দুর্ভোগ ছিল, ঢাকায় ফেরার পথে বুধবার তেমন কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা৷
গাবতলী বাস টার্মিনালে খুলনা থেকে আসা সুন্দরবন বাস সার্ভিসের সুপারভাইজার রবিউল জানান, এখনো পুরো দমে মানুষের আসা শুরু হয়নি৷ আগামী রোববার থেকে যাত্রীদের চাপ শুরু হবে৷
ফরিদপুর থেকে আসা আশরাফ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় পাটুরিয়া ফেরিঘাটে প্রায় পাঁচ থেকে ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিলো৷ কিন্তু এবারের ঈদে কোন অপেক্ষা করতে হয়নি৷ ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে মাত্র চার ঘন্টা, যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম৷
পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের ম্যানাজার ( মেরিন) মো. আব্দুস সোবহান জানান, গত ঈদ ও পূজায় পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরির গতি বাড়াতে সরকার ফেরি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহন করে৷ গত বছর এই সময় এ ঘাটে ফেরি ছিল মাত্র ১২টি৷ আর বর্তমানে ফেরি রয়েছে ১৮টি৷ এর মধ্যে ৯টি রো রো, ৩টি কে-টাইপের ও ৬টি রয়েছে ইউটিলিটি ফেরি৷ ১৮টি ফেরি সার্বক্ষনিক সচল থাকার কারনে কখনই ঘাটের দুই তীরে যানজট হয়নি৷ ঈদেও কোন ধরনের যানবাহন চলাচলের সমস্যা হয়নি৷ যাত্রী দুর্ভোগও ছিল নাএদিকে বাস কাউন্টারগুলোতে কর্মরতরা জানান, আগামী রোববার থেকে বেশির ভাগ লোক ঢাকায় ফিরবেন৷বাসযাত্রী শরিফুল জানান বলেন, আমার বাসা আমিনবাজার এবং অফিস কারওয়ানবাজার৷ আমার অফিসে যেতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে৷ কিন্তু বুধবার লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট৷ ঢাকার রাস্তার অবস্থা যদি সব সময় এমন হতো, তাহলে অফিসে যাওয়া নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তাই হতো না৷
তবে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী চলাচলকারী বিআরটিসি পরিবহনের চালক কালাম জানান, রাস্তায় মানুষ খুব কম, সিট খালি রেখেই গাড়ি চালাতে হচ্ছে৷ তবে আগামী দু’এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরেক রকম হবে৷ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় খুব একটা নেই৷ যারা ফিরছেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে পারায় তাদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক৷ তারা বলেন, নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়ার পর, জীবিকার তাগিদে এ ফিরে আসা৷
ট্রেনে কিছুটা ভিড় থাকলেও বাস ও লঞ্চগুলোতে ফিরে আসা যাত্রীদের চাপ এখনো তীব্র নয়৷ নির্বিঘ্নেই ফিরছেন মানুষজন৷ প্রথম কর্মদিবসে অফিস-আদালতে উপস্থিতি কম, এখনো ঈদের আমেজ, শুভেচ্ছা বিনিময় করেই কাটছে সময়৷ শেষ হয়েছে ঈদ ও পূজার ছুটি, কিন্তু কাটেনি উত্সবের আমেজ৷ মানুষজন এখনও তেমনভাবে ফিরতে শুরু করেনি ঢাকায়৷ যারা ফিরেছেন তারা বলছেন ইচ্ছে না থাকলেও জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ফিরতে হয়েছে রাজধানীতে৷
মহাখালী, সায়েদাবাদ এবং গাবতলীর বাস টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ খুব একটা নেই৷ নির্বিঘ্নেই ফিরছেন সকলে৷কমলাপুর রেলষ্টেশনের চিত্র কিছুটা ভিন্ন৷ যাত্রীদের ভিড় রয়েছে স্টেশনে৷ তবে, ঢাকায় ফিরে আসা যাত্রীদের পাশাপাশি রয়েছে বাড়ি ফেরা যাত্রীরও চাপ৷রাস্তা ফাঁকা পাওয়া যাবে এ আশায় ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবি মানুষের পরিবারের সদস্যরাও৷ খুশির ছাপ রয়েছে সবার চোখে মুখেই৷সকাল থেকে যেসব লঞ্চ ঢাকা এসেছে তাতে যাত্রীদের ভিড় কম৷ যারা ঢাকা ফিরেছেন তারা সবাই খুশি, খুশি প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে পেরে, আর ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই ফিরতে পেরে৷