দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৪ সেপ্টেম্বর: টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নতুন করে ধরলা,তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে কুড়িগ্রাম ও নেত্রকোনাসহ বেশ কয়েকটি জেলা ৷ এতে বেশ কয়েক জায়গায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন৷ পানীয় জল ও খাদ্যের সংকট দেখা দেয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ৷আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নেত্রকোনায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বারহাট্টা উপজেলা ওনেত্রকোনার ২টি ইউনিয়ন৷ পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া বেড়ি বাঁধ ভেঙে ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ৷এছাড়াও ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ৷
নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পানিও বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ তাই পানিরতোড়ে নেত্রকোনার বাহাদুরকান্দা সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে নেত্রকোনা-কমলাকান্দা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড পক্ষ থেকে জানা গেছে, সোমেশ্বরী ও কংস নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷এদিকে, কুড়িগ্রামেও অব্যাহত রয়েছে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি৷ নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জেলার উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম৷ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ৷তলিয়ে গেছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর রোপা আমনের ক্ষেত৷
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার, নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টের ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ আগামী ৭২ ঘন্টায় সকল প্রধান প্রধান নদ-নদী এবং ঢাকা শহর সংলগ্ন নদ ও নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে৷আগামী ৪৮ ঘন্টায় সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে ৷বুধবার সকাল ৬ টার তথ্য অনুযায়ী নদ ও নদীর ৭ টি স্টেশনে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়৷পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৪টি পানি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ৬১টি স্থানে পানি বৃদ্ধি ও ১৯টি স্থানে পানি হ্রাস পেয়েছে৷ তিনটি স্থানের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে এবং একটি স্থানের তথ্য পাওয়া যায়নি৷ এছাড়া ৭টি স্থানের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷
সকাল ৯টা থেকে পরবতর্ী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে৷
সেই সাথে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে৷এছাড়া ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে৷ এছাড়া দেশের অন্যত্র তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে৷পরবতর্ী ৭২ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থা (৩ দিন) বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস পেতে পারে৷আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে মৌসুমী বায়ুর অৰ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে৷ এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে৷ মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামোটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে৷
বরিশাল: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা নদীতে বজ্রপাতে খেয়ামাঝি সরোয়ার দাড়িয়া ((৩৫) নিঁখোজ রয়েছেন৷ এসময় আহত হয়েছেন নৌকার যাত্রী লোকমান বালী (৫০)৷ বুধবার বিকেল ৩টায় এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে৷ নিখোঁজ সরোয়ার উপজেলার দক্ষিণ সাতলা গ্রামের নূরু দাড়িয়ার ছেলে৷ আহত লোকমান বালীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি করা হয়েছে৷উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, খেয়ামাঝি সরোয়ার দাড়িয়া সাতলা নদীতে নৌকায় লোক পারাপার করছিলেন৷ নৌকাটি নদীর মাঝপথে গেলে বজ্রপাত হয়৷ এসময় সরোয়ার আহত হয়ে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যান৷ এরপর থেকে স্থানীয়রা খোঁজ করেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি৷ ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি৷
কুড়িগ্রাম: টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ প্লাবিত হয়েছে আরো নতুন নতুন এলাকা৷গত ২৪ ঘন্টায় আরো ১৫ চরগ্রাম পস্নাবিত হয়েছে৷ পানিবন্দী রয়েছে ৭০ হাজার মানুষ৷ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে৷ অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে৷পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীতে ৪, ব্রহ্ম্#৮২০৭;পুত্রে ১০ ও দুধকুমারে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে৷ ফলে এ দুটি নদীর অববাহিকার আরো ১০টিসহ মোট ৭০টি চরগ্রাম পস্নাবিত হয়েছে৷ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অনত্মতঃ ২০ হাজার মানুষ৷সদর উপজেলার পাঁছগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির হোসেন জানান, নতুন করে এই ইউনিয়নে ১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে৷
অপরদিকে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে কালো, ধরনি ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে৷ ফলে এ দুটি উপজেলার ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হান্নান জানান, রৌমারী উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে পানিবন্দী রয়েছে ৫০ হাজার মানুষ৷ আর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ৷ উপজেলার ৯০ ভাগ আমন ক্ষেত এখন পানির নিচে৷ ১০টি পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে৷ কালভার্ট বিধবসত্ম হয়েছে ৩টি৷ ১৭টি কাঁচা রাসত্মার উপর দিয়ে পানি বইছে৷তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বুধবার উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে৷
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) ঃ গত কয়েকদিনের টানাবর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে৷ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে দূগর্ারাম আবাসন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দুই শতাধিক ঘর-বাড়ী৷ বন্যার পানিতে অর্ধকোটি টাকার সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে৷ এছাড়া আমন ফসল সহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে৷ ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকা খিতাব খাঁ, রামহরি, পাড়া মৌলা, বিদ্যানন্দ, সোমনারায়ন, নাওথোয়া, চাকিরপশার, হাঁড়িডাঙ্গা, দূর্গারাম আবাসন, হরিশ্বর তালুক, সিংহীমারী ঘুরে দেখা গেছে, আমন ফসলসহ উঠতি ফসল শাকসবজী পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷ এছাড়া দূগর্ারাম আবাসন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে বন্যার পানি ঢুকে হাঁটু পানিতে পরিনত হয়েছে৷ ফলে সেখানে কমলমতি শিক্ষাথর্ীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না৷ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অতিকষ্টে বিদ্যালয়ে উপস্থিত রয়েছে৷ বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন সরেজমিন পরিদর্শন করে উধর্্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন৷ এব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার ষষ্টিচরন রায় জানান, বৃষ্টির পানি তেমন ক্ষতি করতে পারবে না, যদি বাইরের পানি এলাকায় ঢুকে না পড়ে৷ উপজেলা শিক্ষা অফিসার পারভীন আক্তার জানান, উপজেলার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তাঘাটগুলো কদমাক্ত হয়ে পড়েছে৷ ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, জনসাধারন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে৷
মুন্সীগঞ্জ: পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরম্নটে নাব্যতা সংঙ্কট দূর হলেও আসন্ন ঈদে পানি হ্রাস পেতে পারে৷তে নব্যতা সংকট বেড়ে গিয়ে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে এবং তা ঘরমুখো মানুষের ভোগানত্মি কারণ হতে পারে৷আমাবস্যার প্রভাব ও উজানের ঢলের কারণে বর্তমানে পদ্মার পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে অমাবস্যার প্রভাব কেটে গিয়ে পদ্মার পানি হ্রাস পেতে থাকবে৷ সেক্ষেত্রে ঈদের আগে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কটে ফেরি চলাচলে মারাত্মক অচলবস্থার সৃষ্টি হতে পারে৷বিআইডবি্লউসিটির মেরিন অফিসার মো. শাহজাহান জানান, বন্যা পরবর্তী সময়ে পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি হ্রাসের কারণে ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়৷ এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার মাওয়া কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল হুমকির মুখে পড়ে৷ তবে ড্রেজিং অব্যাহত থাকলে হয়তো সমস্যায় পড়তে হবে না৷ ইতোমধ্যে এক ধাপ ড্রেজিং করে ডুবো চর এলাকার একটি অংশ খুলে দেয়া হয়েছে৷
ময়মনসিংহ: টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ৬ ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷ এতে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ৷এছাড়াও তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন খেত৷ জানা যায়, গত পাঁচ দিনের টানা বর্ষণ ও নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড়,ঘোষগাঁও, পুরাকান্দোলিয়া, দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ধোবাউড়া সদরসহ ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি গ্রাম৷
মঙ্গলবার ও বুধবার দিনভর বৃষ্টিতে এসব এলাকাবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে৷ পানিবন্দি এসব মানুষজন স্থানীয় স্কুল কলেজ ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে৷উপজেলা মত্স্য অফিসের তথ্যমতে, বিরামহীন বর্ষণে তিন হাজার পুকুরের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে৷
উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান গাজীউর রহমান জানান, পানিবন্দি প্রায় এক হাজার পরিবারকে উঁচু স্থান ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়ায় বাকিদের স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি৷এদিকে পোড়াকান্দুলীয়া ইউনিয়নের দু’টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪শ’ পরিবারের ধারণক্ষমতা থাকলেও সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় দু’হাজার বন্যার্ত পরিবার৷ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজনু মৃধা জানান, লাগাতার বর্ষণে ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷ বন্যা দুর্গতদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে শুকনো খাবারসহ নানা সহায়তার৷ ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে মোমবাতি, চিড়া, মুড়ি ও গুড় বিতরণ করা হয়েছে৷
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন শাহ জানান, পাহাড়ি ঢলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘোষগাঁও ও দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন৷ বন্যাদুর্গতদের জন্য ১৫ হাজার টাকার জিআর ক্যাশ ও ৫ টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷ ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে৷ যদি দু’তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে যায় তাহলে বেশি ক্ষতি হবে না৷
তিনি জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছেন৷ তারা কৃষকদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন৷
নেত্রকোনা: পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় মঙ্গলবার থেকে স্কুলগুলোতে ক্লাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে৷কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ শ্রেণিকক্ষ ও অফিস রুমে পানি ঢুকে পড়েছে৷ ফলে মঙ্গলবার থেকে সব বিদ্যালয়ে ক্লাস গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়৷ বন্যার কারণে স্কুলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আসবাবপত্র বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
তিনি আরো জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হলে শনিবার থেকে ক্লাস নেওয়া শুরু করা যেতে পারে৷এদিকে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ পানিতে একাকার হয়ে গেছে সব এলাকা৷ ডুবে গেছে কলমাকান্দা বাজার, নাজিরপুর বাজারসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম৷উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, উদ্বাখালি ও সুমশ্বেরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রতি মুহুর্তেই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে৷ এর মধ্যে তলিয়ে গেছে ১৯ হাজার ৭২৬ হেক্টর আবাদি আমন জমি৷
ফেনী ঃ দু’দিনের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷
এলাকাবাসী জানায়, ভারী বর্ষণে অতিরিক্ত পানির চাপে গত মঙ্গলবার রাতে ফুলগাজীর বরইয়ায় মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়৷ এতে বরইয়া, দৌলতপুর, বসন্তপুর, বাসুদা, বিজয়পুর ও ফুলগাজী বাজার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে৷ বন্যায় প্রায় ১২ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ফুলগাজী বাজার, থানা, ফুলগাজী পাইলট হাইস্কুল, মহিলা কলেজ ও ফুলগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে৷ এছাড়া বরইয়া, দৌলতপুর, বসন্তপুর, বাসুদা, বিজয়পুর গ্রামের রাস্তা-ঘাট, জমির ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ৷ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, ২ দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার পয়েন্ট ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ ফলে পানি চাপের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেছে৷ পানি কমতে শুরু করলেই ভেঙে যাওয়া বাঁধ পুননির্মাণের কাজ শুরু হবে৷
কলাপাড়া ;বুধবার দুপুরে টর্নেডোর আঘাতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার পশ্চিম কুয়াকাটা গ্রামের ১০টি বসত ঘর ও একটি মাছ ধরা ট্রলার বিধ্বসত্ম হয়েছে৷ সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসা আকস্মিক টর্ণেডোর ছোবলে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় বসতঘর ও ট্রলারটি৷ কৃষক জালাল শরীফ, জাহাঙ্গীর মীর, আমীর হোসেন জানান, তাদের ঘরসহ কমপৰে ১০টি বসত ঘর বিধ্বসত্ম হয় ৷ এ ছাড়া পশ্চিম কুয়াকাটা সৈকতে নোঙ্গর করে থাকা আব্দুস সালাম হাওলাদারের একটি মাছধরা ট্রলার সম্পূর্ণ বিধ্বসত্ম হয়ে গেছে৷ কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, টর্নেডো বিধ্বস্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির খবর নিচ্ছেন৷
বগুড়া: যমুনায় পানি বৃদ্ধি আর দফায় দফায় নদী ভাঙ্গনে বগুড়ার ধুনট উপজেলার মানুষ জীবন জীবিকা নিয়ে প্রায় দিশেহারা৷ শুধুমাত্র তোলা সহযোগিতায় দৈনন্দিক স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহ করা যায় না৷ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও নতুন করে ভাবতেই হয় আগামী দিনের বেঁচে থাকা নিয়ে৷ ঘাস বিক্রি করেই যাদের জীবিকা নির্বাহ হয়৷ সমপ্রতি বন্যায় আবারও দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনা পাড়ের হতদরিদ্র এক হাজার ঘাসি পরিবার৷ চরম দুর্দিন চলছে তাদের সংসারে৷
উপজেলার পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বহমান রাক্ষুসি যমুনা নদী৷ সেই যে কবে থেকে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, চলছে বছরের পর বছর ধরে৷ দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় যমুনার বিশাল চরের পতিত জমি তলিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গজানো ঘাস পঁচে গেছে৷ ফলে ঘাস সংগ্রহ করতে না পেরে তারা এখন বেকার হয়ে দিন গুণছে৷ সংসারের উপার্জনের একমাত্র পথ বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা৷সরেজমিন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বানিয়াজান, কৈয়াগাড়ী ও কালিবাড়ী ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে৷
যমুনার ভাঙ্গনে দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলো ঘাস কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে৷ তাদের সংসারের উপার্জনের একমাত্র পথ এই ঘাস৷ স্থানীয়ভাবে এরাই ঘাসি নামে পরিচিত৷
ভুক্তভোগী ঘাসি পরিবারের কৃষকরা জানান, অব্যাহত ভাঙ্গণে রাক্ষুসী যমুনা প্রতিদিনই গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা, বিলীন হয়েছে জনপদ, কমে গেছে আবাদী জমি, নিঃস্ব হয়েছে বহু গৃর্হস্থ্য পরিবার৷ একসময় যারা দুই চারজন মানুষ রেখে কাজ করাতো নিজের বাড়িতে, নিয়তির নির্মম পরিহাসে তারাই এখন কাজের জন্য মানুষের সহযোগিতা চাইছে৷ যে কারণে বদলে গেছে এসব এলাকার জীবন জীবিকার ধরণ৷
