পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২অক্টোবর : পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার৷ বুধবারই মক্কা থেকে এহরাম বেঁধে লাব্বায়েক, আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে মিনার উদ্দেশে রওনা হন হাজিরা৷ এরইমধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের হজের আনুষ্ঠানিকতা৷ ৩ অক্টোবর শুক্রবার পবিত্র হজ৷ এ দিন আরাফাতের ময়দানের ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজ৷ এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান বুধবার মক্কা থেকে মিনায় গেছেন৷মক্কা হজ মিশন সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই একযোগে সব হাজিরা রওনা হন মিনার উদ্দেশে৷ এ সময় পবিত্র মিনায় লাখ লাখ মুসলি্লর ‘লাব্বায়েক, আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে৷ মূলত ৭ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় অবস্থান করেই হজ সম্পন্ন করতে হয়৷ হাজিরা মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত কসর নামাজ আদায় করবেন৷ শুক্রবার ফজরের পর তারা আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন৷

শরীয়ত মোতাবেক-হজের অংশ হিসেবে সোমবার সকাল পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন মিনায়৷ সেখানে হাজিরা সারা জীবনের পুঞ্জীভুত গোনাহ মাফ ও মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকির-আসকার ও ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে সময় কাটাবেন৷ প্রতিদিন নিজ নিজ খিমায় (তাবু) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন জামায়াতের সঙ্গে৷ প্রতিটি খিমায় ১৫ থেকে ২০ জন হজযাত্রী একত্রে থাকার সুবিধা রয়েছে৷শুক্রবার হজযাত্রীরা নিজ নিজ খিমায় ফজরের নামাজ আদায় শেষে- আরাফাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন৷ সাধারণত হজ যাত্রীরা নিজস্ব মোয়ালেলমের ব্যবস্থাপনায় পাঠানো বাসে মীনার মাঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে থাকেন৷ ফজর থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়৷ চলে দুপুর পর্যন্ত৷ হজ যাত্রীরা খোদার প্রেমে উন্মাদের মতো ছুটেন আরাফাতে৷ তাঁদের সঙ্গে থাকে শুধু একটি ব্যাগ -যাতে রাখা হয় কিছু অতিব জরুরী জিনিস পত্র ৷ যেমন থালা বাসন, পানির মগ, ওষুধ ও অজু- গোছলের জন্য গামছা জাতীয় কাপড় চোপড়৷

মূলত আরাফাতের ময়দানে ৯ই জিলহজ (সোমবার) সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজের মূল কাজ৷ সহীহ হাদিসে রয়েছে যিনি ৯ই জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অকুফে আরাফায় করলেন-তিনিই হাজী হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন৷ আর হজে মকবুলের (কবুল হজ) ফজিলত হচ্ছে-নিশ্চিত জান্নাত লাভ৷এ দিন আরাফাতের ময়দানে এক আজানে জোহর ও আসরের (জুহরাইন) নামাজ আদায় করবেন৷ দুপুরে আরাফাতের মসজিদে মিনারায় হজের খুতবা দেয়া হয়৷ তারপর সন্ধ্যায় মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন৷ মুজদালিফায় পৌঁছে আবারও এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ৷ রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করবেন৷

সেখান থেকে তারা মিনার জামারায় (প্রতীকী) শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন৷ মঙ্গলবার ফজরের নামাজ শেষে আবার ফিরে আসবেন মিনায়৷ মঙ্গলবার তিন ধরনের জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়৷ তারপর পশু কোরবানি করে পুরুষরা মাথা মু্ন্ড করবেন৷ এভাবেই ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবেন তারা৷ সর্বশেষ ঐদিন যে কোন একটা সুবিধাজনক সময়ে তারা নিজ নিজ দায়িত্বে মীনা থেকে পবিত্র কাবা শরীফে ফরজ তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন৷ হাজীদের জন্য এবার মীনা থেকে মক্কা যাওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ ট্রেন৷মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশন সূত্রে জানা যায়-এ বছর প্রায় বিশ লক্ষাধিক মুসলমান হজ পালন করছেন৷ এর মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার৷ তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন৷ তবে এ পর্যন্ত ৩৩ জন হজযাত্রীর বিভিন্ন কারণে স্বাভাবিক মৃতু্য ঘটেছে৷

