দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে স্বল্প ভাড়ার নিম্নশ্রেণির আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। হরহামেশা এসব হোটেলে অভিযানও চলে। আটক করা হয় খদ্দের, পতিতা। কিন্তু নগরীর নামীদামি অনেক অত্যাধুনিক আবাসিক হোটেলেও এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ, দেহব্যবসা ও কলগার্ল বাণিজ্য চলার চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) নতুন যোগদান করা সিএমপির কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডলের নির্দেশে শনিবার চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ১১৮ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনই খদ্দের ও কলগার্ল। মহানগরীর ১৬টি থানায় একযোগে পরিচালিত এই অভিযান নিয়ে সমগ্র চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয় তোলপাড়।
এদিকে, মহানগরীর জুবিলী রোড এলাকার সবচেয়ে আধুনিক ও অভিজাত হোটেল হিসেবে পরিচিত ‘হোটেল টাওয়ার ইন’-এ পরিচালিত অভিযানে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কলগার্ল ও খদ্দের আটক করা হয়। এই আধুনিক হোটেলে এমন অসামাজিক কার্যকলাপ চলার বিষয়টি খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদেরও হতবাক করেছে।
মহানগরীর কোতোয়ালি থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর নিম্নমান ও কম ভাড়ার অনেক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলার বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। আমরা বিভিন্ন সময়ে এমন অসংখ্য হোটেলে অভিযান চালিয়ে খদ্দের ও পতিতা আটক করি। কিন্তু কিছু কিছু অভিজাত হোটেলেও এ ধরনের কলগার্ল বাণিজ্যের বিষয়টি আমাদেরকেও রীতিমতো অবাক করেছে।’
সিএমপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, সিএমপির নতুন কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডলের নির্দেশে নগরীর প্রতিটি থানায় অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রথম দিনের অভিযানে থানা এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে তল্লাশি চালানো হয়। এর মধ্যে জুবিলী রোডের অভিজাত ও আধুনিক হোটেল টাওয়ার ইন এবং স্টেশন রোডের গেস্ট ইন ও হোটেল মার্টিন থেকে ৫৩ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়।
এ ছাড়া নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে ১৬ জন, পাহাড়তলী থেকে ৭ জন, হালিশহর থেকে ১২ জন, ডবলমুরিং থেকে ৮ জন, চান্দগাঁও থেকে ১২ জন এবং সদরঘাট থেকে ১২ জনসহ মোট ১১৮ জনকে আটক করা হয়। তবে নগরীর দেহব্যবসার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খুলশী এলাকা থেকে কাউকেই আটক করা যায়নি। এ ছাড়া সিএমপির পাঁচলাইশ, চকবাজার, বন্দর, ইপিজেড, বাকলিয়া, কর্ণফুলী ও বায়েজিদ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা।
অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে নগরীর যেসব হোটেলে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলো হলো : আকবর শাহ এলাকার হোটেল স্টারমার্ক, গ্রিনওয়ে, সুপার প্রিন্স ১ ও ২, সুপার ইন ১ ও ২, লেকসিটি ও হাইওয়ে। সদরঘাট এলাকার সিলমুন, কোতোয়ালি থানা এলাকার টাওয়ার ইন, গেস্ট ইন ও মার্টিন এবং চান্দগাঁও থানা এলাকার ওয়েল প্লেস ও হোটেল নাদিয়া। এসব হোটেল থেকে আটককৃতদের মধ্যে ৪৮ জন নারী এবং ৮৮ জন পুরুষ।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাছান চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬ থানায় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পুরো বন্দরনগরী থেকে সব ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড, মাদকদ্রব্য সেবন, পাচার ও বিক্রিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে।