kk90b2gr-e1412001708595

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০সেপ্টেম্বর: পবিত্র হজ,তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রবাসী বাংলাদেশি ও সাংবাদিকদের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছে৷

লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ঢাকায় সরকারের সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে৷ এছাড়াও লতিফ সিদ্দিকীকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বাংলামেইলের কাছে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব হক শাকিল৷মঙ্গলবার দুপুরে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে৷ তবে এ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন এখনো মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হয়নি৷নাম প্রকাশ করে কোনো সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি৷ তবে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বিকেলে নিশ্চিত করেছে৷ তবে ওই সূত্রও নাম প্রকাশ করতে চায়নি৷ এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি৷

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা মঙ্গলবার বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না৷ ফোনেও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কিছু বলেননি৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদারও বলেন, তিনিও কিছু জানেন না৷ বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে রয়েছেন৷প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত লন্ডনে হলেও তা কার্যকর হবে দেশে ফিরলে৷

এদিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার অন্যান্য মন্ত্রীর পদের মেয়াদের ৫৮(২) নম্বর ধারায় বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী যে কোনো সময় কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন এবং উক্ত মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হইলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে উক্ত মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাইবার পরামর্শ দান করিতে পারিবেন৷যা বলেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী: গত রোববার বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন লতিফ সিদ্দিকী৷

এসময় তিনি বলেন, আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করলো এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে? তারাতো ছিল ডাকাত৷ তখন সে একটা ব্যবস্থা করলো যে আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে৷ এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে৷তিনি বলেন, আমি হজ আর তাবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী, জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী, তবে তার চেয়েও বেশি হজ ও তাবলীগ জামাতের৷

হজ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, হজের জন্য ২০ লাখ লোক সৌদি আরবে গিয়েছে৷ এদের কোনো কাম নাই৷ এদের কোনো প্রডাকশন নাই৷ শুধু রিডাকশন দিচ্ছে৷ শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে৷এসময় তাবলীগ জামাতের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘তাবলীগ জামায়াত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে৷ নিজেদেরতো কোনো কাজ নেই৷ সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়৷ এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সরকারের কেউ নন৷

একজন সাংবাদিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকা নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্য চাইলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন৷ জয় ভাই কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়৷ তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন৷লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷

এদিকে, মন্ত্রিসভা থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ইসলামের অবমাননা ও সংবিধান লঙ্ঘন এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন৷ আর এ অভিযোগে সিলেটের আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে বুধবার৷বুধবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন, সিলেট বারের আইনজীবী মাসুদুর রহমান খান মুন্না৷ তিনি জানান, হযরত মোহাম্মদ (সা.), হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় সংক্ষুব্ধ হয়ে এ মামলা দায়ের করছেন তিনি৷

সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে একটি পক্ষ মামলা দায়ের করতে চাইলেও আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলাটি দায়ের করা সম্ভব হয়নি৷ বুধবার সকাল ১০টার দিকে মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে৷

অন্যদিকে, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর নেতিবাচক মন্তব্যে মঙ্গলবার সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ হয়েছে৷ এতে বক্তারা ইসলামবিরোধী ও হয়রত মুহাম্মদ (সা.), হজ ও তাবলিগ নিয়ে মন্তব্য করায় লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন৷

জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ্য হজ, তাবলীগ এবং প্রধানমন্ত্রী তনয় জয়কে নিয়ে মন্তব্য করায় সরকারের উচ্চ মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়৷ হেফাজতে ইসলাম তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কারের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ঘোষণা দেয় এই মুরতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তাকে দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না৷ মঙ্গলবার সকালে হেফাজতে ইসলাম লতিফ সিদ্দিকীকে \’মুরতাদ\’ আখ্যায়িত করে তার শাস্তি এবং মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্তের দাবিতে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে৷ একই সাথে বিএনপিও এই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেয়৷ এ অবস্থায় সরকার দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভুতিতে আঘাত লাগার বিষয়টি অনুধাবন করে দ্রুত তাকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়৷

বর্তমানে লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে৷ লতিফ সিদ্দিকীর এ ধরনের দৃষ্টতা প্রদর্শনের জন্য নিন্দা জানিয়ে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারাসহ দেশের বিভিন্ন ইসলাম পন্থী দল গুলো৷তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার কওে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবী জানান তারা৷এদিকে দুপুরে সেতু যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ওবায়দুল কাদের বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়৷ কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা৷ এছাড়াও তিনি আমাদের দলের ভবিষ্যত নেতা৷ প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷তিনি বলেন, দল করলে দলের নিয়ম মেনেই করা উচিত৷ দায়িত্বশীল পদে থেকে সবারই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত৷ দায়িত্বে থেকে দল কিংবা ধর্ম নিয়ে ক্ষতিকর এমন কোন মন্তব্য কিংবা আচরণ করা কারোর জন্য উচিত নয়৷