এ বছর বাংলাদেশী ব্যালটি হাজীরা মিনার ২২ নম্বর মোয়ালেলম তাবুতে অবস্থান করবেন৷ নন ব্যালটি হাজীরা থাকবেন মিনার ৪, ১৪, ১৮, ২২, ২৫, ৫৩, ৫৮, ৬৬, ৭১, ৭২, ৭৭, ৮০, ৮১, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯৩, ৯৫, ৯৫, ৯৮ ও ১১৫ নম্বর তাঁবুতে৷ শুক্রবার পবিত্র হজ পালন করবেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ এবছর পবিত্র জুমার দিনে মূল হজ অনুষ্ঠিত যাচ্ছে বিধায় এ বছর হজ পালন করতে আসা হাজীরা পেতে যাচ্ছেন হজে আকবর৷ জুমা এবং হজ একই দিনে অনুষ্ঠিত হলে ওই বছরের হজকে হজে আকবর বলা হয়৷

মূলত হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে৷ এদিন সকাল থেকে হাজীরা এহরাম বেঁধে লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনি দিয়ে পবিত্র মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন৷ আর এরমধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে হজে আকবরের মূল আনুষ্ঠানিকতা৷বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান বুধবার মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন৷

বৃহস্পতিবার পবিত্র মিনায় লাখ লাখ মুসলি্লর সমবেত কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’-প্রভু হে বান্দা হাজির তোমার দরবারে৷হাজীরা মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত কসর নামাজ আদায় করবেন এবং শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন৷ শুক্রবার ফজরের পর তারা আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন৷ শুক্রবার আরাফাতে হজের খুতবা শুনবেন এবং এক আজানে জুমা ও আসরের (জুহরাইন) নামাজ আদায় করবেন৷সন্ধ্যায় (সূর্যাস্তের পর) তারা মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন৷মুজদালিফায় পৌঁছে আবারো এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ৷ সেখান থেকে জামারায় (প্রতীকী শয়তান) নিক্ষেপের জন্য কঙ্কর (ছোট পাথর) সংগ্রহ করবেন৷মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপনের পর ১০ জিলহজ (শনিবার) সকালে সূর্য উদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওনা দেবেন হাজীরা৷

সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার পূর্বে (দুপুরের আগে) জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তান) সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা৷ জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হাজীরা পশু কোরবানি করবেন৷ এরপর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম খুলে পোশাক পরবেন হাজীরা৷ একে তাহাল্লুলে আসগর বলা হয়৷তারপর তাওয়াফে ইফাদা (কাবাঘর তাওয়াফ) এবং সায়ী (সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর) শেষ করে ফের মিনায় ফিরে যাবেন৷

১১ ও ১২ জিলহজ অর্থাত্‍ রবি এবং সোমবার মিনায় অবস্থান করে সূর্য হেলে পড়ার পর প্রতিদিন ছোট, মাঝারি ও বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করবেন হাজীরা৷ যারা ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করতে পারবেন না, তারা ১৩ তারিখ মঙ্গলবার সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করবেন এবং জামারায় ১১ ও ১২ তারিখের মতো পাথর নিক্ষেপ করবেন৷এরপর বুধবার মক্কায় অবস্থান করে বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবেন হাজিরা৷ আর যারা মদিনা জিয়ারত করবেন না তারা মদিনার উদ্দেশে মক্কা ত্যাগ করবেন৷

এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৭ হাজার ৯৮৯ জন বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করবেন৷এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি হজ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷অপরদিকে প্রতিবছর বাংলাদেশে সৌদি আরবের একদিন পরে ঈদ অনুষ্ঠিত হলেও এবছর তা হবে দুই দিন পরে, সৌদি আরবে এ বছর ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪ তারিখ শনিবার আর বাংলাদেশে ৬ তারিখ সোমবার৷