বার বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এই জনপদের মানুষগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধসহ বিভিন্ন যায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন৷ এক সময় যাদের ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, বিস্তৃত জমি৷ সব হারিয়ে তারাই আজ নিঃস্ব৷ দুই দশক আগেও বিলীন হওয়া জমিগুলো যমুনার পূর্ব পাশে জেগে ওঠছে৷ প্রতিবছর বন্যায় এই বিশাল চর জেগে উঠলেও এখনও কোন ফসল চাষ করার উপযোগী হয়নি সেগুলোতে৷ তবে চরের সেসব পতিত জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো সেই ঘাস দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে এ অঞ্চলের প্রায় এক হাজার পরিবার৷সংশ্লিষ্ট ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হযরত আলী জানান, জীবানুমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা চরের ঘাস গরু মহিষের জন্য উত্কৃষ্ট মানের খাবার৷ পরিবারের পুরুষেরা সকালে চরে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত ঘাস কেটে বাড়ি ফিরে আসেন৷ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে প্রতিদিন ঘাস বিক্রির হাটে বসে৷ এলাকার গরু মহিষ পালনকারীরা ঘাসিদের কাছ থেকে ঘাস কিনে নেন৷
সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আইলা উপদ্রুত গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় বাধ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী৷
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটি এবং সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সহযোগিতায় স্থানীয় চকবারা মানবকল্যাণ কৃষক সংগঠন, দাঁতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন, একতা যুব সংঘ এবং সংগ্রামী যুব ফাউন্ডেশন সম্মিলিতভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে৷মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সভাপতি মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় বাধ রক্ষার দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবিউল ইসলাম, চকবারা কৃষক সংগঠনের সভাপতি আবু মূছা, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম, সাজিদা বেগম, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফ হোসেন, পরিবেশ বন্ধু জাকির হোসেন, উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও চ্যানেল আই কৃষিপদক প্রাপ্ত কৃষক শেখ সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আকবর কবীর, স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান প্রমুখ৷
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সর্বাধিক দুর্যোগ ঝঁূকিপূর্ণ উপজেলা শ্যামনগর৷ ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস আইলায় উপকূলীয় বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন লবণ পানিতে প্লাবিত হয়৷ হাজার হাজার মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়৷ আইলার দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হলেও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি, পশ্চিমপাতাখালী, খুটিকাটা ও চাউলখোলা, গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুুনিয়া, পাশ্বর্েমারি, জেলেখালী, গাগড়ামারী ও নাপিতখালী এবং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দূর্গাবাটী, নীলডুমুর ও কলবাড়ী স্থানের উপকূলীয় বাঁধ এখনো মারাত্মক ৰতিগ্রসত্ম ও ঝূকিপূর্ণ৷ এতে গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মানুষেরা এখনো প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে৷
বক্তারা আরো বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এই তিনটি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করা না হলেও আবারও আইলার মত পরিণতি হতে পারে৷ একাধিক বার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ পরিদর্শন করলেও কার্যকরি কোন পদৰেপ গ্রহণ করা হয়নি৷ মানববন্ধন থেকে অতিদ্রুত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ঝঁূকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করে উপকূলীয় জানমাল রক্ষার দাবি জানানো হয়৷
শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ-উত্কন্ঠার মধ্য দিয়ে ক্লাস করছে৷ নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় প্রতিদিনই কমছে এসব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা৷ তাই বিদ্যালয়গুলো দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার দাবি শিক্ষক-অভিভাবকদের৷বন্যা-নদী ভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছরই শরীয়তপুরের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে৷এ বছর নদী ভাঙনের হুমকির মুখে জেলার কমপক্ষে ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ আশপাশে আর কোনো বিদ্যালয় না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছাত্র-ছাত্রীরা৷
শরীয়তপুর গোসাইরহাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বলেন, ভাঙন কবলিত ২টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বিকল্প স্থানে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷আর শরীয়তপুর চর নড়িয়া সরকারি প্রা.বি এর প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তার বলেন, অস্থায়ীভাবে অন্য জায়গায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের৷এদিকে, শিগগিরই কোনো ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষক ও অভিভাবকদের৷