দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৮অক্টোবর : রাজনীতিতে নামছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা.রেজাবায়দা রহমান৷আগামী জাতীয় কাউন্সিলেই বিএনপির রাজনীতিতে অভিষেক হতে পাওে েেজাবায়দা রহমানের৷ ক্লিন ইমেজের অধিকারী ডা. জোবায়দার রাজনীতিতে আসা নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে৷অনেক দিন ধরেই নির্বাচনী রাজনীতিতে পুত্রবধূ জোবায়দাকে পাশে রাখার পরিকল্পনা করে আসছিলেন খালেদা জিয়া৷ তাকে সঙ্গে নিয়েই সারাদেশ সফরের ইচ্ছা রয়েছে তার৷ দলটির নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সামনে ডা. জোবায়দা দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন৷
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বপরিবার যুক্তরাজ্যে৷ ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো চিকিত্সা নিচ্ছেন সিঙ্গাপুরে৷ পারিবারিকভাবে অনেকটাই নিঃসঙ্গ বিএনপি চেয়ারপারসন দীর্ঘ সাত বছর ধরে৷ দলও নানারকম চ্যালেঞ্জের মুখে৷ এরকম পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে, তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের দেশে ফিরে আসার কথা৷কর্মীদের সঙ্গে সুর মেলান দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ৷ এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ডা. জোবায়দা রহমান রাজনীতিতে আসতেই পারেন৷ তাতে কোনো বাধা আছে বলে মনে হয়না৷ বরং তিনি রাজনীতিতে নামলে দলের জন্য ভালোই হবে৷দলের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক বলেন, ডা. জোবায়দা রহমান রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য৷আর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্তে তিনি রাজনীতিতে আসতেই পারেন৷ তিনি আসলে দলের অবস্থা আরো জোরদার হবে৷
দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে,জোবায়দা রহমানকে দেওয়া হতে পারে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ আগামী নির্বাচনে সিলেটের একটি আসনে তাকে দলীয় প্রার্থী করার চিন্তাভাবনাও চলছে৷জোবায়দা রহমান গত ছয় বছর ধরে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বসবাস করছেন৷ একটানা দীর্ঘ সময় চাকরিতে অনুপস্থিত থাকার কারণে সমপ্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চিকিত্সকের পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়৷
পবিত্র ঈদুল আজহার পর কঠোর আন্দোলন সফল করতে নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি৷ এবার সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচিতে বড় বড় নেতা রাজপথে না নামলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি৷ শিগগিরই এ বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য,কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, মহানগর,জেলা-উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সতর্কবার্তা পেঁৗছে দেওয়া হবে৷ রাজপথে না নামলে নেতারা মনোনয়ন পাবেন না
একই সঙ্গে জোটের শরিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রতিও এ নির্দেশনা দেওয়া হবে৷ দশম সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে সমপ্রতি দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ দলের একাধিক সিনিয়র নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
সূত্র জানায়, ঈদের পর ২০ দলীয় জোটের নেতাদের বৈঠক করে জোটের সমস্যা সমাধান এবং আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি৷ রাজধানীতে আন্দোলন সফল করতে নবগঠিত মহানগর কমিটিকে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে আগামী এক মাসের বেশি সময় দেবে না৷ এর মধ্যে তারা সফল না হলে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য হবেন দলের হাইকমান্ড৷বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে৷ এ লক্ষ্যে দল ও জোটকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে৷ তারই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে৷ জনবিচ্ছিন্ন সরকার শুধু পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না৷দলীয় নেতাদের রাজপথে নামার ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেক েনতার কার্যক্রম সম্পর্কেই হাইকমান্ড অবগত আছেন৷ তবে রাজপথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে
দল ও জোটের নেতারা উত্সাহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন৷ কবে নাগাদ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক সময় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে৷ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর আবার কঠোর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷
সমপ্রতি বিভিন্ন জনসভায় তিনি বলেছেন, সরকারকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা হবে৷ অবশ্য খালেদা জিয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেছেন, খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়৷ একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার কঠোর আন্দোলনকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে বলেও পাল্টা হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা৷ এর পরও গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে এক জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঈদের পর দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে৷ এ পরিস্থিতিতে ঈদের পর আবার রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে না করলেও দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে দশম সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ শুধু তত্কালীন মহানগর কমিটিকে দোষারোপ করলেও আন্দোলন সফল করতে দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা রাজপথে নামেননি বলে মনে করেন বিএনপিপ্রধান৷ সমপ্রতি দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করার কৌশল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন৷ ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে কোনো মূল্যে আন্দোলনকে সফল করে দাবি আদায় করতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে দলের প্রতিটি কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব শীর্ষস্থানীয় নেতাকে রাজপথে নেমে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে৷ যারা রাজপথে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে ভূমিকা রাখবেন না, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে৷
এ বিষয়ে বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করতে বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড৷ এ পরিস্থিতিতে ঈদের পর যেসব কর্মসূচি দেওয়া হবে, তাতে প্রত্যেক নেতাকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে৷ যারা ব্যর্থ হবেন, তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না৷ বিভিন্ন কৌশলী পদক্ষেপের মাধ্যমে নেতাদের কাছে এ সতর্কবার্তা পেঁৗছে দেওয়া হবে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিরোধী দলের নেতাদের ওপর মামলা-হামলা ও নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছে৷ এভাবে আর বেশিদিন তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না৷ বিএনপি জনগণকে নিয়ে অচিরেই সরকারকে বিদায় করবে৷
সূত্র জানায়, ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার আগে প্রথমে গণসংযোগ কর্মসূচি দেবে বিএনপি৷ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথমেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিভিন্ন জেলায় জনসমাবেশ করবেন৷ বিশেষ করে যেসব জেলায় গত পাঁচ বছরে তিনি যাননি, এবার সেখানে যাবেন৷ এ ক্ষেত্রে ঈদের পরপরই নীলফামারী, নাটোর ও কুমিল্লা জেলা সফর করবেন৷ এসব জনসভায় খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে জনগণের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন৷ পরে দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করবেন৷
ঈদের পরই ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি৷ নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আপাতত ঢাকায় মহাসমাবেশ ও ময়মনসিংহে খালেদা জিয়ার জনসভার কথাই শোনা যাচ্ছে জোরে শোরে৷ ডিসেম্বরে ঢাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে৷ঈদের পর কঠোর কর্মসূচির কথা বার বারই বলে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ তবে আন্দোলনে ধীরে চলো নীতিতেই এগোচ্ছে বিএনপি৷ দলটির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ২০ দলীয় জোটের পরবর্তী কর্মসূচির যে ধারণা পাওয়া গেলো তা অনেকটা এরকম৷
বিএনপি নেতারা বলছেন, ঢাকায় মহাসমবেশ ও ঢাকার বাইরে জনসভাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ ঈদের পরে লাগাতর কর্মসূচি থাকছে না৷আন্দোলনের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতির কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ৷বিএনপি নেতারা বলছেন, ইসু্য ভিত্তিক কর্মসূচির পাপাপাশি সরকারের আচরণের ওপর যে কোন সময়ে পাল্টে যেতে পারে ২০ দলের আন্দোলনের কৌশল৷কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার পক্ষে নন ২০ দলীয় জোট নেত্রী৷ সময় হলে আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে৷ এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে দলমত নির্বিশেষে এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আন্দোলনের সময় আসছে৷ দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না৷ সময়মতই আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে৷ এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় করতে হবে৷ দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন৷কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পর্ব শেষে দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷খালেদা জিয়া বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না, আমরা আন্দোলনেই আছি৷ তবে সময় মতো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে৷ এ কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবৈধ সরকারকে পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা করা হবে৷তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে৷ এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷আবারো দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান বিএনপি চেয়ারপারসন৷খালেদা জিয়া দেশবাসী ও নেতা-কর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই৷ এবার তারা দুর্ভোগ-ভোগান্তি-দুশ্চিন্তার মধ্যে ঈদ উদযাপন করছে৷ দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই৷ ঈদে ঘরমুখি মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছিল না৷ ট্রেন, বাস, লঞ্চ সবপথেই মানুষজন চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছে৷ রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে হাইওয়েতে ছিল ব্যাপক যানজট৷ দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গ্যাস সরবরাহে অপ্রাপ্যতা সব মিলিয়ে দেখা গেছে, এসব দেখার কেউ নেই৷
আগাম নির্বাচনের দাবি পাশ কাটাতে সরকার সংলাপ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে বলে দাবি করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ তবে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তাদের দাবি পাশ কাটানো যাবে না বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন তিনি৷রিজভী বলেন, অত্যাচার-চক্রান্ত-সন্ত্রাস-খুন-বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও জনগণের আন্দোলন থেমে নেই৷ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের অভূ্যত্থান এখন আসন্ন৷ ধূম্রজাল সৃষ্টি করে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগবে না৷নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে৷আগের দিন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি, সংলাপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা৷ আমরা এটি বাংলা ভাষায় বলেছি৷
এরপরও প্রধানমন্ত্রী এই সংলাপ নিয়ে এখন যা বলছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ আমরা বলতে চাই, কুরুচিপূর্ণ বা অপকথা বলে প্রধানমন্ত্রী ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে জনগণের দাবি পাশ কাটাতে পারবেন না৷ সোমবার গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনাদেরই তো তালের ঠিক নাই, কথার ঠিক নাই৷ ফোন করলে কথা বলেন না, আবার এখন বলে বসতে হবে৷ দাওয়াত দিলে আসবেন না আবার বলে কথা বলতে হবে৷ সবসময়ই যেন মনে হচ্ছে যে, মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন, কখন কি বলছেন তার কোন ঠিক ঠিকানা নাইআলোচনা ও সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা নেই বলে অভিযোগ করে রিজভী আহমেদ বলেন, হাসিনাকে এই মুহুর্তেই পদত্যাগ করতে হবে৷ আর পদত্যাগ না করলে আমরা বিপুল বেগে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের উচ্ছেদ করতে মাঠে নামব৷এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ (এমপি) বলেন, খালেদা জিয়ার আন্দোলন কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না৷ আন্দোলন মোকাবেলায় আওয়ামী লীগেরও আগাম প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন হবে না৷
অন্যেিদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখন আর আলোচনা প্রস্তাব নয়, পদত্যাগের দাবি জানাবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ মহাত্মা গান্ধী যেভাবে অহিংস আন্দোলন করে বৃটিশদের হঠিয়েছিল একইভাবে আন্দোলন করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপি৷ তবে অহিংস আন্দোলনে যদি পুলিশ গুলি চালায় তাহলে রাজপথে দলের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে থেকে গুলির জবাব দেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস৷
সমপ্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর কমিটিকে সুসংগঠিত করার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে৷ এই দায়িত্বটা আমাকে না হলে অন্য কাউকে নিতে হতো৷ তবে মহানগর দীর্ঘদিনের যে বন্ধ্যত্ব রয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি৷
মহানগরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয় তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নতুন কমিটি কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ঢাকা মহানগরের কোন থানা বা ওয়ার্ডে সুসংগঠিত কোন কমিটি নেই৷ বিভিন্ন থানায় নানা গ্রুপ, দলাদলি কিংবা নতুন করে তৈরি হওয়া কোন্দলে জর্জরিত৷ আবার যারা অনেকদিন ধরে একই পদে আছেন তারা অবস্থান ছাড়তে চাচ্ছেন না৷ অথচ তিনি নিজেও কিছু করতে পারছেন না৷ এ ধরনের কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সংগঠন করে এই পর্যায়ে এসেছি৷ আগে সংগঠনের সম্মেলনের জন্য কোন এলাকার কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতাম৷ সেখানে দিনব্যাপী আলোচনা চলতো৷ ইলেকশন বা সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি নির্বাচিত হতো৷ কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে, আমরা যেমন রাস্তায় মিছিল করতে পারি না তেমনিভাবে কোন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়৷ যেটা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক৷ তবে সেসব বাধাও অতিক্রম করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বেঁধে দেয়া দুই মাস সময়ের মধ্যে থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে মহানগর বিএনপির এই আহ্বায়ক বলেন, আমাদের নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর এক মাস চলে গেছে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে৷
কালো পতাকা মিছিল, মানববন্ধন, জনসভা, হরতালের মতো বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছি৷ তার ওপর সপ্তায় ৫ দিন আমাদের কোর্টে যেতে হয়৷ সেই হিসাবে ২ মাস পূর্ণাঙ্গ হয়নি আমাদের৷ ঘন্টার হিসাবে এক মাসও হয়নি৷ তবে ঘন্টা আর মাস হিসাব করে কমিটি করা যাবে না৷ সুষ্ঠু, সুন্দর কমিটি করার জন্য আমার যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকু ব্যয় করবো৷ তাতে আমি অনেকখানি এগিয়ে গেছি৷ মহানগরের গঠিত টিমপ্রধানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে মির্জা৷ আব্বাস বলেন, আসলে ১৫টা টিম করা হয়নি৷ কথাটা ছড়িয়ে গেছে৷ আমিই সব করছি৷ যাকে আমি এঙ্পার্ট মনে করছি তাকে এলাকাগুলোর দায়িত্ব দিচ্ছি৷ সেই হিসাবে কেউ যদি বাসা বাড়িতে কিংবা নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক আলোচনা সেরে নেন তাহলে তো দোষের কিছু নেই৷ আমিও তো অফিসে সবার সঙ্গে আলোচনা করছি৷
মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীদের সমন্বয় করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমার কোন আলাদা অনুসারী আছে৷ সাদেক হোসেন খোকারও কোন অনুসারী আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না৷ তবে তিনি যেহেতু মেয়র ছিলেন তাকে কেন্দ্র করে কিছু লোকের একটি বলয় গড়ে উঠেছিল৷ সেটা ছিল স্বার্থান্বেষী মহল৷ এছাড়া আর কোন অনুসারী নেই৷ সবাই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের অনুসারী৷ এবং সবাই বিএনপির রাজনীতি করেন৷ আন্দোলন সফল করার জন্য কোন সমন্বয় কমিটি করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ২০ দলের তো একটা সমন্বয় কমিটি আছে৷ এছাড়া বিএনপি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সমন্বয় কমিটির কোন প্রয়োজন নেই৷ সবাই তো বিএনপি করেন৷ সহিংসতার জন্য সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, অতীতে ‘৫২ ভাষা আন্দোলন ছিল অহিংস৷ রাজপথে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়েছিল তখন পুলিশ গুলি চালিয়েছে৷
সহিংতা করেছিল পুলিশ৷ একইভাবে আমাদের অহিংস আন্দোলনে পুলিশ সহিংসতা করছে৷ আমরা কোন রেজিমেন্টাল ফোর্স কিংবা সশস্ত্র দল নই৷ আমরা সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে রাজপথে অহিংস আন্দোলন করবো৷ অহিংস আন্দোলনে সরকার পতনের বিষয়ে তিনি বলেন, গান্ধী যদি অহিংস আন্দোলন করে বৃটিশদের হঠাতে পারে তাহলে আমরা পারবো না কেন? আমরাও এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে পারবো৷ পুলিশের গুলির ভয় দেখিয়ে যদি এবার বিরোধী জোটের আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা করে সরকার তাহলে বিএনপির কৌশল কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, গত ২৯শে ডিসেম্বরের আগে পুলিশ যা করেছে এবারও তা করবে নিশ্চিতভাবে অনুমান করা যায়৷ এবারও যদি পুলিশ গুলি করে আমরা রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকবো৷ আমি দলের নেতাকর্মীদের বলেছি, গুলি ওরা করুক৷ অহিংস আন্দোলনে পুলিশ যখন সহিংতা করবে তখন সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবে৷ সাধারণ মানুষ যখন দেখবে, আমার ভাই রাস্তায় গুলি খেয়েছে তখন তারা ঘরে বসে থাকবে না৷ এটা অতীতে বাংলাদেশে কখনও হয়নি৷