দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২অক্টোবর : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গাপূজার অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত কুমারীপূজা৷ সাধারণত কুমারী পূজা সম্পর্কে ভক্তদের জানার গণ্ডি সীমাবদ্ধ৷ অনেকেই জানেন না কুমারীপূজা কী এবং কী তার রহস্য৷এ সম্পর্কে তেমন কোনো পুঁথি-পুস্তকও নেই যা ভক্তদের জ্ঞানপিপাসা মেটাবে৷ রাজধানীর রামকৃঞ্চ মঠে মহাঅষ্টমীর দিন সকালে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা শুরু এবং ১১টা ১০ মিনিটে শেষ হয়৷
অন্বেষা মূখার্জিকে এবারের কুমারী পূজার জন্য মনোনীত করে পূজা করেছেন ভক্তরা৷ তার বয়স সাত বছর হওয়ায় মালিনী নামকরণ করে তার পূজা সম্পন্ন হয়৷ অন্বেষা মতিঝিলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ণেীর শিক্ষার্থী৷মহাঅষ্টমীর দিন এক থেকে ষোল বছর বয়সী শিশুকন্যাদের মধ্য থেকে একজনকে কুমারী দেবীরূপে পূজা করা হয়৷ বয়স অনুসারে কুমারীকে শাস্ত্রীয় নামকরণ করা হয়৷এ বিষয়ে রামকৃঞ্চের মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবসানন্দ জানান, মা দুর্গা নারীর মূর্তিতে আর্বিভাব হন৷ এ কারণেই কুমারী পূজা করা হয়৷ আর কুমারীরাই সরল ও শুদ্ধ বলে তাদের বেছে নিয়ে এ পূজা সম্পাদন করেন ভক্তরা৷
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রামকৃষ্ণ মঠে পূজা শুরু হয়৷ আর ৮টা ৩৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় জাতীয় মন্দির মহানগর সর্বজনীন পূজা মণ্ডপে পূজা শুরু হয় মহাঅষ্টমীর৷ দেবীর মহাষ্টমীর কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবীর অর্চনা শুরু করেন৷এছাড়া দুপুরে সন্ধি পূজা শুরু হবে এবং দুপুর একটা দুই মিনিটে শেষ হবে৷ মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণও থাকবে৷
শারদীয় দুর্গোত্সবের মহা অষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনগুলোতে আরতি, অঞ্জলী দান ও প্রসাদ নেওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো কুমারী পূজা৷মহা অষ্টমী হলো দুর্গোত্সবের সেই মুহূর্ত, যখন অকল্যাণের প্রতীক মহিষাসুর বধকাণ্ড চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়৷এই তীথিতেই শুদ্ধাত্মা দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে কুমারী কন্যাকে মাতৃরূপে অঞ্জলী দেয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা, যার নাম কুমারী পূজা৷ সাধারণত রামকৃষ্ণ মিশনগুলোই এ পূজার আয়োজন করে৷
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কুমারী পূজা শুরু হয়৷ এর আগে কুমারী কন্যাকে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক, ফুলের মালা ও অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীরূপে৷ঢাকায় এবারের কুমারী অন্বেষা মুখোপাধ্যায়৷ তবে শাস্ত্রমতে এদিন তার নতুন নাম দেয়া হয়েছে মালিনী৷
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপ উপলব্ধি করতেই এ পূজার আয়োজন৷ সাধারণত ১৬ বছরের কম বয়সী কন্যা শিশুদের মধ্যে থেকে ‘দেবীত্বের লক্ষণ বিচার করে’ কুমারী নির্বাচন করেন পুরোহিতরা৷রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহারাজ বলেন, “নারী জগদ্দাত্রীর অংশবিশেষ৷ সমগ্র বিশ্বে তিনি মহামায়ারূপে প্রকাশিত৷ কুমারীতেই সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি- পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সকল কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে বিরাজিত৷ তাই কুমারী পূজা৷
ভক্তদের বিশ্বাস,এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা এবং নারীর মর্যাদার প্রতিষ্ঠা৷ নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার শিক্ষা৷সকালে মতিঝিল থেকে গোপীবাগমুখী রাস্তায় রামকৃষ্ণ মিশনে ঢুকতেই পাওয়া গেল ঢাকঢোলের আওয়াজ৷ বিরামহীন ঢোলের আওয়াজের সঙ্গে থেমে থেমে কাসর ঘন্টা, শঙ্খনাদ আর নানা বয়সের নারীদের উলুধ্বনি৷ সেই সঙ্গে ভক্তকন্ঠের উচ্চরাণ জয়, দুর্গা মাইকি জয়৷এরই মাঝে চলে ভক্তিগীতি- ‘জাগো দুর্গা, দশভুজা জগজ্জননী মা’৷অসামপ্রদায়িক চেতনার গানও শোনা গেল পূজামণ্ডপ থেকে- আমি বলি রাম রাম/আল্লাহ বলো তুমি/ আমার হলো গয়া-কাশী, তোমার মক্কা ভূমি৷
সকাল সাড়ে ১০টায় বাবার কোলে চড়ে মাতৃরূপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন কুমারী দেবী’৷হাজারো ভক্ত জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন তাকে৷অগণিত মানুষের ভিড়ের মধ্যে টুকটুকে লাল শাড়িতে কুমারী দেবীর ‘জীবন্ত প্রতীমার’ চোখে-মুখে চলে শিশুসুলভ ভয় মেশা আনন্দের খেলা৷ তার আসনগ্রহণের পর শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা৷
প্রায় আধা ঘন্টা অগি্ন, জল, বস্ত্র,পুষ্প এবং বায়ুর উপাচারে মন্ত্রপাঠে চলে কুমারী পূজা৷ এ পূজা পরিচালনা করেন স্বামী স্থিরাত্মানন্দ মহারাজ৷মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী অন্বেষার বাবা জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়, মা মহুয়া মুখোপাধ্যায়৷২০০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া অন্বেষা ভক্তদের পূজার পর নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলে, সবাই আমাকে পূজো দিয়েছে, খুবই ভালো লাগছে৷
১৮৯৬ সালে ঢাকায় রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত কুমারী পূজার আয়োজন হচ্ছে৷ সকালে মহাষ্টম্যাদি পূজা প্রশস্তা ও ব্রতোপবাস এবং রাতে সন্ধি পূজার মধ্য দিয়ে মুক্রবার শেষ হয়েছে দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন মহাঅষ্টমী৷ আগামীকাল মহানবমী৷ তবে নবমী এবং দশমী তিথি একই দিন হওয়ায় সারাদেশে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হবে৷শুক্রবার দশমীর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও বিজয়া মিছিলের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন হবে শনিবার৷বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ জানান, বহু বছর পর এবার এ ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটলো৷
মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ হচ্ছে কুমারী পূজা৷ ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল সাড়ে দশ টায় অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা ৷ সকল নারীর মধ্যে মাতৃরূপ এই উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার জন্যই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়৷সকালে ঢাক-ঢোল বাদ্যসহকারে নানা আচারের মধ্য দিয়ে একজন শিশু কন্যাকে দেবী দুর্গার সামনে বসিয়ে কুমারী পূজা করা হয়৷কুমারী পূজা উপলক্ষে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল থেকেই ভক্তদের ভীড় নামে৷ ঢাক-ঢোলের বাদ্য নানা আনুষ্ঠানিকতায় ভিন্নমাত্রা যোগ হয়৷মহাঅষ্টমীর দিন দুপুরে পূজা শেষে প্রতি পূজা মন্ডপে সকল ভক্ত দর্শনাথর্ী অঞ্জলী গ্রহণ করেন৷ এসময় তাদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়৷
রামকৃষ্ণ মঠে পূজা আরম্ভ হবে শুক্রবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে৷ নবমী তিথি সকাল ৬টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত৷ পরে দশমী তিথি শেষ রাত ৪টা ৩৭ মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত৷ সকাল ৬টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর কেবল মহানবমী কল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা প্রশস্তা দিবা ৮টা ৫৯ থেকে ৯টা ৫৮ এর মধ্যে৷
দশমী ঃ এদিন (শুক্রবার ) দিবাগত রাত ৪টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে দশমী শেষ হবে৷ তবে প্রাত ৬টা ৫৪ মিনিট গতে পূর্বাহ্ন ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে কুলিক বেলা এবং বিহিত লগ্নানুরোধে সকাল ৮টা ২৩ মিনিটের মধ্যে দশমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হবে৷এ বছর সারা দেশে ২৮ হাজার ৪শ’ ৫৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৷ গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৮শ’ ৫৮ ৷ রাজধানী ঢাকায় মন্ডপের সংখ্যা ২শ’ ২১টি৷