দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০সেপ্টেম্বর: আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে তিরস্কারের একদিন পর তারই প্রশংসা করলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী৷
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার উপ পরিষদের বিশেষ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি৷ বৈঠকে সংসদ উপনেতা সেয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন৷ এসময় দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল, সুজিত্ রায় নন্দি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন,প্রচার ও প্রকাশনা সেলে হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল খুব ভালো কাজ করছে৷ তারা আমাকে তাদের প্রোগ্রামে ডেকেছে এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই৷ আমি আশা করিনি এখানো আপনাদের (সাংবাদিকদের) এতজনকে পাবো৷
এর আগে গত রোববার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এক সভায় হাছান মাহমুদকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ বেয়াদব বলে অভিহিত করে তার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন সাজেদা চৌধুরী৷ সেদিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের পশ্চিম দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী৷ অপরদিকে পূর্বপাশে মোটরচালক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন ড. হাছান মাহমুদ৷ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে এই দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল৷
এসময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ড. হাছান মাহমুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ওর মতো বেয়াদব আমি আর দেখি নাই৷ সে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ বেয়াদব৷ এসময় হাছান মাহমুদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সংসদ উপনেতা৷ তিনি হাছান মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, উনি কে? কী ছিলেন? মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? আমি জানি৷ কিভাবে উনি নেতা হয়েছেন তাও জানি৷ এই ধরনের আস্ফোলন আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে দেখিনি উল্লেখ করে সাজেদা আরো বলেছিলেন, এখন নতুন নতুন নেতা জন্মে বেয়াদবি শুরু করেছে৷
গত রোববার নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল কমিটির এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি হজ ও তাবলীগ বিশ্বাস করি না, জয় দলের কেউ না’৷ মন্ত্রীর এসব মন্ত ব্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মুখ ফোঁড় লোকদের কথার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই৷ তাই তাদের কথা গ্রহণ না করতে জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন ৷সাজেদা চৌধুরী বলেন, যারা বিদেশে বসে এমন মন্তব্য করেন তারা মুখফোঁড়৷ অনেকেরই মুখফোঁড় আছে৷ তারা অনেক সময় অনেক কথা বলেন৷ এটা তাদের স্বাধীনতা৷ এ সময় সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীকে এসব কথা গ্রহণ না করার আহ্বান জানান সাজেদা চৌধুরী
সমপ্রতি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নেতাদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে সংসদ উপনেতা বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় অনেকে মিথ্যা ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ এটা সম্ভব নয়৷ কারণ ইতিহাস ইতিহাসই৷ যারা ইতিহাস বিকৃত করতে যাবেন, আল্লাহর কাছেও তারা মুক্তি পাবেন না৷সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তুষ্ট হয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি আপনাদের এখনও আগ্রহের ভাটা পড়েনি, আপনাদের উপস্থিতিই এটা প্রমাণ করে৷ আমি জানতাম না আপনারা আসবেন৷আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত বা নিঃশেষ হবে না৷ নদীর স্রোতের মত বহমান থাকবে বলেন সাজেদা চৌধুরী৷
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগকে নিমর্ূল করার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তা সফল হয়নি৷ তিনি বলেন, বাঙ্গালী জাতি যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ততদিন থাকবে৷ কেননা তিনি অমর৷
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর প্রতিবিপ্লবী শক্তি নানা ভাবে দেশের ইতিহাস বিকৃতি করার চেষ্ঠা করেছিল৷তিনি বলেন, তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মিথ্যা ইতিহাস রচনার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ এখনও তারা তাদের সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে৷ তবে অতীতের মতো এখনও তারা সফল হতে পারবে না৷ তিনি বলেন, এ দেশে আওয়ামী লীগ কখনও বিলুপ্ত হবে না৷ কারণ আওয়ামী লীগ হলো সাগরের ঢেউয়ের মতো ৷ একটি ঢেউ যাবে৷ আবার আরেকটি নতুন ঢেউ আসবে৷ তাই যারা এ দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত তারা ভাগ্যবান৷সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব৷