দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২অক্টোবর : কোরবানির ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে জাল টাকা ছড়িয়ে পড়েছে৷ প্রতারক চক্র নানা কায়দায় জাল টাকার ব্যবসায় মাঠে নেমেছে৷ তারা ঢাকার বাইরে ৫০ লাখ টাকার নোট ইতিমধ্যে ছেড়েছে৷ তিনটি স্তরে ভাগ হয়ে চক্রটি কাজ করছে৷ এ চক্রের মূল হোতাসহ আটজনকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)৷গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. আবুল খায়ের (৪৬), মো.আজিজুল হক (২৯),মো. সোহেল রানা (২৯), মো. শাহ আলম (২৭), মো. শহিদুল ইসলাম (২৯), মো. ইয়াসিন আরাফাত (১৯), মো. সোহাগ (২৭) ও মাসুদ (২২)৷ তাদের থেকে প্রায় অর্ধকোটি জাল টাকা, এগুলো তৈরির কাগজ, ফ্রেম, নিরাপত্তা সুতা, ল্যাপটপ ও ছাপার মেশিন (প্রিন্টার) উদ্ধার করা হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম৷ গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আবুল খায়ের (৪৬) নামের একজনকে চক্রের মূল হোতা বলে উল্লেখ করেন মনিরুল৷ তিনি বলেন, সবুজবাগ থানার উত্তর বাসাবো ঝিলপাড় ৫৫/১০/৪ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে বুধবার রাতে জাল টাকা তৈরির সময় খায়েরসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়৷ এর আগে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উত্তর বাসাবোর তিলপাপাড়া কালভার্ট মোড় আবদুর রবের মোটরসাইকেল গ্যারেজের সামনে থেকে তিনজনকে আটক করা হয়৷ তাদের থেকে তথ্য নিয়ে পরে খায়েরের বাসায় অভিযান চালানো হয়৷
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, চক্রটির তিনটি গ্রুপ রয়েছে৷ প্রথমে টাকা তৈরির কাগজ সরবরাহকারী, দ্বিতীয় গ্রুপ উন্নতমানের প্রিন্টারের মাধ্যমে টাকা ছাপানো এবং তৃতীয় গ্রুপ সারা দেশে জাল টাকা সরবরাহের কাজ করছে৷তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় তাদের থেকে ৪৯ লাখ টাকার জাল নোট পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে ২৫ লাখ পুরো ছাপানো এবং অন্যগুলো অর্ধছাপানো৷ এছাড়া বিপুল পরিমাণ টাকা তৈরির কাগজ, ১২টি ফ্রেম, রং, নিরাপত্তা সুতা, পাঁচটি ল্যাপটপ, তিনটি প্রিন্টারসহ টাকা তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে৷ ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, উদ্ধার হওয়া মালামাল দিয়ে তারা আরো প্রায় এক কোটি টাকার জালনোট ছাপাতে পারত৷ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা জাল নোট বানায়৷ বাংলাদেশি টাকা, ভারতীয় রুপি, ডলার, ইউরোসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে ছয়-সাত বছর যাবত্ বাজারজাত করছে তারা৷
তিন ধাপে জাল টাকা সাধারণ মানুষর হাতে যায়৷ প্রথমে প্রতি এক লাখ টাকার নোট বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকায়৷ দ্বিতীয় ধাপে একই পরিমাণ নোট ৪০-৪৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় ধাপে পুরো এক লাখ টাকার বিণিময়ে এক লাখ টাকাই নেয়া হয়৷ এরপরেই তা সাধারণ মানুষের হাতে যায়৷ বর্তমানে বিশেষ করে গুরুরহাটে বেশি টাকার বান্ডেলের সঙ্গে জাল নোটগুলো চালিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ আবুল খায়ের এর আগে দুইবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল৷ জেল থেকে বেরিয়ে সে আবারও এই ব্যবসা শুরু করে৷ এক লাখ টাকা ছাপতে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়৷ অনেক বেশি লাভ হওয়ায় এ ব্যবসার প্রতি তাদের এতো আগ্রহ৷ দেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থায় বিচারকাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগে৷ এর ফলে আসামিরা জামিন নিয়ে বের হয়ে যায়৷ জাল টাকা চক্রের আসামি হিসেবে ঘুরে ফিরে একই লোকজন গ্রেফতার হচ্ছে৷ বলেন মনিরুল৷ গরুর হাটসহ সব সবখানে লেনদেনে জালটাকা প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷ আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন পাঁচ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রির টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছিল এই চক্রটি৷ ইতোমধ্যে ৫০ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করেছে তারা৷সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম৷
তিনি বলেন, জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের ৮ সদস্যকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য ওেবড়িয়ে আসে৷সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, এই চক্রের মূলহোতা আবুল খায়ের এর আগেও ডিবির হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন৷তারাই ঘুড়েফিরে গ্রেফতার হয়৷ আবার জামিনে বেরিয়ে জালটাকার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে৷ প্রতিটি গরুর হাটে জালটাকা সনাক্তের জন্য একাধিক মেশিন বসানো আছে৷ প্রয়োজনে এসব মেশিনের সহযোগিতা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি৷