দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৮অক্টোবর : ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংশ্লিষ্টার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জঙ্গি তত্পরতার জন্য দেশের এক ইঞ্চি জমিও ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না৷ বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন৷
গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খয়রাগড়ায় বোমা বানাতে গিয়ে দুই বাংলাদেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে৷ অপরদিকে গত সপ্তাহে বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পেছনে বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়৷
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে খয়রাগড়ায় বোমা বানাতে গিয়ে দুই বাংলাদেশি জঙ্গি নিহত হয়৷ গণমাধ্যম ও লোকমুখে শুনেছি,তারা দু’জনই বাংলাদেশি৷ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ওই ঘটনায় দুই বাংলাদেশি শনাক্ত হওয়ার পর ভারতের ডেইলি হিন্দু পত্রিকার সম্পাদক ফোনে এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন৷ আমি তাদেরকে বলেছি আপনারা তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব৷ আমরা কোনো সুযোগ দেব না৷ যাতে কেউ দেশের বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে৷বাংলাদেশের কোনো ভূমি জঙ্গিদের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলেও ওই সম্পাদককে জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷
প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারত সরকার অফিসিয়ালি এখনো কিছু জানায়নি৷ অফিসিয়ালি জানানোর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, ভারত সরকারিভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব৷ ভারত সরকার জানিয়েছে তারা সন্ত্রাস নিয়ে তথ্য আদান-প্রদান করবে৷
সুন্দরবনে ১৩ জন জলদস্যুর নিহত হওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা কাসেম বাহিনীর সদস্য৷ গ্রামবাসী তাদের ওপর অতিষ্ঠ ছিল৷ তাই তাদের ধাওয়া করে৷ পরে পুলিশে আসলে তারা বনে চলে যায়৷ পুলিশ বনে গেলে জলদ্যসু্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৩ জন জলদসু্য নিহত হয়৷ এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন৷প্রতিমন্ত্রী জানান, ঈদ-পূজায় কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি৷ দেশবাসী উপলব্ধি করতে পেরেছে, ধর্ম যার যার উত্সব সবার৷ এজন্য শান্তিপূর্ণভাবে উত্সব পালন সম্ভব হয়েছে৷ কোথাও কোনো অঘটন ঘটেনি৷
প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার খাগড়া্গড়ে গত বৃহস্পতিবার বোমা তৈরির সময় দুই জঙ্গির মৃতু্যর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন ব্যাপক উত্তপ্ত৷ ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে কড়া সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য পুলিশ৷ এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তের অরক্ষিত এলাকাগুলো বন্ধ করে (সিল) দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
সোমবার রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) জি এম পি রেড্ডি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে স্পেশাল আইজি (সিআইডি) দয়মন্তী সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এর পরই রাজ্য পুলিশের ডিজি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তের অরক্ষিত এলাকা সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দেন৷ পাশাপাশি রাজ্য পুলিশকে কড়া সতর্ক অবস্থায় থাকারও নির্দেশ দেন তিনি৷ এ ছাড়া রাজ্যের প্রতিটি থানাকে নাশকতা প্রতিরোধে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি জি এম পি রেড্ডি৷
গত বৃহস্পতিবার বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত শাকিল আহমেদ ও সুবহান মণ্ডল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে দাবি করেছে রাজ্য পুলিশ৷ পুলিশ জানায়, ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া শাকিল আহমেদের স্ত্রী রাজিয়া বিবি ও আহত আবদুল হাকিমের স্ত্রী আলিমা বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন বলেন, তাঁরা জেএমবির সঙ্গে যুক্ত৷ তাঁরা আরও জানান, নিহত শাকিল আহমেদ ও তাঁর সঙ্গীরা খাগড়া্গড়ে তৃণমূলের এক কর্মীর বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে অবস্থান করে সেখানে নাশকতার জন্য বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করে আসছিলেন৷ঘটনার তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইডির গোয়েন্দারা আরও জানান,মধ্য কলকাতার বড়বাজারের একটি দোকান থেকে রাসায়নিক দ্রব্য কিনে এনে বিস্ফোরক বানাতেন ওই ব্যক্তিরা৷
এদিকে বোমা বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, শাকিল আহমেদ বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটের বেশ কিছু লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন৷ ওই কলগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ঘটনার পর তৃণমূল কং গ্রেস এখন সন্ত্রাসবাদী ও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির আখড়া বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা৷
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে জঙ্গিদের গতিবিধি নিয়ে ঢাকার কাছে নয়া দিলি্ল তথ্য চাইতে পারে বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
ওই ঘটনায় নিহত শাকিল আহমেদ বাংলাদেশি নাগরিক-এ বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট হওয়ার পর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) দুই দেশে জঙ্গিদের যাতায়াত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে চাইছে বলে এতে বলা হয়৷গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের ওই বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে শাকিল ও স্বপন ওরফে সুবহান মণ্ডল নিহত হন, যারা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের ( জেএমবি) একটি শাখার সদস্য বলে ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দাবি৷
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্ত পেরিয়ে নদীয় জেলায় ঢুকে ভারতের একটি ভোটার আইডি যোগাড় করেন শাকিল৷ এরপর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় একটি ব্যবসা শুরু করেন তিনি৷ ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এখন বাংলাদেশে শাকিলের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চায়৷
ঘটনার দিনই শাকিলের স্ত্রী গুলশানা বিবি ওরফে রাজিয়া বিবি এবং বোমা বানানোর সঙ্গে জড়িত ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত আব্দুল হাকিমের স্ত্রী আমিনা বিবিকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এনআইএ বলছে, বাংলাদেশে উত্সবের সময় হামলা চালানোর জন্য বর্ধমানে ওই বোমা বানানো হচ্ছিল৷ বোমা বিস্ফোরণের পর ওই দুই নারী যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন তাতে বোঝা গেছে তারাও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত৷